খালি নেই ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের জন্য নির্ধারিত শয্যা। রোগীর চাপ বাড়ায় বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের সাধারণ ওয়ার্ডে চলছে ডেঙ্গু চিকিৎসা। এতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে থেকে জ্বরে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে ছুটছেন স্বজনরা। হাসপাতালটিতে বর্তমানে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে ১০২ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ২২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু ভর্তি হয়েছে। গত নয় মাসে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৪১৬ জন। এরমধ্যে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালের তথ্যমতে, শয্যা খালি না থাকলেও ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের সাধারণ ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আক্রান্ত কাউকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে না।
বর্তমানে মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১০২ জন। গত নয় মাসে ভর্তি রোগী ১৪১৬ জন। আক্রান্ত রোগীদের বয়স ৬ মাস থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত। তবে ৫ থেকে ১০ বছরের শিশুরা বেশি এসেছে।
গতকাল হাসপাতালটিতে সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে ছোটাছুটি করছেন স্বজনরা। হাসপাতালজুড়ে শিশুদের চিৎকার। শিশুদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য দিগ্বিদিক ছুটছেন স্বজনরা। ওয়ার্ডে ভর্তি শিশুদের মলিন মুখ ও স্বজনদের ক্লান্তির ছাপ। অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক-নার্সসহ সংশ্লিষ্টরা। ডেঙ্গু ডেডিকেটেড ওয়ার্ড ছাড়াও অন্যান্য ওয়ার্ডে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ৯ জন, ফেব্রুয়ারিতে কোনো রোগী ভর্তি হয়নি, মার্চে ১ জন, এপ্রিলে ১১ জন, মে মাসে ১৫ জন, জুনে ৬৩ জন, জুলাই মাসে ৩০০ জন। জুন, জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে হাসপাতালটিতে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকা ছাড়াও অন্যান্য জেলার রোগীদের চাপ অনেক বেশি। এখন সারা দেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে গেছে। বাইরের এবং ঢাকার সমান সমানই রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। ডেঙ্গু ২ নম্বর কর্নারে ৫০ বেডের কয়েকটা ছাড়া সব বেডেই ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ২ নম্বর ওয়ার্ডের ২৫ নম্বর বেডে ভর্তি ৭ মাসের শিশু ওসমান গনি। তার মা তোফা বেগম বলেন, চারদিন ধরে বাচ্চাটির জ্বর। রাতে এই হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি। বরিশালে একটি হাসপাতালে প্রথমে ডাক্তার দেখাই। টেস্ট করিয়ে ডেঙ্গু জ্বর ধরা পড়ে। চিকিৎসক ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তারা বাচ্চাকে নিয়ে ঝুঁকি নিতে চাননি। আমরাও চেয়েছি বাচ্চাকে ভালো হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার জন্য। এরপর চিন্তা করেছি ঢাকায় নিয়ে আসার- যেভাবে হোক ভর্তি করাতে হবে। গ্রামে অনেক মশা। চারদিকে ময়লা আর পানি জমা। ওর বাবারও কয়েকদিন আগে ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে। বড় বিধায় তাকে ঢাকায় আনার চিন্তা করিনি। কিন্তু ছোট বাচ্চাকে নিয়ে চিকিৎসকরা ঢাকায় আসতে বলেছেন। গতকাল পর্যন্ত রক্তের প্লাটিলেট ৭০ হাজারের মতো ছিল।
ফরিদপুর থেকে সকালে চার বছরের মেয়েকে নিয়ে এসেছেন ফাতেমা। তিনি বলেন, দু’দিন ধরে মেয়ের অনেক জ্বর, বমি ও পেটে সমস্যা হচ্ছে। কিছুই খেতে চাচ্ছে না। স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখান থেকে ঢাকায় নিয়ে আসার জন্য বলেন চিকিৎসক। এরপর আজ সকালে এই হাসপাতালে এসে মেয়েকে ডাক্তার দেখাই। ডেঙ্গুর পরীক্ষা করতে দেয়া হয়েছে। রিপোর্ট এখনো হাতে আসেনি। রিপোর্টের অপেক্ষায় আছি।
তালতলা থেকে ছেলেকে নিয়ে এসেছেন খাদিজা। তিনি বলেন, ৬ দিন ধরে ছেলেটির জ্বর, মাথাব্যথা, বমি। টেস্ট করিয়ে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। এখন জ্বর নেই কিন্তু শরীর দুর্বল। প্লাটিলেট আপডাউন করছে। কীভাবে কি হলো বুঝতে পারছি না। বাসায় থাকে, কোচিং, স্কুলে যায়। তালতলায় থাকি। সারাদিন খুব ভালো মনে হয়েছে কিন্তু হঠাৎ করে জ্বর এসে দুর্বল করে দিলো। স্কুলে পরীক্ষা চলছে ওর। এই ক’দিন খেতেই পারেনি শুধু বমি করেছে। গ্রাম থেকেও অনেক রোগী আসছে। আমি আসার পরে একটি বেডও খালি দেখিনি। ঘরে-বাইরে, স্কুলে কোথাও নিরাপদ নেই।
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের শিশু ও মেডিসিন বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. ফারহানা আহমেদ সরণী বলেন, রোগীর চাপ আগের চেয়ে অনেক বেশি। আমরা চেষ্টা করছি সবাইকে চিকিৎসা দেয়ার। ঢাকা ছাড়াও সারা দেশ থেকে রোগী আসছে। বাইরের রোগীদের ঢাকায় পাঠানোর কারণ যে রোগীগুলো একটু ঝুঁকিতে থাকেন তাদের চিকিৎসার জন্য আইসিইউ প্রয়োজন হয়। রোগীদের কথা চিন্তা করে ঢাকায় আসার পরামর্শ দেন। আমাদের যতক্ষণ ক্যাপাসিটি আছে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। কেউ যেন ফিরে না যায়। আমাদের দুইটা ওয়ার্ড ডেডিকেটেড করা হয়েছে। ডেঙ্গুর কারণে সব রোগীদের কিছুটা ক্রাইসিস হচ্ছে একটু সংকটে পড়তে হচ্ছে। যাদের আইসিইউ প্রয়োজন হচ্ছে তাদের দ্রুত আইসিইউ’র ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।
আরো পড়ুন : হঠাৎ প্যারিসে উদয় হলেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই