স্টাফ রিপোর্টার : আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বিএনপি’র চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হলে আইনি আর কোনো সুযোগ নেই। এখন একমাত্র পথ হচ্ছে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়া। তিনি যদি দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চান, সেটা তার (খালেদা জিয়া) বিষয়; আমার নয়। বুধবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ও আইন সচিব গোলাম সারোয়ার উপস্থিত ছিলেন।
আ স ম আবদুর রব ও হাজী সেলিম দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার পরও তাদের দুজনকে বিদেশ যাওয়ার সুযোগ দিয়েছে সরকার- এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, আবদুর রবকে মুক্তি দেয়া হয় সামরিক শাসন চলাকালে। তাকে ফৌজদারি কার্যবিধির ক্ষমতাবলে মুক্তি দেয়া হয়নি। আর হাজী সেলিমের দণ্ডাদেশ বহাল থাকার পর তিনি আপিল করেন। আপিল করার পর হাইকোর্ট বিভাগ থেকে নির্দেশ দেয়া হয় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে। তিনি ওই সময়ের আগেই দেশে চলে আসেন। আইনমন্ত্রী আরও বলেন, খালেদা জিয়ার ব্যাপারে আইনে কোথাও বলা নেই বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেয়ার।
তাকে শর্তযুক্ত মুক্তি দেয়া হয়। তাতে বলা আছে, বিদেশে যেতে পারবেন না। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেয়ার বিষয়টি রাজনৈতিক নয়; এটি আইনি বিষয়।
চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার আইনি কোনো সুযোগ আছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার ক্ষমতা প্রয়োগ করে ফেলেছেন। পুনরায় এ ক্ষমতা প্রয়োগের আর কোনো সুযোগ নেই। রাষ্ট্রপতির কাছে তারা ক্ষমা চাইতে যাবে কিনা সে পরামর্শ আমি দিতে চাই না। তবে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা ছাড়া আর কোনো সুযোগ নেই। রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে হলে খালেদা জিয়াকে দোষ স্বীকার করে আবেদন করতে হবে। রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়া সাংবিধানিক অধিকার। খালেদা জিয়া চাইলে ক্ষমা চেয়ে সাজা মওকুফ করার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করতে পারেন। আইনমন্ত্রী আরও উল্লেখ করেন, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কোনো শর্ত দেয়া হয়নি। তার বিদেশে যাওয়ার সময় কোনো শর্ত ছিল না। তাকে অনুমতি নিতে হয়নি।
‘সরকার চাইলেই খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দিতে পারে’: এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা করানোর অনুমতির বিষয়ে আইনমন্ত্রী আইনের রাজনৈতিক ব্যাখ্যা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি’র আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। বুধবার সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনের নিজ কার্যালয়ে আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ৪০১ (৬) ধারায় স্পষ্টভাবে বলা আছে, সরকার চাইলে সাধারণ বা বিশেষ নির্বাহী আদেশে যেকোনো বন্দির ক্ষেত্রে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আইনের রাজনৈতিক ব্যাখ্যা করেছেন। রাজনৈতিক ব্যাখ্যা এ কারণেই বলবো, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ (১) ধারায় স্পষ্টভাবে দেয়া আছে সরকার চাইলে একজন সাজাপ্রাপ্ত বন্দির সাজা মওকুফ করতে পারে। সাজা কমাতে পারে, সাময়িকভাবে সাজা স্থগিত করতে পারে। শর্তযুক্ত বা শর্তমুক্তভাবে। খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে ওনারা শর্তযুক্ত করে দিয়েছেন। শর্ত তুলে নিলেই খালেদা জিয়া বিদেশে যেতে পারেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কায়সার কামাল বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানো হলে তিনি চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে আসবেন। কারণ অন্য একজন নেত্রী দেশ ছেড়ে গেলেও খালেদা জিয়া কখনো দেশ ছেড়ে যাননি। খালেদা জিয়ার সবকিছু এখন সরকারের নিয়ন্ত্রণে জানিয়ে তিনি বলেন, তিনি চাইলেই এখন একটা কিছু করতে পারেন না। তার সব দায়দায়িত্ব সরকারপ্রধানকেই বহন করতে হবে। রাষ্ট্রপতির কাছে খালেদা জিয়া ক্ষমা চাইবেন কিনা- জবাবে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া তো রাষ্ট্রপতির অর্ডারে বের হননি। এখনো খালেদা জিয়া নির্বাহী আদেশের আন্ডারেই আছেন। শর্তযুক্ত মুক্তিতে আছেন।
আরো পড়ুন : নতুন ছাত্র সংগঠন ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’ ঘোষণার পরই ছাত্রলীগের হামলা