কুমিল্লা প্রতিনিধি: রেললাইনে এখনো পড়ে আছে স্কুলব্যাগ। তার পাশেই টিফিন বক্স ও স্যান্ডেল। স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে মানুষ। একটু আগেই সেখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে মীম, লিমা ও তাসফিয়ার মৃতদেহ।
ওদের এই ব্যাগ নিয়ে আর স্কুলে যাওয়া হবে না। হবে না কখনো একসঙ্গে তিন বান্ধবীর গল্পে মেতে ওঠা।
কুমিল্লার সদর দক্ষিণে বুধবার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের বিজয়পুর লেভেলক্রসিংয়ের পাশে ট্রেনে কাটা পড়ে তিন স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন লাকসাম রেলওয়ে থানার ওসি মো. জসিম উদ্দিন খন্দকার।
নিহতরা হলো উপজেলার বারপাড়া ইউনিয়নেরর দুর্গাপুর গ্রামের ব্যাপারীবাড়ির রিপন মিয়ার মেয়ে রিমা আক্তার লিমা (১১), একই বাড়ির বুলু মিয়ার মেয়ে তাসফিয়া আক্তার (১১) ও মামুন মিয়ার মেয়ে মীম আক্তার (১১)। নিহতরা সকলেই বান্ধবী। তারা বিজয়পুর সরকারি প্রামথিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। বাড়ি থেকে স্কুলে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনার শিকার হয় তারা।
ঘটনার প্রতক্ষ্যদর্শী হাজী মো. সেলিম বলেন, একই সময়ে দুই ট্রেন দুই লাইন দিয়ে পার হচ্ছিল। একটি ছিল চট্টগ্রাম থেকে ময়মনসিংহগামী বিজয় এক্সপ্রেস। অন্যটি ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতী এক্সপ্রেস ট্রেন। তারা মূলত মহানগর প্রভাতী এক্সপ্রেস ট্রেনে কাটা পড়ে।
তিনি বলেন, দুই দিক থেকে দুটি ট্রেন আসায় তারা বুঝতে পারেনি পরিস্থিতি। তারা শুধু বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনটি দেখতে পেয়েছিল। এ জন্য তারা আরেক লাইন দিয়ে হাঁটার সময় পেছন থেকে আসা মহানগর প্রভাতী এক্সপ্রেসে কাটা পড়ে।
বিজয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাদেকুর রহমান বলেন, ‘বুধবার দুপুর ১২টায় স্কুলে আসার সময় আমাদের তিন ছাত্রী প্রাণ হারায়। এ ঘটনায় পুরো বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে শোকের ছাড়া নেমে এসেছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে ঘটনাস্থলে একটি রেলওয়ে ওভার পাস নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছি। ওই পথ দিয়েই শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসা-যাওয়া করে। ‘
লাকসাম রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জসিম উদ্দিন খন্দকার বলেন, ‘নিহতদের মরদেহ তাদের স্বজনরা নিয়ে গেছে। ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতা কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। বিজয়পুর লেভেলক্রসিংটি ওই মহাসড়কের ওপর অবস্থিত। পরে জেলা পুলিশ ও জেলা প্রশাসনসহ আমরা এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। ‘
বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান, জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এ সময় তিন পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, তিন শিশুর পরিবারই নিম্ন আয়ের। আমরা এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করছি। এ ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। কমিটির প্রধান থাকবেন একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক।
নিহত মীম আক্তারের মা রূপা আক্তার বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘আমার স্বামী মানসিক ভারসাম্যহীন। তার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমার এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে মীম বড়। আমি মানুষের বাড়িতে কাজ করে তাকে পড়াশোনা করাচ্ছিলাম। আমার সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। এখন আমি কী নিয়ে বাঁচব?’