ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় মার্চে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। বেসরকারি সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ৪৮৭ জন। অর্থাৎ গড়ে প্রতিদিন নিহত হয়েছেন ১৭.৩৯ জন। অপরদিকে মার্চে গড়ে প্রতিদিন নিহত হয়েছেন ১৮.১৯ জন। এই হিসাবে মার্চ মাসে প্রাণহানি বেড়েছে ৪.৬০ শতাংশ।
অপরদিকে যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য মতে, ফেব্রুয়ারি মাসে ৪৪৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ৪৬৭ জন। অন্যদিকে মার্চে ৪৮৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৩৮ জন নিহত ও ১,১৩৮ জন আহত হয়েছেন। সংগঠন দুটি মার্চ মাসের সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। দুই প্রতিবেদনে হতাহতের সংখ্যার বেশ পার্থক্য রয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে সংগঠন দুটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন: সংগঠনটি জানিয়েছে, গত মার্চ মাসে দেশে ৪৮৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫৬৪ জন এবং আহত ১০৯৭ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৮৮ জন ও শিশু ৭৩ জন। সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। এক মাসে ১৭৯টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১৯৪ জন; যা মোট নিহতের ৩৪.৩৯ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৬.৮৩ শতাংশ। ওই মাসে ছয়টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৮ জন নিহত এবং ১৯টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত ও ৪ জন আহত হয়েছেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সবচেয়ে বেশি ১৯৭টি দুর্ঘটনা ঘটেছে আঞ্চলিক মহাসড়কে; যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৪০.৫৩ শতাংশ। এছাড়া জাতীয় মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৮৪টি (৩৭.৮৬ শতাংশ) ও গ্রামীণ সড়কে ৫৯টি (১২.১৩ শতাংশ)।
দুর্ঘটনার ধরন হিসাবে বলা হয় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ২৪২টি দুর্ঘটনা ঘটে, যা মোট দুর্ঘটনার প্রায় অর্ধেক। এছাড়া মুখোমুখি সংঘর্ষে ৮৫টি ও পথচারীকে চাপা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে ১০৪টি। দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেলের পরের অবস্থানে রয়েছে ট্রাক, বাস ও কাভার্ডভ্যান।
সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে। এ বিভাগে ১১৯টি দুর্ঘটনায় ১৩৭ জন নিহত হন। সবচেয়ে কম ময়মনসিংহ বিভাগে ৩০টি দুর্ঘটনায় ৩৮ জন নিহত হয়েছেন।
যাত্রী কল্যাণ সমিতি : সংগঠনের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদায়ী মার্চ মাসে ৪৮৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৩৮ জন নিহত ও ১১৩৮ জন আহত হয়েছেন। একই সময়ে রেলপথে ৫৩টি দুর্ঘটনায় ৪৭ জন নিহত ও ১৫ জন আহত হয়েছেন। নৌ-পথে ৯টি দুর্ঘটনায় সাতজন নিহত, ১৪ জন আহত এবং ২ জন নিখোঁজ হয়েছেন। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সর্বমোট ৫৪৯টি দুর্ঘটনায় ৫৯২ জন নিহত এবং ১১৬৭ জন আহত হয়েছেন। এ মাসে ১৫২টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৬৩ জন নিহত, ৯৭ জন আহত হন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৫৭.৪৯ শতাংশ গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ১৫.১৯ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৬.৪২ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ৯.৬৫ শতাংশ অন্যান্য কারণে ঘটেছে। দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণ করে সংগঠনটি বলেছে, মার্চ মাসে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৩৩.০৬ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২৩.২০ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ৩৫.১১ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে।
দুর্ঘটনার জন্য নয়টি কারণ উল্লেখ করেছে সংগঠনটি। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে চালকের অদক্ষতা ও বেপরোয়া মনোভাব নিয়ে গাড়ি চালানো, বেপরোয়া গতি ও বিপজ্জনক ওভারটেকিং; ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন রাস্তায় নামানো; ফিটনেসবিহীন যানবাহনের অবাধে চলাচল ও চালকের কর্মঘণ্টা ও বেতন সুনির্দিষ্ট না থাকা।
আরো পড়ুন : ১ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা বাণিজ্য ঘাটতিতে বাংলাদেশ