স্টাফ রিপোর্টার : জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় বিদেশ থেকে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের আইনি লড়াই করার সুযোগ নেই বলে দাবি করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন। সোমবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন এ মন্তব্য করেন। বিদেশে থেকে তারেক রহমান ও জোবায়দা রহমান আইনি লড়াই করতে পারবেন কি-না, সে বিষয়ে আদালতের সিদ্ধান্ত জানা যাবে আগামী বৃহস্পতিবার। ওই দিন ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. আছাদুজ্জামানের আদালত এ বিষয়ে আদেশ দেবেন। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এর আগে করোনাকালীন সময়ে দেশের বাইরে থেকে দু’জন আগাম জামিন আবেদন করেছিলেন। তখন আদালত কিন্তু সে দু’জনের আবেদন খারিজই শুধু করেনি, তাদের জরিমানাও করেছিলেন। এছাড়া একজন আইনজীবী এ রকম একটা (সারেন্ডার না করা) মামলা করেছিলেন, হাইকোর্ট কিন্তু একপর্যায়ে ওই আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেছিলেন। অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, আমাদের সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন রায়ে বিভিন্ন সময় এটা পরিষ্কার করে দেয়া হয়েছে যে, পলাতক ব্যক্তির আইনে আশ্রয় লাভের কোনো সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে ওনারা যেহেতু পলাতক (তারেক- জোবায়দা)। ওনারা আদালতে আসেননি।
তাই কোনো ধরনের সাবমিশন রাখার সুযোগ পাবেন না এবং কোনো আইনজীবী আসতে পারেন না।’ তবে এ বিষয়ে বিএনপি’র আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল সাংবাদিকদের বলেন, দেশের ইতিহাসে এরকমও নজির নেই যে মামলার কোনো বেসিস নেই সেই মামলা এখন পর্যন্ত চলমান আছে।
এখানে ফান্ডামেন্টাল পার্ট হলো এই মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দায়ের করা হয়েছিল। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই মামলা এখন পর্যন্ত চলমান। অতএব এই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে চরিতার্থ করার জন্য বর্তমান রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে এই অবৈধ সরকার মামলাটাকে আজ এই পর্যন্ত নিয়ে এসেছে। আগামী ১৩ তারিখে মামলাটি আদেশের জন্য রয়েছে। আদেশের পর আমরা আমাদের প্রতিক্রিয়া জানাবো। তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২ কোটি ৩৩ লাখ টাকার যে অন্যায় অবৈধ মামলা সেই মামলায় উনি কারাগারে ছিলেন না এখনো আছেন। সেই ২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা কিন্তু এখন ব্যাংকে আছে। আমরা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে চাই খালেদা জিয়া একটি টাকাও তছরুপ করেননি। তিনি বলেন, রাজনৈতিক কারণে অনেক কথা বলা যায়। কিন্তু বাস্তবতা কিন্তু ভিন্ন। যেহেতু মামলা চলমান আছে। আদেশের জন্য আছে আমরা অপেক্ষা করবো। উল্লেখ্য, জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় পলাতক তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের পক্ষে আইনজীবীরা মামলা পরিচালনা করতে পারবে কিনা সে বিষয়ে আগামী ১৩ই এপ্রিল আদেশের দিন রেখেছেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামানের আদালত। ৯ই এপ্রিল উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আদেশের দিন ধার্য করেন।
এদিন তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের পক্ষে নিজ খরচে মামলা পরিচালনার অনুমতি চেয়ে আবেদনের শুনানি করেন আইনজীবী মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার। তিনি আদালতে বলেন, সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ন্যায়বিচারের স্বার্থে আমরা এই অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছি। বাংলাদেশ ও ভারতে এ ধরনের অসংখ্য নজির রয়েছে বলে তিনি আদালতে যুক্তি উপস্থাপন করেন। তবে দুদকের পিপি মোশারফ হোসেন কাজল বলেন, তারেক রহমান ও জোবায়দা রহমানকে আইন অনুযায়ী আদালতে এসে মামলা লড়তে হবে। তারা আইনের দৃষ্টিতে পালাতক। পলাতক আসামির পক্ষে আইনজীবীর মামলা পরিচালনার সুযোগ নাই। এই আবেদন কোর্টের সময় নষ্ট করার শামিল উল্লেখ করে তিনি আবেদন না মঞ্জুর করে এ মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি করার জন্য আবেদন করেন। আইনজীবী মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার বলেন, আমরা আবেদনে বলেছি তারেক রহমান এবং ড. জোবায়দা রহমান বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন। তাদের অনুপস্থিতিতে মামলার বিচার কার্য আদালতে চলমান।
সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদে অনুযায়ী আইনের আশ্রয়লাভ এবং আইন অনুযায়ী ও কেবল আইনানুযায়ী ব্যবহার লাভ যে কোনো স্থানে অবস্থানরত প্রত্যেক নাগরিকের এবং সাময়িকভাবে বাংলাদেশে অবস্থানরত অপরাপর ব্যক্তির অবিচ্ছেদ্য অধিকার। আইনানুযায়ী ব্যতীত এমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইবেনা, যাহাতে কোনো ব্যক্তির জীবন স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির হানি ঘটে। মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার আরও বলেন, এ মামলায় ড. জোবায়দা রহমানের ৩৫ লাখ টাকা এফডিআর অবৈধ অর্থ দেখিয়ে দুদক এ মামলা দায়ের করে। অথচ ড. জোবায়দা রহমানের মা ইকবাল মান্দ বানু ৩৫ লাখ টাকা তাকে দিয়েছেন। ইকবাল মান্দ বানু তার আয়কর নথিতে তা প্রদর্শন করেছেন। ড. জোবায়দা রহমান ও তার আয়কর নথিতে এটা দেখিয়েছেন যা দুদক স্বীকার করেছে। তারপরও দুদক অন্যায় ভাবে এই মামলা দায়ের করেছে ড. জোবায়দা রহমানের মা সুপ্রিম কোর্ট থেকে মামলায় খালাস পেয়েছেন।
তিনি অভিযোগ করেন, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এ মামলার মূল কারণ হলো রাজনীতি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ছাড়া আর কিছু না। এ মামলায় ২০২২ সালের ১লা নভেম্বর তারেক রহমান ও জোবায়দার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন আদালত। মামলার বিবরণে জানা যায়, ঘোষিত আয়ের বাইরে চার কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার মালিক হওয়া এবং সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬শে সেপ্টেম্বর রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলা করে দুদক। মামলায় তারেক রহমান, জোবায়দা রহমান ও তারেক রহমানের শাশুড়ি ইকবাল মান্দ বানুকে আসামি করা হয়। এরপর ২০০৮ সালে এই তিনজনের বিরুদ্ধে দাখিল করা হয় অভিযোগপত্র।
আরো পড়ুন : যুক্তরাষ্ট্র চাইলে ক্ষমতা ওল্টাতে পারেন, পাল্টাতে পারেন