সরকার পতনে চূড়ান্ত আন্দোলনে যাচ্ছে বিএনপি। হিন্দু সম্প্রদায়ের দুর্গাপূজার ছুটির মধ্যেই সরকারকে একদফা দাবি মেনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে আহ্বান জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অন্যথায় ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ থেকে আন্দোলনের ‘মহাযাত্রা’ শুরু করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এদিন আন্দোলনের লাগাতার কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এরপর থেকে চলবে রাজধানীকেন্দ্রিক ‘ননস্টপ’ কর্মসূচি। বিএনপি ছাড়াও সমমনা সব দল ও জোট যুগপৎভাবে আন্দোলনের শেষ ধাপের এ কর্মসূচিতে অংশ নেবে। এমনকি শেষ পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীসহ অন্য ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো এ আন্দোলনে শরিক হতে পারে। এভাবেই ‘অলআউট’ কর্মসূচির প্রস্তুতি চলছে বিরোধী শিবিরে। ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে ১৫ থেকে ২০ লাখ নেতা-কর্মীকে ঢাকায় আসার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিএনপির নীতি-নির্ধারক নেতাদের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, ২৯ অক্টোবর থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত টানা কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নভেম্বরের প্রথম দিকেই নির্বাচনী তফশিল ঘোষণার কথা। এর মধ্যে দাবি না মানলে তফশিল ঘোষণার পরও কঠোর আন্দোলন অব্যাহত রাখবে বিরোধী দলগুলো।
চলমান আন্দোলনের ব্যাপারে বিএনপিসহ শরিক দলগুলো এতটাই ‘কনফিডেন্ট’ যে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা অনেক দূর এগিয়ে গেছি। দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছি। এমনকি যারা আমাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে নেই, সেসব রাজনৈতিক দলও এখন বলছে পরিবর্তন অত্যাবশ্যক। কাজেই এখন শুধু চূড়ান্ত বিজয়ের অপেক্ষা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিএনপিসহ বিরোধী জোটের দলগুলো সর্বাত্মক আন্দোলনের পরিকল্পনা নিয়ে সামনে এগোচ্ছে। যে কোনো মূল্যে তারা এবার রাজধানী ঢাকার রাজপথ দখলে নিতে চায়। প্রয়োজনে ঢাকা অবরোধের কর্মসূচিও ঘোষণা করা হতে পারে। পাশাপাশি ঢাকা ঘেরাও, অবস্থান, ধর্মঘটসহ হরতালের মতো কঠোর কর্মসূচিও ঘোষণা করা হতে পারে। সব ধরনের কর্মসূচি নিয়েই সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। লন্ডন থেকে দলীয় হাইকমান্ড তারেক রহমানের গ্রিন সিগন্যালের অপেক্ষায় রয়েছেন ঢাকায় সিনিয়র নেতারা। তিনি সবুজ সংকেত পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গেই মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কিংবা সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। সমমনা দলগুলোর পক্ষ থেকেও একই কর্মসূচি ঘোষণা ও পালন করা হবে। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান চলমান আন্দোলনের বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা জনগণের এ আন্দোলনের বিজয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। আশা করি, খুব শিগগিরই সাধারণ মানুষের কাক্সিক্ষত সে পরিবর্তন আসবে। মানুষ আবারও তাদের ভোটাধিকার ফিরে পাবে। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে ক্ষমতাসীনরাও জনগণের ভাষা বুঝতে সক্ষম হবে। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সরকার যদি এবার হার্ডলাইনে যায় তাহলে বিএনপি আরও হার্ডলাইনে যাবে। তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো চাইছে যে, ক্ষমতাসীন দল তথা সরকারের পক্ষ থেকে আগে বড় ধরনের কোনো আঘাত আসুক। তাহলে পরিবেশ পরিস্থিতি তাদের অনুকূলে চলে আসবে। তখন কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা এবং পালনের যৌক্তিক গ্রাউন্ড তৈরি হবে। জানা যায়, এবারের আন্দোলন হবে রাজধানী ঢাকাকে কেন্দ্র করে। তবে প্রশাসনকে ব্যস্ত রাখতে ঢাকার বাইরেও জেলা পর্যায়ে কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। দুর্গাপূজার পর থেকে বিএনপির নেতৃত্বে সব বিরোধী দল একই সময়ে একই স্থানে অভিন্ন কর্মসূচি দিয়েও আন্দোলনে নামতে পারে। বিশেষ করে ঢাকার প্রবেশদ্বারসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো দখলের চেষ্টা থাকবে তাদের। আদালত, সচিবালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে গণপদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা আন্দোলনের একদম শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি। চূড়ান্ত আন্দোলন চলছে, তবে এর ফসল তোলার তারিখ অল্প কিছুদিনের মধ্যে দৃশ্যমান হবে। আশা করি, এই আন্দোলন খুব তাড়াতাড়ি সরকার পতনের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বিএনপি যে লক্ষ্য নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে সেখান থেকে আর পেছনে ফেরার সুযোগ নেই। কথা একটাই, আমরা অনেক কিছু হারিয়েছি। অনেক মা সন্তান হারিয়েছেন। আর এ সরকাকে ক্ষমতায় রাখা যাবে না। অপর একটি সূত্রে জানা যায়, চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু হওয়ার পর পশ্চিমা গণতান্ত্রিক বিশ্বের সমর্থন আরও বাড়বে বলে আশা করছে বিরোধীদলগুলো। ফলে সরকার কূটনৈতিকভাবে আরও বড় ধরনের ধাক্কা খেতে পারে। সংবিধান অনুযায়ী, জাতীয় সংসদের মেয়াদ হচ্ছে প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর নতুন গঠিত আইন সভার প্রথম অধিবেশন বসে ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে এবং ২৯ জানুয়ারি চলমান এ একাদশ সংসদেরও মেয়াদ শেষ হবে। ফলে সংবিধানের বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী আগামী ১ নভেম্বর থেকে এই ৯০ দিন গণনা শুরু হবে। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, দুর্গাপূজার ছুটি শেষে ২৮ অক্টোবরের পর থেকে সরকার পতনের লাগাতার কর্মসূচি পালন শুরু হবে। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। সরকারের পতন ঘটানোর জন্য শিগগিরই সর্বাত্মক আন্দোলনে জনগণ মাঠে নামবে। বিএনপি নিয়মতান্ত্রিকভাবে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের মাধ্যমেই এবার আন্দোলনের বিজয় অর্জন করা হবে।
আরো পড়ুন : গাজার জন্য বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় শোকে পতাকা অর্ধনমিত রাখবে মার্কিন দূতাবাসও