রাজধানীর বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডে নিঃস্ব হয়ে নতুন করে ব্যবসা শুরু করতে স্ত্রীর স্বর্ণের চেইন ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন মহিউদ্দিন বাবু। এ ছাড়া এক আত্মীয় তাঁকে সহযোগিতা করেছেন ১৫ হাজার টাকা দিয়ে। এই ৫০ হাজার টাকা মূলধন নিয়ে বঙ্গবাজারের ধ্বংসস্তূপের পাশেই রাস্তায় অস্থায়ী দোকান বসিয়ে ক্ষতি পোষানোর সংগ্রামে নেমেছেন বাবু। গতকাল শনিবার বঙ্গবাজারের দক্ষিণ পাশে সড়কের ওপর কাঠের চৌকির অস্থায়ী দোকানে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। বাবু বলেন, ‘আগুনে আমার ২৬ লাখ টাকার মালপত্র পুড়ে ছাই হয়েছে। সামনে ঈদ, খরচপাতি আছে। এ ছাড়া এখন সংসার চালানোর সামর্থ্যও নেই। বাধ্য হয়ে স্ত্রীর চেইন বিক্রি করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। ৫০ হাজার টাকা শোধ করে কেরানীগঞ্জের কারখানা থেকে ২ লাখ টাকার জিন্স প্যান্ট এনেছি। এখনও বকেয়া দেড় লাখ টাকা।’
শুধু মহিউদ্দিন বাবু নন, তাঁর মতো বঙ্গবাজারের এমন কয়েকশ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী শোক ভুলে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রামে অবতীর্ণ। পুড়ে যাওয়া মার্কেটের পাশের রাস্তাই এখন তাঁদের ভরসা। যে যেভাবে পারেন আবার স্বল্প পুঁজি জোগাড় করে রাস্তায় খুলে বসেছেন অস্থায়ী দোকান। এই ব্যবসায়ীরা জানান, তাঁরা পাইকারি ব্যবসায়ী হলেও এখন খুচরা বিক্রি করছেন। সব ধরনের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে তাঁদের কাছে। সব হারিয়ে তাঁরা পথে বসেছেন। ঢাকাবাসী যদি তাঁদের সহযোগিতা করতে চান, তাহলে এবার ঈদে কেনাকাটা যেন সবাই বঙ্গবাজার থেকেই করেন। একই সঙ্গে বঙ্গবাজার থেকে ফুলবাড়িয়া পর্যন্ত সড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ করে তাঁদের ব্যবসার সুযোগ করে দেওয়ার দাবি জানান তাঁরা।
বঙ্গবাজারে ব্যবসায়ীদের দ্বন্দ্বের কারণে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবাজারে বহুতল ভবন নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিরোধ ছিল। এই দ্বন্দ্বের কারণে আগুন লাগে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আগুন লাগার কারণও ফায়ার সার্ভিস তদন্ত করছে। এ ছাড়া ফায়ার সার্ভিসের অফিসে হামলায় ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’ গতকাল বিএফডিসিতে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসে হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার আসামিদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করে বিস্তারিত জানার চেষ্টা চালানো হবে। এখানে অন্য কোনো পরিকল্পনা, ভিন্ন কোনো দৃষ্টিকোণ বা ভিন্ন কোনো গোষ্ঠীর সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা, তা জানার চেষ্ট করা হচ্ছে।’
এদিকে বঙ্গবাজারের পাশে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী নেতারা দাবি করেছেন, আগুনে তাঁদের হাজার কোটি টাকার মালামাল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, বঙ্গবাজারের কয়েক হাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও কর্মচারী নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছেন। তাঁদের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া সবার নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করি। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের আর্থিক সহায়তার জন্য আইএফআইসি ব্যাংকে একটি হিসাব খোলা হয়েছে।
দেশ-বিদেশের কেউ ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহযোগিতা করতে চাইলে ০২০০০৯৪০৬৬০৩১ হিসাব নম্বরে পাঠাতে পারেন। এই টাকা প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের কাছে হস্তান্তর করা হবে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের একটি তালিকা অচিরেই দেওয়া হবে তাঁদের কাছে। তাঁরা ওই টাকা ব্যবসায়ীদের মধ্যে বণ্টন করবেন।
এদিন বঙ্গবাজারের পাশে শাহবাগ থানা পুলিশের অস্থায়ী বুথে ক্ষতিগ্রস্তরা জিডি করেছেন। জিডিতে আনুমানিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও উল্লেখ করেছেন ব্যবসায়ীরা।
আবার আগুন: গতকাল সকালে ফের বঙ্গবাজারের পাশে মালেকা মার্কেটে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ১৪টি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। আগুনে মার্কেটের চারতলায় দুটি গোডাউন পুড়ে গেছে।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সকাল ৮টার দিকে বরিশাল প্লাজা মার্কেটের ভেতর মালেকা মার্কেটে আগুন লেগেছিল। ছয়তলা ভবনের চারতলায় গোডাউনে আগুন লাগে। জায়গাটা খুবই সংকীর্ণ, ফায়ার ফাইটিং করাটা খুব কঠিন ছিল। অবশ্য এক ঘণ্টারও কম সময়ে আগুন নেভানো গেছে। প্রাথমিক ধারণা, আগুন শর্টসার্কিট থেকে হতে পারে। গোডাউনের ভেতরে বৈদ্যুতিক তারের কিছু অসামঞ্জস্যতা রয়েছে। ওখান থেকে শর্টসার্কিট হতে পারে। মার্কেটটির রাজউকের এবং ফায়ার সেফটি লাইসেন্স নেই বলেও জানান তিনি।
আরো পড়ুন : গোলাগুলিতে আটজনের মৃত্যুর ঘটনায় থমথমে পাহাড়; আতংকে স্থানীয়রা