ব্যাটিং স্বর্গে দারুণ শুরুর পর দিক হারানো বাংলাদেশ কোনোমতে পার হয় আড়াইশ। এই রান নিয়ে খুব একটা লড়াই করতে পারেননি বোলাররা। বিরাট কোহলির ৪৮তম সেঞ্চুরিতে অনায়াস জয় পায় ভারত। একপেশে লড়াইয়ে ৭ উইকেটে জিতেছে ভারত। বাংলাদেশের ২৫৬ রান পেরিয়ে গেছে ৫১ বল বাকি থাকতে। এ নিয়ে টানা তিন হার। তাতেই ধূসর হয়ে আসছে বাংলাদেশের বিশ^কাপের রঙিন স্বপ্ন। ফাইনালতো দূরের কথা সেমিফাইনালের রেসে থাকাও এখন কঠিন। এখনো পাঁচ ম্যাচ বাকি থাকলেও দলের যে পরিস্থিতি তাতে বড় কিছু আশা করাই দায়। এ অবস্থার মধ্যেই আগামী ২৪শে অক্টোবর মুম্বইতে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের টানা হারে প্রশ্ন উঠেছে আসলে ভুলটা কোথায়? মাঠের বাইরে বিতর্ক নাকি দলের ভেতরে কোন্দলের প্রভাব বাংলাদেশের খেলাতে? পুনের মাহরাষ্ট্র ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উইকেট ব্যাটসম্যানদের স্বর্গ।
সেখানে টসে জেতা মানে যেন সোনায় সোহাগা। তাইতো অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের ইনজুরিতে দলের নেতৃত্ব দিতে আসা নাজমুল হোসেন শান্ত টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেননি। দুই ওপেনারও এনে দিয়েছিলেন দারুণ শুরু। এরা দু’জন স্কোর বোর্ডে ৯৩ জমা করেন। এরপর নাজমুল হোসেন শান্ত দ্রুত আউট হয়েছেন। তারপরও দলের ভিত শক্তই ছিল। এখানে তাহলে মেহেদি হাসান মিরাজকে কেন নামানো হলো চারে! ১৩ বল খেলে ৩ রানে আউট হয়েছেন মিরাজ। উইকেটের পেছনে লোকেশ রাহুল দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়েছেন বটে। তবে মিরাজের শটও ছিল বাজে। দলের ইনিংসের পথ হারানো শুরু ওই সময়টা থেকেই। এরপর ক্রিজে গিয়ে তাওহিদ হৃদয় দলকে আরও পিছিয়ে দিয়েছেন। তার ৩৫ বলে ১৬ রানের ইনিংসটি ছিলো দৃষ্টিকটু। এই ব্যাটিং স্বর্গে এমন বাজে ইনিংসের জন্য হৃদয়কে অবশ্যই কাঠগড়ায় তোলা যায়। এমন ব্যাটিংয়ের পক্ষে কোনো যুক্তিই দাঁড় করানো কঠিন। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দুর্দান্ত শুরু করা হৃদয় যে হঠাৎ ব্যাটিং ভুলে গেলেন, তাতে কি ব্যাটিং অর্ডার ওলট-পালটের দায় নেই? মিডল অর্ডারে যিনি দারুণ খেলছিলেন, হুট করেই বিশ্বকাপে তাকে নামিয়ে দেওয়া হলো সাতে। কাল ভারতের বিপক্ষে পাঁচে ফিরেও তাকে মনে হয়েছে অচেনা। তিন নম্বরে এই বছরে দারুণ সফল নাজমুল হোসেন শান্ত বিশ্বকাপে তিন নম্বর আর চার নম্বরে আসা-যাওয়ার পালায় রান করতে পারলেন না টানা তিন ইনিংসে। মিরাজকে নিয়ে যা হচ্ছে তারও কোন যুক্তি মিলছে না। তিনে, চারে, পাঁচে খেলতে গিয়ে আত্মবিশ^াস হারাচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত ব্যাটিংয়ে ভরসা হয়ে দাড়িয়েছিলেন অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহীম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দুজন চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বড় কিছু হয়নি। মুশফিক ৩৮ রানে পয়েন্টে জাদেজার উড়ন্ত ক্যাচে পরিণত হন। এই ইনিংস খেলার পথে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বকাপে হাজার রানের মাইলফলক ছাড়িয়ে যান। আর মাহমুদউল্লাহ টানা দুই ম্যাচে লোয়ার অর্ডারে অবদান রেখে ফেরেন ৪৬ রানে। বুমরাহর আনপ্লেয়েবল ডেলিভারিতে বোল্ড হওয়ার আগে ৩৬ বলে ৩টি করে চার ও ছক্কায় সাজান ইনিংসটি। এদের কল্যাণে শেষ পর্যন্ত ২৫৬ রান করে বাংলাদেশ।
গতকাল ব্যাটিং অর্ডারের সঙ্গে বোলিংয়ের রণ কৌশলেও ছিলো ভুল পরিকল্পনা। ব্যাটিং উইকেটে সাকিবের পরিবর্তে একাদশে সুযোগ পেয়েছেন বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ আর তাসকিন আহমেদের বদলি পেসার হাসান মাহমুদ। ভারতের বিরুদ্ধে কোন প্রতিরোধই গড়াতে পারেনি তারা। পুনের উইকেট বিবেচনায় ২৫৭ রানের লক্ষ্য খুব বড় নয়। সেটা আরো মামুলি হয়ে যায় ভারতের দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শুভমান গিলের ব্যাটে। উদ্বোধনী জুটিতে ১৩ ওভার ৪ বলে দুজন যোগ করেন ৮৮ রান। রোহিত ৪৮ রানে আউট হলে ভাঙে এই জুটি। ৪০ বলের ইনিংসে ৭টি চার ও ২টি ছয় মারেন ভারত অধিনায়ক। রোহিত না পারলেও অর্ধশতক তুলে নেন গিল। মেহেদী হাসান মিরাজের বলে আউট হন ৫৫ রান করে। ৫টি চার ও ২টি ছয় মারেন তিনি। দুই ওপেনার আউট হলেও বেগ পেতে হয়নি ভারতকে। শ্রেয়াস আইয়ারের সঙ্গে ৪৬ ও লোকেশ রাহুলের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য ৭৮ রানের জুটিতে ভারতকে ৭ উইকেটে জেতান কোহলি, নিজেও করেন সেঞ্চুরি। ওয়ানডে এটি তার ৪৮তম শতক। ৯৭ বলে ১০৩ রানের ইনিংসে ৬টি চার ও ৪টি ছয় মারেন কোহলি। রাহুল অপরাজিত থাকেন ৩৪ রানে। এটি এবারের বিশ্বকাপে ভারতের টানা চতুর্থ জয়।
আরো পড়ুন : একযোগে দেড়শ’ সেতু এবং ১৪টি ওভারপাস উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী