বঙ্গবাজারের ধ্বংসস্তূপ সরানোর পর অস্থায়ী দোকান বসাতে পারবেন ক্ষতিগ্রস্তরা!

অর্থনীতি জনদুর্ভোগ জাতীয় প্রচ্ছদ মুক্তমত লাইফ স্টাইল হ্যালোআড্ডা

৪০ লাখ টাকায় সরানো হচ্ছে ধ্বংসস্তূপ, ৭৫ ঘণ্টা পর নিভল আগুন

রাজধানীর বঙ্গবাজার হকার্স মার্কেটের আগুন টানা ৭৫ ঘণ্টা পর অবশেষে পুরোপুরি নিভেছে। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় আগুন নির্বাপণ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। এ ঘোষণার পরই ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যান ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এরপরই সকাল ১০টার দিকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়।

আরো পড়ুন : বঙ্গবাজারে আগুন এখনও অজানাসূত্র

বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অনুমতিক্রমে মেসার্স বুশরা ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে অগ্নিকাণ্ডের ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ দেওয়া হয়েছে। এসব ধ্বংসস্তূপ ৪০ লাখ টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছে মেসার্স ‘বুশরা ট্রেডার্স’। তারা এই ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে নেওয়ার পর সেখানে ব্যবসায়ীদের জন্য অস্থায়ী বসার জায়গা করে দেবেন। গতকাল সকালে বঙ্গবাজারে গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়।

আরো পড়ুন : পোড়া কাপড় ভিজেছে সর্বস্বান্ত হওয়া ব্যবসায়ীদের চোখের জলে

এ বিষয়ে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. নাজমুল হুদা বলেন, ধ্বংসস্তূপ সরানোর পর ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের কাজ শুরু হবে। তবে ঈদের আগে অস্থায়ীভাবে ব্যবসায়ীদের দোকান বসানোর বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। সকল ব্যবসায়ীকে অস্থায়ীভাবে বসার সুযোগ করে দেওয়া সম্ভব হবে কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুড়ে যাওয়া মার্কেটটি দুই তলা, তিন তলা ছিল। এখন খোলা জায়গায় সব ব্যবসায়ীকে তো বসার সুযোগ করে দেওয়া সম্ভব নয়। তার পরও আমরা একটি দোকানে দুজন করে বসার সুযোগ করে দেওয়ার চেষ্টা করব। তিনি আরও বলেন, আসলে এখানে তো ব্যবসায়ীরা অনেক বেশি ব্যবসা করার জন্য বসবে না। ঈদের আগে তারা যদি এখানে একটু বসতে পারে, তাহলে দেনাদার ও পাওনাদারের কিছুটা সহানুভূতি পাবে। পাশাপাশি কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে।

আরো পড়ুন : ১০টি মার্কেটে প্রায় ৫ হাজার দোকান পুড়ে ক্ষতি হয়েছে আনুমানিক ২ হাজার কোটি টাকা

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও মালিকদের তালিকা করার কাজ চলছে। আগামী রবিবার আমাদের ব্যবসায়ীদের বৈঠক আছে। সেখানে আমরা চূড়ান্ত তালিকাটি উপস্থাপন করব।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তালিকা অনুযায়ী ২ হাজার ৯১৬ জন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীর তালিকা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে বেশির ভাগ বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ী। এর বাইরে মহানগর মার্কেট, আদর্শ মার্কেট ও গুলিস্তান মার্কেটের ব্যবসায়ী রয়েছেন।

আরো পড়ুন : বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের উপর বিক্ষুব্ধ জনতা, সদর দপ্তরে হামলা

ব্যবসায়ীদের কান্না থামছে না

‘আমি এখন রাস্তার ফকির, আমার এখন কিছু নাই। আমার সারা জীবনের অর্জন এখানে কাজে লাগাইছি। আর কিছু করি নাই।’ গতকাল দুপুরে ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে এভাবেই বলছিলেন ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী। পুরান ঢাকার জয়কালী মন্দিরের পাশে পরিবার নিয়ে থাকা মোহাম্মদ আলী ঘটনার দিনই বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়ার কথা শুনে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। প্রায় তিন কোটি টাকা মূল্যের গড়ে তোলা সম্পদ নিমিষেই শেষ হয়ে যাওয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। মোহাম্মদ আলী বলেন, তার সাতটি দোকানে ১৫ জন কর্মচারী কাজ করতেন। তারাও আজ অসহায়। মালিকের একটা ব্যবস্থা হলে তারা আবার কাজ শুরু করতে পারবেন।

আরো পড়ুন : নির্বাক হয়ে পুড়ে ছাই হতে দেখেছেন দেনা আর ঋণের টাকার দোকানগুলো

ব্যবসায়ী মাছুম রানা বঙ্গবাজারের ধ্বংসস্তূপ থেকে কিছু একটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছিলেন। কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করতেই জানালেন, দোকানের সব পুড়ে গেছে। কিছুই অবশিষ্ট নেই। দোকানের বাকির খাতাটি খুঁজছেন তিনি, যদি পাওয়া যায়। ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার মালামাল তিনি বাকিতে দিয়েছিলেন। খাতাটি পেলে হয়তো সেই পাওনা টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করতে পারতেন।

আরো পড়ুন: বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিলেন প্রধানমন্ত্রী

ব্যবসায় লগ্নি করা প্রায় কোটি টাকা তৈরি পোশাক পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার পর বঙ্গবাজারের ধ্বংসস্তূপের সামনে এসে কান্না ধরে রাখতে পারেননি ব্যবসায়ী তুষার হোসেন মোল্লা। তিনি বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে এ পর্যন্ত এসেছি ভাই। পুরো সংসারের ভার আমার ওপর। দুই ভাই আমার সঙ্গেই কাজ করত। তিন মাস আগে ছোট বোনকে বিয়ে দিয়েছি। এখন কী করব, কিছুই বুঝতে পারছি না। এর মধ্যে একটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে ৪০ লাখ টাকা ঋণও আছে। সামনে শুধু অন্ধকার দেখছি।’

আরো পড়ুন : বঙ্গবাজার মার্কেটের মালিক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নাকি বাংলাদেশ রেলওয়ে!

বঙ্গবাজারের ধ্বংসস্তূপের পাশে বিলাপ করছিলেন মো. হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, তার বাসা ধানমন্ডিতে। ঘটনার পর আর বাসায় যাননি। হোসেন বলেন, ‘দোকানে প্রায় ১৫ লাখ টাকার মালামাল ছিল। ঈদ উপলক্ষে আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা ধার করে দোকানে মাল তুলেছিলাম। সব পুড়ে গেছে।’

আরো পড়ুন : ১০টি মার্কেটে প্রায় ৫ হাজার দোকান পুড়ে ক্ষতি হয়েছে আনুমানিক ২ হাজার কোটি টাকা

গত মঙ্গলবার ভোরে বঙ্গবাজার মার্কেটে আগুনের সূত্রপাত। বঙ্গবাজার থেকে আশপাশের আরও ছয়টি মার্কেটে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ৪৮টি ইউনিট কাজ করে। প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টার চেষ্টায় দুপুর ১২টা ৩৬ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

আরো পড়ুন : মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন পুলিশ গ্রেফতার করল ২০ বাংলাদেশিসহ ৬৫ জনকে

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *