নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপির এমপিদের পদত্যাগে শূন্য ঘোষিত ছয়টি আসনের উপনির্বাচনে আজ বুধবার। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ হবে। আগের কয়েকটি উপনির্বাচনে ভোটকক্ষগুলোতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হলেও এবার তা হচ্ছে না।
ছয়টি আসনের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মাত্র তিনটি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। এগুলো হলো বগুড়া-৬, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ ও ৩। ঠাকুরগাঁও-৩, বগুড়া-৪ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে দলটির কোনো প্রার্থী নেই। এ নির্বাচনে আলোচনার শীর্ষে রয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন। আসনটিতে বিএনপির সিদ্ধান্ত অনুসারে পদত্যাগ করার পরও ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন উকিল আবদুস সাত্তার। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদেরও সমর্থন পাচ্ছেন তিনি। একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা এ আসনের নির্বাচনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি সম্পর্কে গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘যথারীতি আগের অন্যান্য জায়গার মতো সব প্রস্তুতি আছে। খালি একটাই নাই। আমরা সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা করি নাই।’
নির্বাচন কমিশন সচিবালয় জানায়, আজ নির্বাচনী এলাকায় ট্রাক, পিকআপ ও ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে। মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ থাকবে আগামীকাল মধ্যরাত পর্যন্ত। তবে ইসির অনুমতি নিয়ে যেকোনো যান চলাচল করতে পারবে। ছয়টি আসনে মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৮৬৭। ভোটকক্ষ পাঁচ হাজার ৮৯৮টি। মোট ভোটার ২২ লাখ ৫৪ হাজার ২১৭ জন। ছয়টি আসনে মোট ৪০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (আশুগঞ্জ-বিজয়নগর) আসনের নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের লক্ষ্যটা বেশ পরিষ্কার। আবদুস সাত্তারের জয়ের মধ্য দিয়ে তাঁকে সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করানো বিএনপির ভুল সিদ্ধান্ত ছিল—এটা প্রমাণ করতে চায় আওয়ামী লীগ। সরকারি দলটি চায় বিএনপির এই নেতা আবার সংসদে গিয়ে দলের সঙ্গে হওয়া বিরোধ নিয়ে কথা বলুন।
তবে কাগজে-কলমে ভোটের মাঠে নেই আওয়ামী লীগ। আছে দলীয় ‘ছক’ ও কৌশলী প্রচারণা। সেই ছক আর প্রচারণায় বেশ ফুরফুরে পদত্যাগ-পরবর্তী বিএনপি নেতা আবদুস সাত্তার ভুঞা। একসঙ্গে প্রচারের পর এবার ভোটের দিনও মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ। ভোটের আগের দিনও জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা আবদুস সাত্তারের পক্ষে কাজ করতে দুই উপজেলায় দায়িত্ব ভাগ করে কর্মকাণ্ড চালিয়েছেন।
উল্টো চিত্র অন্য তিন প্রার্থীর বেলায়। পাঁচ দিন ধরে নিখোঁজ স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক বিএনপি নেতা আবু আসিফ আহমেদের হদিস নেই ভোটের আগের দিনও। জাতীয় পার্টির প্রার্থী আব্দুল হামিদ জানিয়েছেন, তিনি এজেন্ট দেওয়া নিয়ে শঙ্কায় আছেন। জাকের পার্টির প্রার্থী প্রচারে নানাভাবে সহযোগিতা পেয়ে খুশি। জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা প্রতীক বরাদ্দ পেয়েও বিবৃতি দিয়ে সরে দাঁড়িয়েছেন।
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি জানান. ঠাকুরগাঁও-৩ (পীরগঞ্জ ও রানীশংকৈল উপজেলা) আসনের রিটার্নিং অফিসার ও রংপুর বিভাগীয় আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জি এম সাহাতাব উদ্দিন জানান, ১২৮টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৭২টি কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আসনটিতে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টিসহ ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধি জানান, বগুড়া-৪ (নন্দীগ্রাম-কাহালু) আসনে ৯ জন প্রার্থী থাকলেও আলোচনায় রয়েছেন চারজন। এর মধ্যে একজন জেলা জাসদের সভাপতি সাবেক এমপি এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন। তিনি ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে মশাল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারেন নন্দীগ্রাম পৌরসভার সাবেক মেয়র ও সাবেক বিএনপি নেতা কামরুল হাসান সিদ্দিকী জুয়েল। তিনি কুড়াল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। আরেকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী মুশফিকুর রহমান কাজল। তিনি ট্রাক প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। পিছিয়ে নেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম। তাঁর নির্বাচনী প্রতীক একতারা। তরুণ ও নতুন ভোটারদের মুখে মুখে হিরো আলমের নাম।
বগুড়া প্রতিনিধি জানান, বগুড়া-৬ (সদর) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী রাগেবুল আহসান রিপু। তবে তাঁর সঙ্গে নেই ১৪ দলীয় জোটের শরিক জাসদ ও জাতীয় পার্টি। জাসদ থেকে রয়েছেন জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক এমদাদ এবং জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে রয়েছেন জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম ওমর। এ ছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য প্রার্থীরা হলেন বগুড়া শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মান্নান আকন্দ, গণফ্রন্টের আফজাল হোসেন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মো. নজরুল ইসলাম, জাকের পার্টির মো. ফয়সাল বিন শফিক, স্বতন্ত্র প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা মাসুদার রহমান হেলাল, স্বতন্ত্র প্রার্থী আলোচিত আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার বাদল।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (নাচোল-গোমস্তাপুর-ভোলাহাট) আসনের ভোট নিয়ে গতকাল পুরাতন স্টেডিয়ামে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের ব্রিফ করেন পুলিশ সুপার এ এইচ এম আবদুর রকিব। তিনি একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করতে ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।
আসনটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল ওদুদ, ব্যবসায়ী ও জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি স্বতন্ত্র প্রার্থী সামিউল হক লিটন এবং বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) প্রার্থী কামরুজ্জামান খান।
পীরগঞ্জ (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি জানান, ঠাকুরগাঁও-৩ (পীরগঞ্জ-রানীশংকৈল) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৪ দলীয় জোট থেকে ওয়ার্কার্স পার্টির অধ্যাপক ইয়াসিন আলী, জাতীয় পার্টির হাফিজ উদ্দীন আহম্মেদ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ফ্রন্টের (বিএনএফ) সিরাজুল ইসলাম, জাকের পার্টির এমদাদুল হক, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) সাফি আল আসাদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যক্ষ গোপাল চন্দ্র রায়।
আরো পড়ুন : শেষ বারের মতো আপিলের সারসংক্ষেপ দাখিলের সময় পেল জামায়াত