ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার একটি হাসপাতালে ইসরাইলি বাহিনীর ভয়াবহ বিমান হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠক বাতিল করেছেন ফিলিস্তিন, জর্ডান ও মিসরের শীর্ষ নেতারা। ইসরাইল সফর শেষে বুধবার জর্ডানের রাজধানী আম্মানে বাইডেনের যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর আগেই মধ্যপ্রাচ্যের নেতারা তাকে বয়কট করেন। খবর আলজাজিরা, বিবিসি, রয়টার্স ও এএফপি।
মঙ্গলবার রাতে গাজা উপত্যকার আল-আহলি হাসপাতালে বোমা হামলার পর বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বাতিল করে দেন। বৈঠকে হামাস ও ইসরাইলের মধ্যকার যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা করার কথা ছিল। একই দিন বাইডেনের সঙ্গে জর্ডানের রাজা আবদুল্লাহ এবং মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসিরও বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। ফিলিস্তিনির দুই কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, গাজার হাসপাতালে ইসরাইল গণহত্যা চালানোর পর প্রেসিডেন্ট আব্বাস খুবই ক্ষুব্ধ হয়েছেন। জর্ডান থেকে তিনি তাৎক্ষণিক রামাল্লায় ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি জানান, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি বাহিনীর ভয়াবহ হামলার পরিপ্রেক্ষিতে বাইডেনের সঙ্গে রাজা আবদুল্লাহের বৈঠক বয়কট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, যুদ্ধ বন্ধ করা ছাড়া এখন আর আলোচনা করে কোনো লাভ নেই। জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ বলেছেন, এ পরিস্থিতিতে কেউ চুপ থাকতে পারে না। এভাবে সাধারণ মানুষকে হত্যা ‘মানবতার জন্য লজ্জাজনক’।
এদিকে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জর্ডান সফর স্থগিতের বিষয়টি নিশ্চিত করে হোয়াইট হাউজ জানায়, ইসরাইলে কিছু সময় প্রেসিডেন্ট অবস্থান করবেন। ইসরাইল-হামাসের সংঘাতের মধ্যেই ইসরাইলের প্রতি সংহতি জানাতে বুধবার তেল আবিব যান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। পৌঁছানোর কয়েক মিনিটের মধ্যেই তিনি গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন। এ সময় পাশে ছিলেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। গাজায় হাসপাতালে হামলা চালানোর জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন ফিলিস্তিনি ‘সন্ত্রাসীদের’ দায়ী করেন। তিনি বলেন, হামাস ‘শুধু দুর্ভোগই’ নিয়ে এসেছে।
বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকে বাইডেন বলেন, হাসপাতালে বিস্ফোরণের ঘটনায় আমি খুবই মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ এবং আমি যা দেখেছি, তাতে আমার মনে হয়েছে, এটি আপনারা (ইসরাইল) নয়, অন্য কোনো পক্ষ করেছে। বাইডেন বলেন, কিন্তু বাইরের অনেক মানুষই নিশ্চিত নন কে এ হামলা চালিয়েছে। তাই এ নিয়ে আমাদের অনেক কিছু করতে হবে। বাইডেনের সফর নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, গাজায় সাহায্য পাঠানোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করতে ইসরাইল সম্মত হয়েছে।
গাজার হাসপাতালে হামলায় নিন্দা
মঙ্গলবার রাতে মধ্য গাজার আল-আহলি আরব নামের হাসপাতালে সতর্কবার্তা ছাড়াই ইসরাইলি বাহিনী হামলা চালায়। এতে পাঁচ শতাধিক মানুষ নিহত হন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে গোটা বিশ্ব। বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় বইছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান বলেছেন, ইসরাইল যে ন্যূনতম মানবিক মূল্যবোধেরও তোয়াক্কা করছে না, গাজায় হাসপাতালে হামলা এর সর্বশেষ উদাহরণ। গাজায় ‘নজিরবিহীন নৃশংসতা’ বন্ধে সবার প্রতি তিনি আহ্বান জানান। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরাইলি বাহিনী নির্বিচারে বিমান হামলা চালিয়ে গাজার নিরস্ত্র ও অসহায় মানুষকে হত্যা করছে। জঘন্য এ অপরাধের মাধ্যমে ইহুদি রাষ্ট্রটি আরেকবার বিশ্বের সামনে তাদের অমানবিক ও পাশবিকতাকেই তুলে ধরেছে। হাসপাতালে ইসরাইলি বাহিনীর বোমা হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে কাতার।
গাজার হাসপাতালে হামলায় নিন্দা জানিয়েছে মুসলিম দেশগুলোর সংগঠন আরব লিগ। সংস্থাটির প্রধান আহমেদ ঘেতি বলেছেন, বিশ্বনেতাদের অবিলম্বে এ ‘ট্র্যাজেডি’ বন্ধ করতে হবে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে জরুরি বৈঠকে বসার জন্য অনুরোধ করেছে রাশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। গাজার হাসপাতালে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানোম গেব্রিয়াসুস। অবিলম্বে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
গাজায় হাসপাতালে হামলার ঘটনাকে ‘ভয়ংকর’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্র-ডো। তিনি বলেন, এটা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। এসব ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সম্মান জানানো উচিত। যুদ্ধের কিছু নিয়মনীতি আছে। কোনো হাসপাতালে এভাবে হামলা করার ঘটনা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। হাসপাতালে প্রাণঘাতী হামলার নিন্দা জানিয়েছে ফ্রান্সও।
আরো পড়ুন : শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় শেখ রাসেলের ৬০তম জন্মদিন উদযাপিত