র্যাব হেফাজতে নিহত নওগাঁর ভূমি অফিসের কর্মচারী সুলতানা জেসমিনের কথিত সহযোগী আল আমিনকে ঢাকা থেকে আটক করেছে র্যাব। বিষয়টি গতকাল বুধবার নিশ্চিত করেছে এ এলিট ফোর্স। সুলতানার মৃত্যুর ঘটনায় সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হলে এ ঘটনায় কথিত হ্যাকার আল আমিনের নাম সামনে আনে র্যাব।
আরো পড়ুন : যুগ্মসচিব এনামুল হক নিজেই প্রতারণা মামলার আসামি
এদিকে এখনও আতঙ্কে আছে সুলতানার পরিবার। তাঁর ছেলে শাহেদ হোসেন বুধবারও গণমাধ্যমকে এড়িয়ে চলেছেন। ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে নিহতের মামা নওগাঁ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নাজমুল হক মন্টু বলেন, র্যাবের নিরাপত্তা হেফাজতে সুলতানার মৃত্যুর ঘটনায় পরিবার কোনো মামলা করবে না। বরং হাইকোর্ট কী সিদ্ধান্ত দেন, তাঁরা সেদিকেই তাকিয়ে আছেন। এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত চায় তাঁর পরিবার। মামলা না করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তা বলব না। আপনারা বুঝে নেন।’
গত ২২ মার্চ সুলতানাকে আটক করে র্যাব। গত শুক্রবার তিনি মারা যান। তাঁর মৃত্যুর জন্য র্যাবকে দায়ী করছে পরিবার। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছিলেন রাজশাহীর স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক এনামুল হক। তিনি বলেন, সুলতানা জেসমিন বা আল আমিনের সঙ্গে তাঁর কোনো ব্যক্তিগত চেনাজানা নেই। সুলতানা তাঁর অধীন স্টাফ হলেও তিনি তাঁকে চিনতেন না। তাঁর সঙ্গে সুলতানা এক অফিসে কোনো দিন কাজ করেননি। বরং র্যাব তথ্যপ্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে সুলতানা ও আল আমিনের পরিচয় সামনে আনে।
আরো পড়ুন : কোন ক্ষমতাবলে র্যাব সুলতানা জেসমিনকে তুলে নিয়েছিল জানতে চায় আদালত
তিনি আরও বলেন, ‘সুলতানা আমার স্টাফ হলেও আল আমিন একজন হ্যাকার। মূলত আল আমিন ফেসবুক আইডি হ্যাক করে সুলতানার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা রাখত। সুলতানা সেই টাকা তুলে আল আমিনকে দিতেন। এভাবে দু’জনের মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। জেসমিনের ফোন র্যাব জব্দ করার পর আল আমিনের সঙ্গে আপত্তিকর নোংরা চ্যাটিং দেখা যায়।’
বুধবার বিকেলে র্যাব-৫ অধিনায়ক লে. কর্নেল রিয়াজ শাহরিয়ার বলেন, ‘বুধবার ঢাকা থেকে প্রতারক আল আমিনকে আটক করা হয়েছে। তবে এখনই তার সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেওয়া যাচ্ছে না। পরে সব জানানো হবে।’
আরো পড়ুন : সুলতানা জেসমিনকে আটকের নেপথ্যে সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা
সুলতানার মামা নাজমুল হক মন্টু বলেন, জেসমিন মোবাইল চালাতেই জানত না। তাছাড়া র্যাব প্রথমে বলেছে, ৭০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। এর পর বলেছে, ২০ লাখ। এখন বলছে, ৭-৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। আমার বিশ্বাস, সুলতানা এসব প্রতারণায় জড়িত ছিল না। এ ঘটনায় র্যাব তদন্ত কমিটি করেছে। কিন্তু র্যাব দোষী হলে কি তারা দায় নেবে? আমার মনে হয়, এ ঘটনায় বিচার বিভাগীয় কমিটি করে তদন্ত করা দরকার।’
বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের দাবি আসকের : সুলতানার মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। পাশাপশি ঘটনার সঙ্গে দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। এ ছাড়া ভুক্তভোগী পরিবারকে নিরাপত্তা ও যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও দাবি জানিয়েছে আসক। গতকাল রাজধানীর লালমাটিয়ার আসক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ দাবি জানান সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক নুর খান লিটন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সুলতানার স্বজনরা অভিযোগ করেছেন যে, র্যাব হেফাজতে তাঁকে নির্যাতন করা হয়েছে। এর ফলে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তবে র্যাবের পক্ষ থেকে এ অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। র্যাবের আটকের বিষয়ে নওগাঁ সদর থানার ওসি ফয়সাল বিন আহসান আসককে জানিয়েছেন, সুলতানাকে আটকের বিষয়ে সদর থানা অবহিত ছিল না, এমনকি আটকের পরও না।
পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সুলতানা হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিকস বা অন্য কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন না। এ ছাড়া আটকের আগে তাঁর মাথায় বা শরীরে কিংবা হাতের কোনো অংশে জখম বা আঘাতের চিহ্ন ছিল না। এসব ঘটনা পুরো একটি বাহিনীকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নুর খান বলেন, রাজপথ, বাসাবাড়ি, অফিস থেকে রাতে বা দিনে সিভিল পোশাকে সাধারণ মানুষকে উঠিয়ে নেওয়া চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন। কখনও তাদের সন্ধান মেলে, কখনও মেলে না। এসব ঘটনায় সাধারণ মানুষের মনে অসংখ্য প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, র্যাব হেফাজতে মৃত্যু বা নির্যাতনের ঘটনা নতুন নয়, আগেও একাধিকবার ঘটেছে। বরগুনায় লিমন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শাহনুর তাঁর জ্বলন্ত উদাহরণ। ধারণা করা হচ্ছে, সুলতানার মৃত্যুর পর মামলাটি সাজানো হয়েছে।
বগুড়ায় মানববন্ধন : বগুড়া ব্যুরো জানায়, র্যাব হেফাজতে সুলতানার মৃত্যুর প্রতিবাদে ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ। গতকাল দুপুরে শহরের সাতমাথায় এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন বাসদ বগুড়া জেলা শাখার আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম পল্টু, জেলা শাখার সদস্য সচিব দিলরুবা নূরী, সদস্য সাইফুজ্জামান টুটুল, মাসুদ পারভেজ প্রমুখ।