ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি: ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুমন দত্ত সাত তলা বাড়ির মালিক। আর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. আবদুল কুদ্দুস ৩০ লাখ টাকায় পুরাতন ভেকু কিনে রং মাখিয়ে বিল উঠিয়েছেন ৭০ লাখ টাকা। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অসদাচরণ ও স্বেচ্ছাচারিতার আরও নানা অভিযোগ দেয়া হয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবের কাছে। গত ১১ই সেপ্টেম্বর পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফারুক মিয়া এই অভিযোগ দেন।
এতে বলা হয়, ওই দুই কর্মকর্তার খারাপ আচরণ, অত্যাচার ও নির্যাতনের কারণে পৌর নাগরিকরা শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার মধ্যে বসবাস করছেন। তাদের হাতে নাজেহাল হচ্ছেন গরিব, মেহেনতি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। দুর্ব্যবহার থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না পৌর কাউন্সিলরও। পৌর পরিষদের ২-৪ জন কাউন্সিলর, ২-১ জন কর্মকর্তা এবং গুটিকয়েকজন ঠিকাদারকে নিয়ে পৌরসভায় একক আধিপত্য এবং দুর্নীতির অভয়ারণ্য তৈরি করেছেন ওই দুই কর্মকর্তা। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এখানে যোগদানের পরই উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুমন দত্তের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে উঠে।
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল কুদ্দুসের বিরুদ্ধে করা অভিযোগগুলোর অন্যতম হচ্ছে ২টি পুরাতন ভেকু কিনে রং লাগিয়ে নতুন ভেকুর বিল উঠিয়ে নিয়েছেন তিনি। ৩০ লাখ টাকায় পুরাতন ভেকু দুটি কিনে ঠিকাদারের মাধ্যমে ৭০ লাখ টাকা বিল পরিশোধ দেখিয়েছেন। এসব ভেকু একমাসও ব্যবহার করা যায়নি।
শহরের রাস্তা জরাজীর্ণ অবস্থায় ফেলে রেখে তিনি অপরিকল্পিকভাবে শহরের কুমারশীল মোড়ে প্রায় ২৫ লাখ টাকায় ঘড়ি স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করেন। ঘড়ি স্থাপনের স্থান চওড়া না হওয়ায় এতে জনদুর্ভোগ এবং পৌরসভা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে অভিযোগে বলা হয়। এবছর পবিত্র ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুরহাট প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তার একক ক্ষমতাবলে একক দরপত্র দরের মাধ্যমে উৎকোচ নিয়ে বরাদ্দ দেন।
কথায় কথায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শোকজ ও চাকরি খাওয়ার ভয় দেখিয়ে কর্ম পরিবেশ নষ্ট করছেন বলেও অভিযোগ করা হয় তার বিরুদ্ধে। তিনি তার ব্যক্তিগত গাড়ি পৌরসভার ড্রাইভারকে দিয়ে চালিয়ে বিল উত্তোলন করছেন। কোনো টেন্ডার ছাড়া রিকশার ড্রাইভারদের কাছে ৫০০ টাকা করে এপ্রোন বিক্রি করেন। যেটির মূল্য ১৫০ টাকার বেশি নয়। মশার ওষুধও টেন্ডারে ক্রয় না করে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজেই ক্রয় করেন। পরে ঠিকাদারের মাধ্যমে বিল করে লাভের টাকা আত্মসাৎ করেন। পৌর পরিষদের ভ্রমণ এবং অনুষ্ঠান করে এ থেকেও বিশাল অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করছেন। তিনি নারীঘটিত কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত বলেও অভিযোগ করা হয়।
উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুমন দত্ত শহরের পাইকপাড়া গগন সাহা রোডে মায়া-কাপ্তান টাওয়ার নামে একটি ৭ তলা ভবন নির্মাণ করেন। যদিও এটি তার শাশুড়ির বলে প্রচার করেন। বাস্তবতা হচ্ছে তার শাশুড়ি সদর সাব- রেজিস্ট্রার অফিসে নকলনবিশ হিসেবে চাকরি করতেন। এ ছাড়া সুমন দত্ত নিজে ডেভেলপার ব্যবসায়ী। অসংখ্য ভবন নির্মাণ করেছেন তিনি ডেভেলপার হিসেবে। বর্তমানে পাইকপাড়া কুসুম রোডে ডাক্তার আবদুল খালেকের বাড়ির পাশে একটি ৬ তলা ভবন নির্মাণ করছেন। তার এই কাজে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পার্টনার বলে আলোচনা রয়েছে। সুমন দত্ত পৌরসভার কর্মচারী এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় নেতা দাবি করেন এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তোয়াক্কা করেন না বলে অভিযোগ করা হয়।
তবে উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুমন দত্ত এসব অভিযোগ তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার ছাড়া কিছু নয় বলে দাবি করেন। আর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল কুদ্দুস বলেছেন-আইনের বাইরে কোনো কাজ করিনি। সরকারি নিয়ম মেনেই সব করেছি। কে কি অভিযোগ দিয়েছে তা জানি না। পৌরসভার মেয়র নায়ার কবির দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দেয়ার বিষয়টি তার জানা নেই বলে জানান।
আরো পড়ুন : পাসপোর্ট-বোর্ডিং পাস ছাড়া বিমানে শিশু ওঠার ঘটনায় দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন