চলমান যুগপৎ আন্দোলন এক দফার আন্দোলনে রূপ দিতে চাইছে বিরোধী দলগুলো। এ লক্ষ্যে অভ্যন্তরীণ আলোচনা চলছে। কিছু কিছু বিষয়ে মতবিরোধ থাকায় বিরোধীদের আন্দোলনের যৌথ ঘোষণা আটকে আছে। এই বিরোধ মেটাতে ধারাবাহিক বৈঠকও হচ্ছে দলগুলোর মধ্যে। সর্বশেষ গতকাল ১২ দলীয় জোট, এলডিপি ও লেবার পার্টির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপি নেতারা।
গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের সঙ্গেও বৈঠকের কথা রয়েছে। বিভিন্ন সূত্রের দাবি এসব বৈঠকে চূড়ান্ত আন্দোলনের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। যৌথ ঘোষণার পাশাপাশি একমঞ্চ থেকে আন্দোলন পরিচালনার বিষয়ও আসছে। সূত্রের দাবি আসছে ঈদুল আজহার পর বিরোধী দলগুলো একমঞ্চে উঠতে পারে। ঘোষণা দেয়া হতে পারে দফাভিত্তিক যৌথ বিবৃতি।
নেতারা বলছেন, ঈদের পর পরই সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন শুরু করতে চান তারা। এতদিন যুগপৎভাবে নানা কর্মসূচি পালন করলেও ঈদের পর সব দল একমঞ্চে উঠে জোরালো আন্দোলনের ঘোষণা দিতে চান তারা।
যদিও এখন পর্যন্ত বিএনপি’র পক্ষ থেকে এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি সমমনা দলগুলোকে। বিএনপি’র শীর্ষ নেতারা বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করছেন। তারা মনে করছেন আগে থেকে ঘোষণা দিয়ে আন্দোলন করা যাবে না। ত্বরিত ঘোষণার পর আন্দোলন জোরদার করতে হবে। এজন্য এখন নিজেদের মধ্যকার মতবিরোধ মিটিয়ে আন্দোলনের প্রস্তুতি জোরদারে কাজ করা হচ্ছে।
কয়েকদিন ধরে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। সরকারের পদত্যাগ ও আন্দোলনের রূপরেখা নিয়ে একমত হয়েছে কয়েকটি দল ও জোট। এ পর্যন্ত ৩১ দফার ভিত্তিতে আন্দোলন করার বিষয়ে দলগুলো একমত হয়েছে। এই দফাগুলোর কিছু ক্ষেত্রে সংশোধন, সংযোজন-বিয়োজনের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। এটি চূড়ান্ত হলে সবগুলো দলের একসঙ্গে বসে যৌথ কর্মসূচি দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
গতকাল ১২ দলীয় জোট, এলডিপি ও লেবার পার্টিসহ কয়েকটি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। সেখানে সরকারের পদত্যাগ ও আন্দোলনের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা করেন নেতারা। বৈঠকে এক দফার আন্দোলনের সময়সীমা নিয়ে আলোচনা করেছেন তারা। ঈদের পর পরই চূড়ান্ত আন্দোলনে নামার পক্ষে মত দেন নেতারা। একই সঙ্গে একমঞ্চ থেকে কর্মসূচি দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে অংশ নেয়া ১২ দলীয় জোটের একজন নেতা বলেন, একই লক্ষ্যে আন্দোলন করছে সরকারবিরোধী দলগুলো।
নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই নির্বাচন চায় সবাই। বর্তমান সরকার বিরোধী দলগুলোর দাবি-দাওয়া মানছে না। আন্দোলনের মধ্য দিয়েই সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করা হবে। এজন্য সবাই একমঞ্চ থেকেই আন্দোলনকে প্রাধান্য দিচ্ছে। ঈদের পরেই আন্দোলনে থাকা দলগুলো একটি বৈঠক ডেকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আমরা বিগত সময়ে ঈদের পরে আন্দোলন বলে আসলেও বাস্তবে আন্দোলন সফল করতে পারিনি। তবে এখন আর বেশি সময় নেই। সামনে নির্বাচন। এখনই আন্দোলন জোরদার করতে হবে। এখন যে কয়টি দল আন্দোলন করছে, ঈদের পর আরও কয়েকটি দল বিএনপি’র সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দিবে। সূত্রের দাবি রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বেশ কয়েকটি দল এখনো কোনো জোটে যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি। এই দলগুলোর সঙ্গেও বিএনপি এবং সমমনা দলের যোগাযোগ হচ্ছে। এক দফার আন্দোলনে এসব দলও সক্রিয় অংশ নিতে পারে।
বিএনপি’র নীতিনির্ধারণী ফোরামের একজন সদস্য বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে অংশ নিবে না। এজন্য নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার দরকার। এই সরকার মানে মানে বিরোধী দলগুলোর দাবি মানবে না। নিজে থেকে ক্ষমতা ছাড়বে না। আমাদেরকেই আন্দোলনের মধ্যদিয়ে তাদেরকে বিদায় করতে হবে। এজন্য এক দফার আন্দোলন হবে। তবে কবে? কীভাবে হবে? তা অপেক্ষার পালা।
গণতন্ত্র মঞ্চের একজন দায়িত্বশীল নেতা মানবজমিনকে বলেন, আমরা চাইছি একমঞ্চ থেকে আন্দোলনের ঘোষণা দিতে। কিছু বিষয়ে সমস্যা আছে। এটা ঠিক হয়ে যাবে। সামনে ঈদ আসছে। এর আগেই আমরা প্রস্তুতি শেষ করতে চাই। ঈদের পর এক দফার আন্দোলনের চূড়ান্ত ঘোষণা আসবে বলে আমরা মনে করি।
আরো পড়ুন : স্থিতিশীল অবস্থা খালেদা জিয়া