সিলেট ব্যুরো: নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ ও সিলেটে বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন শেষে সিলেট সার্কিট হাউসে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও দলের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার দুপুরে সিলেট সার্কিট হাউসে বন্যা পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও বন্যা দুর্গতদের পুনর্বাসনের বিষয়ে ওই মতবিনিময় সভায় বন্যায় বিএনপি নেতাদের কাছ থেকে কী পেয়েছেন- মেয়র আরিফের কাছে তা জানতে চান প্রধানমন্ত্রী।
মতবিনিময়ে সিলেট ও সুনামগঞ্জ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে বক্তব্য দেওয়ার প্রতিযোগিতা লেগে যায়। এর মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে বক্তব্য দেওয়ার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মেয়র আরিফের উদ্দেশে বলেন, ‘তার দলের কেউ (বন্যা উপদ্রুতদের সহযোগিতায়) আসে নাই। তার দলের সবাই ঘরে বইস্যা ফাটাইয়া ফেলতেছে। উনিই (মেয়র আরিফ) বলুক তার দলের কাছ থেকে কী পাইছেন, আমরা শুনি।’
বন্যাদুর্গত এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি অসহায় মানুষদের মধ্যে আশার আলো দেখিয়েছে বলে মন্তব্য করে সিসিক মেয়র আরিফ বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার উপস্থিতির পর এখানকার মানুষ আশার আলো দেখতে পেয়েছে। তারা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পেরেছে। আপনার এখানে আসার খবরের পর থেকেই মানুষ অনেক আশায় ছিলেন যে, প্রধানমন্ত্রী যেহেতু আসছেন তাহলে তিনি নিশ্চয়ই কোনো ব্যবস্থা নেবেন।’ নগরীর সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি তুলে ধরার পাশাপাশি মেয়র অসাধু ব্যবসায়ীদের শুকনো খাবারের মূল্যবৃদ্ধি ঠেকানো ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা ও বরাদ্দ বৃদ্ধির অনুরোধ জানান।
সিলেট নগরীর ৮০ ভাগ বন্যাকবলিত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে সিলেটের মেয়র আরিফ আরও বলেন, ‘সিলেটের কয়েকটি এলাকা দিয়ে আকস্মিক পানি ঢুকে নগর ডুবে যায়। এজন্য শহর রক্ষা বাঁধের প্রয়োজন। সুরমা নদীর তীরে যেসব এলাকায় উঁচু ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে, সে এলাকা দিয়ে পানি প্রবেশ করতে পারেনি। এজন্য ১৫ কিলোমিটার এলাকায় শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে প্রকল্প গ্রহণের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানান।’
চলমান বন্যার মধ্যে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছেন উল্লেখ করে মেয়র বলেন, আমাদের সিটি করপোরেশনের সকল কাউন্সিলররা একযোগে প্রতিটি ওয়ার্ডে বন্যার্তদের জন্য কাজ করেছেন। আমরা ৮০টি সেন্টার খুলেছি।
মঙ্গলবার সকাল ৮টায় তেজগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারযোগে তিন জেলার বন্যা পরিস্থিতি দেখতে ঢাকা থেকে রওয়ানা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘লো-ফ্লাইং মুডে’ হেলিকপ্টার থেকে বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনের পর সকাল ১০টার দিকে সিলেটে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে প্রায় সোয়া দুই ঘণ্টা তিনি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং বন্যা মোকাবিলায় বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন। দুপুর ২টার দিকে হেলিকপ্টারে ঢাকা ফেরার পথে প্রধানমন্ত্রী হযরত শাহজালাল (রহ.) এর মাজার জিয়ারত করেন। এই সফরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মন্ত্রী পরিষদের সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ছিলেন।
আরো পড়ুন : বিমর্ষচিত্তে আকাশ থেকে পানিতে ডুবে যাওয়া জনপদ দেখলেন প্রধানমন্ত্রী