বিপর্যস্ত কৃষকের মুখে ‘আমনই’ ফুটালো হাসি

ওকে নিউজ স্পেশাল কৃষি প্রচ্ছদ

সিলেট ব্যুরো : স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সিলেট বিভাগে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যার এ ক্ষতি কিভাবে কাটিয়ে উঠবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন কৃষকেরা। মাথায় দুশ্চিন্তার পাহাড় আর বুকভরা আশা নিয়ে মাঠে নামেন বিপর্যস্ত এসব কৃষক। মনোযোগি হন আমন চাষে। সোনালি আমনই এবার বাঁচিয়েছে কৃষকের স্বপ্ন। অগ্রাহয়ণ মাসে আমনের বাম্পার ফলন দেখে কৃষক-কিষাণীর মুখে আনন্দের হাসি ফুটেছে । বিভাগের চার জেলায়ই আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও আমন উৎপাদন বেশি হবে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

অগ্রহায়ন মাস শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ রয়েছে। এরপর আসবে হিমবাহ নিয়ে পৌষ। পৌষের আগেই সোনালী ধান গোলায় উঠতে চান কিষাণ-কিষাণীরা। তারা মেতে উঠেছেন ফসল তোলা উৎসবে। ইতোমধ্যে আমন ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ উৎসবমুখর পরিবেশে চলছে।
এ বছর সিলেট বিভাগে জুড়েই ছিল প্রাকৃতিক দুর্যোগ। কখনো বন্যা, অতিবৃষ্টি, আবার কখনো বা অনাবৃষ্টি। তবে সব দুর্যোগ অতিক্রম করে প্রত্যাশিতভাবে আমন ধান উঠাতে পেরে সন্তোষ প্রকাশ করেছে কানাইঘাটের ফখরুল আলম। তিনি বলেন, এবারের ধান নিয়ে গরীব কৃষকের বুকে অনেক স্বপ্ন ছিল। কেউ ছেলে-মেয়ে বিয়ে দিবে,বিদেশ পাঠাবে ও পরবর্তী বছরের জন্য সঞ্চয় করবে।

কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় সূত্র জানায়, চার জেলার মধ্যে সবেচেয়ে বেশী আমনের ফলন হয়েছে সিলেট জেলায়। এরপর যথাক্রমে মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। বিভাগের চার জেলায় এ বছর রোপা আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে। আর আবাদ হয়েছে ৪ লাখ ১৫ হাজার ৫৪৬ হেক্টর জমি। এ বছর হাইব্রিড, উফশী ও স্থানীয় জাতের ধান মিলে বিভাগে ১০ লাখ ৭৪ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

এছাড়া বিভাগের চার জেলার মধ্যে শুধু সিলেটে চলতি বছর ১ লাখ ৪০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। আর চাষ করা হয়েছে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৪৭৩ হেক্টর জমি। এবছর চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৯৩০ মেট্রিক টন। তবে তা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

মৌলভীবাজার জেলায় এ বছর আমন চাষাবাদে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ লাখ ১৪ হাজার ৫৫ হেক্টর জমিতে। আর চাষ করা হয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর জমি। চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৯৭ হাজার ৪৬৩ মেট্রিক টন।

হবিগঞ্জ জেলায় এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৮০ হাজার ২১০ হেক্টর জমিতে। আর চাষ করা হয়েছে ৮৮ হাজার ২৫৮ হেক্টর জমি। চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ২০ হাজার ৩৭১ মেট্রিক টন।

সুনামগঞ্জ জেলায় এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৮১ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে। আর চাষ করা হয়েছে ৮২ হাজার ২১৫ হেক্টর জমি। চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৩৬ মেট্রিক টন।

কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেট জেলার উপপরিচালক মোহাম্মদ খয়ের উদ্দিন মোল্লা বলেন, বন্যার পর সিলেটে অনুকূল আবহাওয়া থাকায় আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে জেলার সব ধান কাটা হয়ে যাবে। সিলেট জেলায় এরই মধ্যে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৯৩০ টন থাকলেও আশা করছি এবার তা ছাড়িয়ে যাবে। কৃষকদের সহায়তায় কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের ধান কাটার মেশিন ও বিনামূল্যে উন্নত জাতের বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে।

কৃষি স¤প্রসারন অধিদফতর সুনামগঞ্জের উপ পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান, সুনামগঞ্জ জেলায় মোট কৃষি জমির ৩০ ভাগ জমিতে আমন ধানের চাষ করা হয়েছে। বাকি জমিতে নীচু এলাকায়, সেগুলোতে বোরো চাষ করা হয়ে থাকে। জেলায় ইতোমধ্যে প্রায় ৫৫ শতাংশ জমিত আমন ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। বাকি জমিতে ধান কাটতে আরও ৮-১০ দিন সময়। সুনামগঞ্জে এবছর আমন ধানের ফলন প্রতি হেক্টরে সোয়া ৪ মেট্রিক টন ধান উপাদন হয়েছে- যা বিগত ৩০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে সর্বাধিক।

কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের সিলেট বিভাগীয় অতিরিক্ত পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন খান জানান, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে জেলাতে এবার রোপা আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩ হাজার ৫৬০ হেক্টর জমি। এতে ৪ লাখ ১৫ হাজার ৪৫৬ হেক্টর জমিতে আমন চাষ করা হয়েছে। চলতি বছর হাইব্রিড, উফশী ও স্থানীয় জাতের ধান মিলে বিভাগে ১০ লাখ ৭৪ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। তবে এবার চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এদিকে, আমন ধানের বাম্পান ফলনে কৃষকের মুখে হাসি ফুটলেও ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে কিছুটা চিন্তার ভাঁজ কপালে থেকেই যাচ্ছে। অনেকে আবার ধান কাটার জন্য শ্রমিক সংকটেও ভুগছেন বলে জানিয়েছেন।

সিলেট জৈন্তাপুরের চিকনাগুল এলাকার কৃষক মোবারক মিয়া জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার আমাদের এলাকার সবার জমিতে ফলন ভালো হয়েছে; ধান কাটাও পুরোদোমে চলছে। তবে প্রতি বছরের মতো এবার ধান কাটার শ্রমিক কম, তাই জমির ধান উঠাতেও দেরি হচ্ছে। তবে মেশিন দিয়েও চলছে ধান কাটা।

আরো পড়ুন: ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ লেখা গুলির চালানের গন্তব্য কোথায় ছিল ?

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *