বয়স কমানোর চিকিৎসায় হতে পারে হিতে বিপরীত 

অনুসন্ধানী প্রচ্ছদ বিনোদন মুক্তমত লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য কথা হ্যালোআড্ডা

বয়স তো ধরে রাখা যায় না। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চেহারায় ভাঁজ পড়বে- এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই স্বাভাবিক বিষয়টি অনেকে মেনে নিতে পারেন না। নিজেকে কমবয়সী দেখাতে আশ্রয় নেন হরেক রকম চেষ্টার। চেহারার বলি রেখা, গর্ত ঢাকতে বোটক্স, ফিলার সহ বিভিন্ন ট্রিটমেন্টের দিকে ঝুঁকছেন অনেকে। বোটক্স এবং ফিলারের মতো ট্রিটমেন্ট বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়া করালে ঘটতে পারে হিতে বিপরীত। বয়স কমার পরিবর্তে চামড়া আরও ঝুলে যেতে পারে। এ ছাড়াও ঘটতে পারে নানা বিপত্তি। আগে বিদেশে গিয়ে এসব ট্রিটমেন্ট করাতে হতো। কিন্তু এখন দেশেই কৃত্রিমভাবে মুখমণ্ডলের আকৃতি পরিবর্তনের ট্রিটমেন্ট শুরু হয়েছে।

ব্যয়বহুল এসব ট্রিটমেন্ট নিতে চিত্রতারকা, টিভি অভিনেত্রী, উপস্থাপিকা, সংবাদ পাঠিকা, মডেল, রাজনীতিবিদ এবং উচ্চবিত্তরাই বেশি ভিড় করছেন।

বোটক্স বা ফিলার করালে চেহারার সব বলি রেখা বা গর্ত দূর হয়ে চামড়া টান হয়ে যায় এবং নির্দিষ্ট বয়সের চেয়ে কয়েক বছর বয়স কম দেখায়। একবার বোটক্স বা ফিলার করালে এর স্থায়িত্ব থাকে ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত। এরপর আবার ট্রিটমেন্ট নিতে হয়, না হলে চেহারা আগের অবস্থায় ফিরে আসবে। একবার বোটক্স বা ফিলার করাতে পঞ্চাশ থেকে এক লাখ টাকা খরচ হয়। মুখমণ্ডলের সুনির্দিষ্ট জায়গায় ইনজেকশনের মাধ্যমে এসব ট্রিটমেন্ট করা হয়। এছাড়াও ইনজেকশনের মাধ্যমে লিপ অগমেন্টেশন (ঠোঁট ফোলানো) এবং বোঁচা নাক খাড়া করতে নোজ অগমেন্টেশন ট্রিটমেন্ট করা হয়।

বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান বোটক্স ও ফিলারের ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লেজার এয়েসথেটিকস প্রাইভেট লিমিটেড এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. জামাল উদ্দিন বলেন- বোটক্স, ফিলার, লিপ ও নোজ অগমেন্টেশন ট্রিটমেন্টগুলো আগে আমাদের দেশে ছিল না। এগুলোর ট্রিটমেন্ট বিদেশে গিয়ে করাতে হতো- যা ছিল অত্যন্ত ব্যয়বহুল। কিন্তু এখন এসব ট্রিটমেন্ট দেশেই করা হচ্ছে এবং এটা বেশ ব্যয়বহুল। আমাদের দেশের অনেক চিকিৎসকই বোটক্স, ফিলার, নোজ ও লিপ অগমেন্টেশনের উপর উন্নত দেশগুলো থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন। আমাদের কাছে কেউ বোটক্স বা ফিলার করাতে এলে আমরা প্রথমে তাদেরকে কাউন্সিলিং করি তারপর সিদ্ধান্ত নিতে বলি। সপ্তাহে চার থেকে পাঁচটি বোটক্স ও ফিলারের কাজ করি আমি। আমার এখানে সাধারণত চিত্রতারকা, টিভি তারকা, রাজনীতিবিদ ও কিছু উচ্চবিত্তের মানুষ আসেন ট্রিটমেন্ট নিতে। এই ট্রিটমেন্টটা একটা লম্বা প্রসেস এর মধ্য দিয়ে যেতে হয়, কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। যেমন- যেদিন বোটক্স বা ফিলার করা হবে সে সময় থেকে ২৪ ঘণ্টা কোনো পানি লাগানো যাবে না। দুই থেকে তিনদিন রোদে যাওয়া যাবে না। পাঁচ থেকে সাতদিন একটি এন্টিবায়োটিক ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। ছয়মাস থেকে এক বছর পর আবার বোটক্স বা ফিলার করাতে হবে। তা না হলে আবার আগের চেহারা ফিরে পাবে। একবার বোটক্স বা ফিলার করতে পঞ্চাশ হাজার থেকে এক লাখ টাকা খরচ হয়। সাধারণত বোটক্স ও ফিলারের ক্ষেত্রে আমরা চাইনিজ, কোরিয়ান ও ইউরোপের মেডিসিন ব্যবহার করি। সবচেয়ে দাম হচ্ছে ইউরোপের মেডিসিনের, তারপর কোরিয়ান ও চীনের। যে যেটা পছন্দ করেন আমরা তাকে সেটা দিয়ে থাকি।

আমাদের দেশে বোটক্স, ফিলারের মতো ট্রিটমেন্ট গ্রহণে কোনো নীতিমালা নেই। এতে করে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে- এখন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়াই বিভিন্ন স্কিন কেয়ার সেন্টার ও পার্লারে বোটক্স ও ফিলারের ট্রিটমেন্ট করা হচ্ছে যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এসব ট্রিটমেন্টে মুখমণ্ডলের কয়েকটি নির্দিষ্ট স্থানে ইনজেকশন দিতে হয়। দুই চোখের কোণায় যে ইনজেকশনটি দেয়া হয় সেটি যদি নির্দিষ্ট পরিমাপে পুশ করা না হয় তাহলে চোখ নিচের দিকে ঝুলে গিয়ে এক চোখ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। স্কিনে ইনফেকশন হতে পারে। চামড়া ঝুলে যেতে পারে। এক গাল উঁচু আর এক গাল নিচু হয়ে যেতে পারে। মুখ বাঁকা হয়ে যেতে পারে। আমি বলবো সরকারের নির্দিষ্ট আইন করা উচিত এসব ট্রিটমেন্টের বিষয়ে- যাতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়া এসব ট্রিটমেন্ট করতে না পারে।

আরো পড়ুন : বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে বার্তা দিল ভারত

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *