ভূমিকম্পের পর প্রচণ্ড ঠান্ডা আর ক্ষুধা এখন তুরস্কের নতুন বিপদ

আন্তর্জাতিক জনদুর্ভোগ প্রচ্ছদ লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য কথা হ্যালোআড্ডা

৬৪ বছরের বৃদ্ধা। মেলক নামের এই নারীর বাড়ি তুরস্কের আন্তাকিয়ায়। ভূমিকম্প থেকে ভাগ্যের জোরে বেঁচে গেলেও তার কাছে নতুন বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রচণ্ড ঠান্ডা আর ক্ষুধা। কেবল মেলকই নয়, এরকম আরো অনেকেই একই যন্ত্রণা ভোগ করছেন। ভয়াবহ ভূমিকম্পে তুরস্কে ও সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়েছে। এই সংখ্যা ২০ হাজারে পৌঁছাতে পারে। জীবিতদের উদ্ধারে হিমশিম খাচ্ছে উদ্ধারকারীরা। নিজের বাড়িটি মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়ায় মাথাগোঁজার আশ্রয়টুকুও অনেকে খুঁজে পাচ্ছেন না। একই চিত্র সিরিয়ায়। অনেককে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করতে দেখা গেছে। তুরস্কে এক গোলরক্ষকসহ চার প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়ের মৃত্যু হয়েছে ভূমিকম্পে।  আরো পড়ুন : তুরস্কে ভূমিকম্পের ৫৫ ঘণ্টা পর উদ্ধার মায়ের দুধে বেঁচে থাকা ১৮ মাসের মাশাল

তুরস্ক ও সিরিয়ার কোথাও তাপমাত্রা নেমে গেছে ৩ ডিগ্রিতে, কোথাও আবার হিমাঙ্কের নিচে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে তুষারপাত আর বৃষ্টি। ফলে ভূমিকম্পের হাত থেকে বেঁচেও স্বস্তিতে নেই তুরস্কের অনেক মানুষ। হাড় হিম করা ঠান্ডায় মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও জুটছে না। ফলে বাধ্য হয়েই খোলা আকাশের নিচে কাটাতে হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধাসহ সবাইকে। আরো পড়ুন : চট্টগ্রাম নগরীর ১ লাখ ৪২ হাজার ভবনই ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে তুরস্কের প্রশাসন জানিয়েছে, তুষারপাত আর বৃষ্টির মধ্যে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। এমন অনেক এলাকা আছে যেখানে গতকাল পর্যন্ত উদ্ধারকর্মীরা পৌঁছাতেই পারছেন না। যায়নি কোনো ত্রাণও। ফলে বিভিন্ন এলাকায় ক্ষোভ বাড়ছে। বিক্ষোভও করতে দেখা গেছে অনেককে। উদ্ধারকাজে গাফিলতি হচ্ছে বলে অনেকের অভিযোগ। এর মধ্যেই গতকাল ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। আরো পড়ুন : সিরিয়ায় ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে জীবিত নবজাতক উদ্ধার 

বাসিন্দাদের অভিযোগ, ভূমিকম্পে বেঁচে গিয়েও প্রাণ হারানোর শঙ্কায় ভুগছেন তারা। কারণ ঠান্ডার মধ্যে খাবারটুকুও জুটছে না অনেকের। ক্ষুধার জ্বালা তাদেরকে মৃত্যুমুখে ফেলে দিচ্ছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, চরম ঠান্ডায় খোলা আকাশের নিচে যারা দিন কাটাচ্ছেন, তাদের হাইপোথার্মিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে। এতে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত কমে যাবে। এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। আরো পড়ুন : ভয় কাটেনি, তবে আল্লাহর রহমত যে আমরা এখনো বেঁচে আছি

আন্তাকিয়ার বাসিন্দা মেলক বলেন, ‘শহরে উদ্ধারকারীদের দেখা নেই। কোনো শিবির তৈরি করা হয়নি যেখানে গিয়ে আশ্রয় নেব। খাবার, জল কিছুই পাচ্ছি না।’ তার কথায়, ‘ভূমিকম্প থেকে তো বেঁচে গিয়েছি ভাগ্যের জোরে। কিন্তু এখন ঠান্ডা আর খিদের জ্বালায় মারা যাব।’ বহু জায়গায় উদ্ধারকাজ না হওয়ায় ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা সীমান্তলাগোয়া এলাকাগুলোর।  আরো পড়ুন : তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ছাড়াল ৬ হাজার ৩০০ কাহরামানমারাস শহরের বাসিন্দা আলি সাগিরোগলু বলেন, ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে রয়েছে আমার ভাই, ভাইপো। তাদেরকে কীভাবে বাঁচাব! কোনো উদ্ধারকারী নেই। প্রশাসনের কোনো লোক নেই। কোথায় যাব, কী করব।’ গত সোমবার স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয় তুরস্ক এবং সিরিয়ায়। কম্পনের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৮। সেই কম্পনে যে ধ্বংসলীলা চলেছে তাতে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলছে।

আরো পড়ুন : তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্পের ধ্বংসলীলার প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান- বিবিসি

গোলরক্ষক ও চার প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়ের মৃত্যু

ক্রিস্টিয়ান আতসুকে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল। তবে তুরস্কের গোলরক্ষক আহমেত ইউপ তুরকাসলানের বেলায় গল্পটা ভিন্ন। তুরস্কে ভয়াবহ ভূমিকম্পে প্রাণ হারাতে হয়েছে এই গোলরক্ষককে। ভূমিকম্প আঘাত হানার পর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন তুরস্কের দ্বিতীয় বিভাগের দল ইয়েনি মালাতইয়াসপরে খেলা এই গোলরক্ষক। পরে ধ্বংসস্তূপ থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তার মৃত্যুর বিষয়টি ক্লাবের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। তুরস্ক-সিরিয়ার ভয়াবহ ভূমিকম্পে অন্তত চার প্রতিবন্ধী খেলোয়াড় মারা গেছে। এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে বিভিন্ন খেলার অর্ধশতাধিক খেলোয়াড়। তবে দীর্ঘসময় নিখোঁজ থাকা সাবেক চেলসি ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ান আতসুকে উদ্ধার করা হয়েছে। যদিও তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। —বিবিসি, ডেইলি মেইল ও সিএনএন

আরো পড়ুন : দ্রুত মানবিক সহায়তা তুরস্কের উদ্দেশ্যে সি-১৩০জে পরিবহন বিমান

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *