সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়ে আসা নারী ফুটবলারদের মধ্যে কেউ ঘুমিয়ে কাটাচ্ছেন, কেউ শপিংয়ে যাচ্ছেন। ক্লান্ত শরীরে সাংবাদিকদের বলছেন কথা বলতে ভালো লাগছে না। তবুও হাসি মুখে প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাচ্ছেন। সবার আকর্ষণ সাফের সেরা খেলোয়াড় ঋতুপর্ণা চাকমা। তার খেলা দেখে উপমহাদেশের ফুটবল দর্শক মুগ্ধ। পায়ের স্কিল আর বল নিয়ে গতির সঙ্গে ছুটে চলাটা যেন ছবির মতো।
ঋতুপর্ণা চাকমা সাফের ফাইনালে নেপালের বিপক্ষে দর্শনীয় গোল করেছেন। তার গোলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। ২-১ গোলে হারিয়েছে নেপালকে। বাঁ পায়ে বল রিসিভ করে বাঁ পায়ে চোখের পলকে নেপালি অধিনায়ক ও গোলরক্ষককে বোকা বানিয়ে গোল করেছেন। তার জীবনের স্মরণীয় দিন এটা। জীবনের সেরা সময় কাটাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের এই শিক্ষার্থী।
তবে টানা দুইটা সাফ জয়ী দলের ফুটবলার হয়েও তার বুকের ভেতরে কষ্টের শেষ নেই। বাবার কথা মনে পড়ে। ভাইয়ের কথা মনে পড়ে। বাবা ও ভাই দুজনই ছিলেন ঋতুপর্ণার জীবনের সেরা মানুষদের অন্যতম। তার ফুটবল খেলাটাকে তারা গুরুত্ব দিতেন। আজকে এ পর্যায়ে আসার পেছনে বাবার অবদান কোনো দিন ভুলতে পারবেন না। সাফ জিতে ফেরার পর বারবার সেই বাবার মুখটাই ভেসে উঠছে। এত লোকজন, এত অভিনন্দন, ফুলে ফুলে ভাসিয়ে দিচ্ছে। ছাদখোলা বাসে আনা হচ্ছে। কোনোটাই তার বাবা দেখতে পারেননি। ২০১৫ সালে ঋতুপর্ণা চাকমার বাবা মারা গেছেন।
ঋতুপর্ণা বলেন, ‘আমি দক্ষিণ এশিয়ার সেরা ফুটবলার হয়েছি। দেশের জন্য সম্মান অর্জন করে এনেছি। আমার বাবা থাকলে প্রাউড ফিল করতেন। সবার ভিড়ে বাবার কথা মনে পড়ে। বাবার মুখটা খুঁজি। উনি ফুটবল-প্রেমিক ছিলেন। এটা আমার আফসোস।’ তিনি বলেন, ‘আমরা চার বোন, এক ভাই ছিলাম। তিন বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট ভাই ছিল, সে-ও মারা গেছে। ২০২২ সালে সাফে যাওয়ার দুই মাস আগে আমার ভাইকে হারিয়েছি। সে-ও ফুটবল পছন্দ করত। আমার মা এবং আমি একসঙ্গে রয়েছি।’
সাফের এই সেরা খেলোয়াড় আরও বলেন, ‘ফেডারেশনের কাছে চাওয়া নারীদের ফুটবল খেলতে কোনো প্রতিবন্ধকতা যেন না থাকে। আমরা চাই, আমাদের চাওয়াগুলোয় নজর দেওয়া হোক। আমরা চাই নারী লিগ রেগুলার হোক। আরও ভালোভাবে হোক। পরিচর্যা করতে হবে। আরও বেশি বেশি ম্যাচ খেলতে চান। বেতনটা নিয়মিত চান, মোহামেডান আবাহনী যেন নারী লিগে খেলে। এটা যদি তারা করেন তাহলে নারী ফুটবল আরও এগিয়ে যাবে।
আরো পড়ুন : সেলিব্রেটির ছবি দিয়ে অনলাইনে জুয়ার ফাঁদ