গাজাসহ ফিলিস্তিনে ইসরাইলি যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তদন্তের জন্য বাংলাদেশ, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ ৫টি দেশ আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি)। এ আদালতের প্রধান প্রসিকিউটর করিম খান শুক্রবার এ খবর জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ভিতরকার পরিস্থিতি তদন্তের জন্য আইসিসির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ, দক্ষিণ আফ্রিকা, বলিভিয়া, কমোরোস এবং জিবুতি। এ দেশগুলোর প্রতিটিই আইসিসির সদস্য। বার্তা সংস্থা এএফপিকে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে অনলাইন টিআরটি ওয়ার্ল্ড।
শুক্রবার করিম খান এক বিবৃতিতে বলেছেন, অবরুদ্ধ গাজা এবং দখলীকৃত পশ্চিমতীরে ২০২১ সালের মার্চ থেকেই তদন্ত চলছে। তা এখন বিস্তৃত হয়েছে এ বছর ৭ই অক্টোবর রকেট হামলার পর ক্রমবর্ধমান শত্রুতা এবং সহিংসতা পর্যন্ত। তিনি সম্প্রতি মিশর এবং অবরুদ্ধ গাজার মধ্যবর্তী প্রধান ক্রসিং পয়েন্ট রাফায় গিয়েছিলেন। এরপর করিম খান বলেছেন, সেখানে তার টিম এ যুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ঘটনাগুলোর বিপুল পরিমাণ তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করেছে। তিনি আরও তথ্যপ্রমাণ জমা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, জীবিতদের কথা শুনতে, নাগরিক সমাজের সংগঠনগুলোর কথা শুনতে এবং সংশ্লিষ্ট জাতীয় প্রতিপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে অব্যাহতভাবে আমি ফিলিস্তিন এবং ইসরাইল সফর করবো।
আমার অফিস থেকে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা দেব, যদিও আইসিসির কোনো সদস্য নয় ইসরাইল।
ওদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই তদন্তের দাবি জানাতে তাদের সঙ্গে সহযোগী আইসিসি সদস্যদের যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও গণহত্যায় দায়মুক্তি বন্ধে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তারা আশা করে ভয়াবহ অপরাধের শিকার ব্যক্তিদের ন্যায়বিচার দেয়ার ক্ষেত্রে ফিলিস্তিন পরিস্থিতিকে অগ্রাধিকার দেবে আইসিসি।
অন্যদিকে গাজায় যেসব ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারের আইনজীবীরা যেমন আইসিসির পদক্ষেপ আহ্বান করেছেন, তেমনি ইসরাইলের যেসব ব্যক্তিকে জিম্মি করা হয়েছে তাদের পরিবারগুলোও হামাস নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে করিম খানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। ইসরাইলি এমন ৯টি পরিবারের প্রতিনিধিত্ব করছেন আইনজীবী ফ্রাঁসোয়া জিমেরে। তিনি বলেছেন, তদন্ত এগিয়ে চলছে। যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার জন্য যেসব পরিবার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দাবি করছেন তাদের পক্ষে তিনি একটি কূটনৈতিক বার্তা জমা দিয়েছেন।
যেকোনো ব্যক্তি বা গ্রুপ আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আইসিসিকে অনুরোধ করতে পারেন। কিন্তু তা সব সময় আমলে নিতে বাধ্য নয় আইসিসি। আইসিসির কোনো সদস্য ইসরাইল না হওয়া সত্ত্বেও জিমেরে বলেন, ইসরাইলিরা এই আদালতের ওপর, প্রসিকিউটর ও পেশাদারদের ওপর আস্থা রাখে।
উল্লেখ্য, সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রে সদস্য নয় এমন দেশের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে পারে আইসিসি। যদি সদস্য রাষ্ট্রের ভিতরে কোনো অপরাধ সংঘটিত হয়, তখনও তা তদন্ত করতে পারে। ২০১৫ সাল থেকে এর সদস্য ফিলিস্তিন। ২৮শে অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরাইল নৃশংসভাবে গাজায় কমপক্ষে ১২,৫০০ মানুষকে হত্যা করেছে। এর মধ্যে ৫০০০ শিশু এবং ৩৩০০ নারী। অন্যদিকে ইসরাইলে নিহতের সংখ্যা ১২০০।
আরো পড়ুন : স্বেচ্ছা কারাবরণের আসছেন চার্টার্ড ফ্লাইটে আসছেন আমেরিকান বাংলাদেশিরা