নিজস্ব প্রতিবেদক : কয়েকদিন শান্ত থাকার পর বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে ফের গোলাগুলি শুরু হয়েছে। গতকাল সকাল থেকেই উত্তেজনা বিরাজ করছে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ও টেকনাফের হোয়াইক্যং সীমান্তের ওপারে। তবে সোমবার পর্যন্ত অনেকটা শান্ত ছিল এ দুটি সীমান্ত। এর মধ্যে হোয়াইক্যংয়ের উলুবুনিয়া সীমান্তে প্রচণ্ড গোলাগুলি ও ভারী অস্ত্রের বিস্ফোরণ হয়েছে বলে জানিয়েছেন সীমান্তের বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিরা। এতে ফের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সীমান্ত এলাকায়। তবে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু ও ঘুমধুম সীমান্ত গত তিন দিন শান্ত রয়েছে। শোনা যায়নি কোনো গোলাগুলির শব্দ। এতে অনেকটা স্বস্তি ফিরে এসেছে এ এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে।
বেশ কিছুদিন ধরে সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে মিয়ানমার। ২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিজিপির তুমুল সংঘর্ষ শুরু হয়। বিজিপিকে হটিয়ে তুমব্রু রাইট ক্যাম্প ও ঢেঁকিবনিয়া সীমান্তচৌকি আরাকান আর্মি দখলে নিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর আক্রমণের মুখে মিয়ানমারের সেনা, সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্য, শুল্ক কর্মকর্তাসহ অন্তত ৩৩০ জন বাংলাদেশে ঢুকে পড়েন। তাদের অস্ত্র জমা রেখে বিজিবি হেফাজতে রাখা হয়েছে। চিকিৎসা দেওয়া হয় আহতদের। মিয়ানমারের অভ্যন্তরের যুদ্ধে একের পর এক গুলি ও মর্টারশেল এসে পড়তে শুরু করে বাংলাদেশে। এতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে কয়েকজন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাড়িঘর। গুলিতে ছালবাকল উঠে গেছে বড় বড় গাছের। আতঙ্কে তুমব্রু ও ঘুমধুম এলাকার ৫ হাজারের বেশি মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। গত তিন-চার দিন সীমান্তের ওপারে গোলাগুলি কমে যাওয়ায় বাড়িঘরে ফিরে এসেছেন এ এলাকার অনেকে। তবে গতকাল উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্তের ওপারে আবারও উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় লোকজন বলছেন, পালংখালী ইউনিয়নের রহমতের বিল সীমান্তের ওপারে ঢেঁকিবনিয়া ও চাকমাকাটা এলাকায় গোলাগুলি হয়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে ৭টা থেকে থেমে থেমে গোলাগুলি হয়েছে। অন্যদিকে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উত্তরপাড়া সীমান্তের ওপারেও গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। তবে সোমবার রাতে দুই সীমান্তের কোথাও গোলাগুলি হয়নি। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু ও ঘুমধুম সীমান্ত গতকালও ছিল শান্ত। এতে জনজীবন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। খুলেছে দোকানপাঠ। হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য সিরাজুল ইসলাম বলেন, ওপারে কুমিরখালী ঘাঁটির দখল নিয়ে গোলাগুলি হচ্ছে বলে শুনেছি। তবে এপারে গুলি আসছে না। সীমান্তের একদম কাছাকাছি আরাকান আর্মির অবস্থান দেখা যাচ্ছে। এতে সীমান্তবাসীর মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এদিকে টেকনাফের হোয়াইক্যং ও হ্নীলা সীমান্ত দিয়ে নাফ নদী পার হয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদীতে বিজিবি ও কোস্ট গার্ডের টহল জোরদার রয়েছে। ইতোমধ্যে গত কয়েক দিনে নাফ নদী হয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে বিজিবি ও কোস্ট গার্ড টহল টিম রোহিঙ্গা বোঝাই বেশ কয়েকটি নৌকা মিয়ানমারে ফিরিয়ে দিয়েছে। গতকাল ঢাকায় রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে হাইওয়ে পুলিশের ‘সেবা সপ্তাহ-২০২৪’ উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, এমনিতেই মিয়ানমারের প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে রয়েছে। রোহিঙ্গা বা যেই আসুক, মিয়ানমার থেকে আর কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মিয়ানমারের চতুর্দিকেই যুদ্ধ লেগে আছে। বাংলাদেশ সীমানায় আরাকান আর্মির সঙ্গে তাদের বাহিনীর যুদ্ধ চলছে। এই যুদ্ধ এতটাই তীব্র হয়েছে যে, মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ, সরকারি কর্মকর্তা, ধারণা করছি দু-একজন সেনা সদস্য আমাদের এখানে ঢুকে পড়েছে। এদের মধ্যে কেউ অস্ত্র নিয়ে এসেছে, কেউ অস্ত্র ছাড়া ঢুকেছে। তবে তারা জীবন রক্ষার জন্য এসেছে, যুদ্ধের জন্য ঢোকেনি। আমাদের বিজিবি সদস্যরা তাদের অস্ত্র জমা নিয়ে আটক অবস্থায় রেখেছে। আহতদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে। পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আমরা তাদের ফেরত নিতে জানিয়েছি। আমি মনে করি, দু-এক দিনের মধ্যে তাদের সদস্যদের তারা ফেরত নিয়ে যাবে।
আরো পড়ুন : পাকিস্তানে জোট সরকার নিয়ে প্রকাশ্যে-গোপনে নানা তৎপরতা