সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের চূড়ান্ত কর্মসূচিতে বিএনপির সঙ্গে থাকার অঙ্গীকার করেছে ১২ দলীয় জোটসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। বুধবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠকে সংগঠনগুলোর নেতারা এ অঙ্গীকার করেন।
বিকাল থেকে ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও লেবার পার্টির নেতাদের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক হয়। এ তিনটি বৈঠকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে স্কাইপে যুক্ত হয়ে নেতাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন। বৃহস্পতি এবং শুক্রবারও বাকি শরিকদের সঙ্গেও বিএনপি বৈঠক করবে।
সমমনা জোট নেতারা জানান, চলমান আন্দোলনের মূল নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে তাদের এটি প্রথম বৈঠক। বৈঠকে সরকারবিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলনের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়। শরিকদের মতামত নেওয়ার পাশাপাশি বিএনপির হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে তাদের প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। তারা মনে করেন, চলমান আন্দোলনে এর ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
জোট নেতারা আরও বলেন, বৈঠকে তারা সবাই একমত হয়েছেন, চলমান আন্দোলনে সফল না হলে দেশের মানুষ দীর্ঘদিনের জন্য ভোটাধিকার হারাবে এবং দেশ দীর্ঘদিনের জন্য অন্ধকার গহ্বরে চলে যাবে। দেশ ও জনগণের স্বার্থে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ থেকে চূড়ান্ত আন্দোলনে সবাইকে ভূমিকা রাখতে বিএনপির পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়।
১২ দলীয় জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম যুগান্তরকে বলেন, ‘বৈঠকে সব নেতার মতামত শোনেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আমাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য তাকে আমরা ধন্যবাদ জানিয়েছি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে অঙ্গীকার করেছি সব কিছু উজার করে সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনে রাজপথে থাকব। ’
গত ১২ জুলাই থেকে এক দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে বিএনপি। আগামী ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত তাদের ঘোষিত কর্মসূচি রয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে ছাত্র কনভেনশন হবে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে আগামী ১৪ অক্টোবর ঢাকাসহ দেশের সব জেলা ও মহানগরে প্রতীকী গণঅনশন, এক দফা দাবিতে ১৬ অক্টোবর ঢাকায় যুবসমাবেশ ও ১৮ অক্টোবর ঢাকায় জনসমাবেশ করবে বিএনপি।
এদিন বিকাল ৪টা থেকে রাত পৌনে ৮টা পর্যন্ত পৃথকভাবে সমমনাদের সঙ্গে এসব বৈঠক হয়। বৈঠকে ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু।
১২ দলীয় জোটের বৈঠকে ছিলেন- জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, বাংলাদেশ এলডিপি শাহাদাত হোসেন সেলিম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মনসুর হাসান রায়পুরী, মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, জাপপা(তাসমিয়া) রাশেদ প্রধান, ন্যাপ ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, লেবার পার্টির (একাংশ) ফারুক রহমান, ইসলামী ঐক্যজোটের আবদুল করিম ও ইসলামিক পার্টির আবুল কাশেম।
জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের বৈঠকে ছিলেন এনপিপির ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, জাগপা (লুৎফুর) খন্দকার লুৎফুর রহমান, এসএম শাহাদাত, গণদলের এটিএম গোলাম মওলা চৌধুরী, আবু সৈয়দ, বিকল্পধারার নুরুল আমিন বেপারী, শাহ আহমেদ বাদল, ন্যাপের এমএন শাওন সাদেকী, আবদুল বারিক, সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নুরুল ইসলাম, মাইনরিটি জনতা পার্টির সুকৃতি কুমার মন্ডল, দিলীপ কুমার দাস, মুসলিম লীগের নাসিম খান, এনডিপির আবু তাহের, আবদুল্লাহ আল হারুন সোহেল, ডেমোক্রেটিক লীগের আকবর হোসেন।
বাংলাদেশ লেবার পার্টির বৈঠকে ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এসএম ইউসুফ আলী, আমিনুল ইসলাম, হিন্দুরত্ন রাম কৃষ্ণ সাহা ও জহুরা খাতুন জুঁই ছিলেন।
গত বছরের ১০ ডিসেম্বর সরকারের পতনের রূপরেখা ঘোষণা করে বিএনপি। এরপর গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তবাদী সমমনা জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, এলডিপি, লেবার পার্টি, এনডিএমসহ আরও কয়েকটি দল নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে।
আরো পড়ুন : জেনে নেয়া যাক ইসরাইল-হামাস কার কত অস্ত্র!