কাওছার আহমদ, সিলেট: ভূমি বৈচিত্র্য ও প্রবাসীদের টার্গেট করেই সিলেট বিভাগকে বেছে নেয় জঙ্গিরা। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর মতে, সিলেটে রয়েছে দুর্গম পাহাড়ি এলাকা, সীমান্তের সুযোগ গ্রহণ, প্রবাসীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ, প্রবাসীদের বাড়ি ভাড়ার সুযোগ, সিলেটের মানুষ ধর্মপরায়ণ সহ নানা কারণে জঙ্গিরা সিলেটকে নিরাপদ আস্থানা ও প্রশিক্ষণস্থল হিসেবে টার্গেট করে।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় ১২ আগস্ট ২৭ জঙ্গিকে গ্রেফতারের পর বিষয়টি সামনে আসে। এর আগে সিলেটের বেশ কয়েকটি স্থান থেকে জঙ্গি গ্রেফতার করা হয়েছিল। নগরীর শাপলাবাগের সূর্যদীঘল বাড়ি থেকে শায়খ আবদুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। এ ছাড়া দক্ষিণ সুরমার আতিয়া মহল, মৌলভীবাজারের নাসিরনগর ও বড়হাট্টায় জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালানো হয়েছিল।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) কমিশনার মো. ইলিয়াছ শরীফ oknews24bd.com কে বলেন, ‘ভূমি বৈচিত্র্যের কারণে জঙ্গিরা এই অঞ্চলে আত্মগোপনের চেষ্টা করে। এছাড়া প্রবাসীদের বাড়ি সহজে ভাড়া নিয়ে আস্থানা গড়ে তুলে। বাসার মালিকরা ভাড়া দেওয়ার সময় আমাদেরকে জানালে ভেরিফাই করে থাকি। এসএমপির কাউন্টার টেররিজম ও সাইবার ইউনিট রয়েছে। এ দুই ইউনিটের মাধ্যমে জঙ্গি বিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এ অঞ্চলে শায়খ রহমান আত্মগোপন করেছিল। আতিয়া মহল ও কুলাউড়ায় জঙ্গিরা আস্থানা গড়ে তুলেছিল। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ তারা ফাঁকি দিতে পারেনি।
তিনি আরও বলেন, উগ্রবাদে জড়ানোর জন্য ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সীরাই বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এ জন্য এই বয়সের কেউ নিখোঁজ হলে আমাদের পক্ষ থেকে বিশেষ গুরুত্বসহকারে অনুসন্ধান চালানো হয়। প্রয়োজনে সিটিটিসি ও এটিইউর সাহায্য নেওয়া হয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র জানায়, গত ১২ আগস্ট মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়নের পূর্ব টাট্টিউলি গ্রামে টিলার ওপরে এক বিচ্ছিন্ন বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ১০ জঙ্গিকে আটক করে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)। রাতভর বাড়িটি ঘিরে রাখার পর সকালে তাদের আটক করা হয়। তাদের সঙ্গে আরও তিন শিশু ছিল। সেখানে সিটিটিসি নতুন জঙ্গি সংগঠনের সন্ধান পায়। ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ নামে সংগঠনটির প্রধানের নামেই জঙ্গিরা সংগঠিত হচ্ছিল। দলের প্রধান ইমাম মাহমুদও আটক হন সিটিটিসির হাতে। এর দুই দিন পর ১৪ আগস্ট ওই এলাকা ছেড়ে পালানোর সময় আরও ১৭ জঙ্গিকে আটক করে পুলিশে দেন স্থানীয় জনতা। তারা সবাই ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’র সদস্য। এর পরদিন ১৫ আগস্ট সিটিটিসি ভারত সীমান্তবর্তী কুলাউড়া উপজেলার দুর্গম কালাপাহাড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে জঙ্গিদের মজুদকৃত বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ও গোলাবারুদ উদ্ধার করে।
সূত্র আরও জানায়, ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’র সদস্যরা দুর্গম কালাপাহাড়ে প্রশিক্ষণ নিত। দলের প্রধান ইমাম মাহমুদ খোঁড়া হওয়ায় তাকে কাঁধে করে বহন করে পাহাড়ে নিয়ে যাওয়া হতো। সেখানে তিনি প্রশিক্ষণ দিতেন। কয়েক মাস আগে জঙ্গি দলের সদস্যরা কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়নের পূর্ব টাট্টিউলি গ্রামের জনবিচ্ছিন্ন ওই স্থান ভাড়া নিয়ে বাড়ি নির্মাণ করেন। এরপর থেকে ওই বাড়ি ও পাহাড়ে জঙ্গি সদস্যরা প্রশিক্ষণ নিত।
এদিকে, চলতি বছরের ৮ মে সিলেট নগরীর বিমানবন্দর থানা এলাকা থেকে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র দাওয়াতি শাখার প্রধান আবদুল্লাহ মায়মুন ওরফে মুমিনসহ চার জঙ্গিকে গ্রেফতার করে র্যাব। ওই চার জঙ্গি এর আগে কয়েকবার গ্রেফতার হয়ে জেলও খাটেন। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে জঙ্গিরা জানিয়েছিল, তারা দলের প্রধানের নির্দেশে সিলেটে অবস্থান করছিল। সিলেটের পাহাড়ি এলাকায় তারা প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা করছিল। তারা প্রবাসীদের প্রভাবিত করে মোটা অঙ্কের তহবিল সংগ্রহ করছিল। ‘আনসার আল ইসলামের’ সঙ্গে তারা ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র যোগাযোগ ও সমন্বয়েরও চেষ্টা চালাচ্ছিল। পলাতক জঙ্গি নেতা মেজর জিয়ার সঙ্গেও গ্রেফতার হওয়া আবদুল্লাহ মায়মুনের যোগাযোগ ও সাক্ষাৎ ছিল।
সিলেট জেলা বারের আইনজীবি অ্যাডভোকেট মামুন রশিদ বলেন, সিলেট বিভাগজুড়ে রয়েছে বিস্তীর্ণ পাহাড়ি এলাকা। প্রশিক্ষণের জন্য এই দুর্গম পাহাড়ি এলাকাকে বেছে নেয় জঙ্গিরা। এখানকার মানুষ ধর্মপরায়ণ ও অতিথিপরায়ণ। এছাড়া প্রবাসীরা ধর্মীয় কাজ ও প্রতিষ্ঠানে বিপুল পরিমাণ অনুদান দিয়ে থাকেন। সেই সুযোগ কাজে লাগায় জঙ্গিরা।
সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, জঙ্গি নির্মূলে বাংলাদেশ পুলিশ যেভাবে কাজ করছে সেটাকে অনুসরণ করে আমাদের তৎপরতা চলছে। এই মুহুর্তে আমাদের হাতে কোন ক্লু নেই তবে মনিটরিং রয়েছে।
কাওছার আহমদ
আরো পড়ুন : এবার সৌদি আরব ও যুক্তরাজ্যের প্রবাসীদের ভোটার করার সিদ্ধান্ত নিল ইসি