স্টাফ রিপোর্টার: প্রধান বিরোধী জোটকে বাইরে রেখে এবার জাতীয় নির্বাচন হচ্ছে। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তাদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগেরই নেতা। এর বাইরে জাতীয় পার্টি সমঝোতায় ২৬ আসনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ছাড় পেয়েছে। ছাড় পেয়েছে ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও জেপির ৬ প্রার্থী। নির্বাচনের আগে কিংস পার্টি বলে পরিচিত তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম সারা দেশে প্রার্থী দিলেও তাদের দু’একজন আছেন আলোচনায়। এ ছাড়া নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার শেষ মুহূর্তে রাতারাতি কারামুক্ত হয়ে আলোচনায় আসা সাবেক বিএনপি নেতা শাহজাহান ওমর নৌকার প্রার্থী হয়ে আলোচনায় আসেন। দীর্ঘদিন বিএনপি’র সঙ্গে সরকারবিরোধী আন্দোলন করে আসা কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন। ভোটের মাঠেও এখন তিনি আলোচিত। এ ছাড়া বিএনপি’র বহিষ্কৃত নেতা মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান এবং শাহ আবু জাফরকে নিয়েও আছে নানা আলোচনা। আখতারুজ্জামান নির্বাচন করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে।
আরো পড়ুন : ঈগল আর ট্রাকের দ্বিমুখী-ত্রিমুখী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি নৌকা
আর নির্বাচনের আগে কিংস পার্টি হিসেবে আলোচনায় আসা বিএনএম’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর লড়ছেন দলীয় নোঙর প্রতীকে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির সমঝোতা হলেও দলটি থেকে বহিষ্কৃত দুই নেতা আছেন ভোটের মাঠে আলোচনায়।
এসব প্রার্থীদের কারও কারও পক্ষে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা প্রকাশ্যে কাজ করছেন। কারও কারও প্রতি আওয়ামী লীগ কেন্দ্র থেকে সমর্থন দিয়েছে এমন আলোচনা আছে। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির বহিষ্কৃত দুই নেতা ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগের সমর্থন পাচ্ছেন বলেও আলোচনা আছে। এসব প্রার্থীদের বিজয়ী করতে নানা পক্ষ গোপনে এবং প্রকাশ্যে কাজ করার অভিযোগ করছে বলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কাছ থেকে অভিযোগ আসছে।
আরো পড়ুন : গাজীপুরে স্বস্তিতে নেই নৌকার প্রার্থীরা, আলোচনায় আখতারউজ্জামান
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া। এ আসনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ছাড় দেয়া হয়েছে। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত রওশন এরশাদপন্থি বলে পরিচিত জিয়াউল হক মৃধা। রেজাউল ইসলাম জিয়াউল হক মৃধার জামাতা। এই আসনে মৃধা আওয়ামী লীগের সমর্থন পাচ্ছেন বলে এলাকায় আলোচনা আছে।
ওদিকে রংপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিয়েছে। এ আসনে জি এম কাদেরের ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। একই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন দলটির সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা। তিনি দল থেকে বহিষ্কৃত এবং রওশন এরশাদপন্থি বলে পরিচিত। এ আসনেও রাঙ্গা সরকারি দলের সমর্থন পাচ্ছেন বলে এলাকায় আলোচনা আছে।
আরো পড়ুন : লাঙল চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন অর্ধশত নৌকাকে
ফরিদপুর-১ আসনে নির্বাচন করছেন বিএনএম চেয়ারম্যান শাহ আবু জাফর। এখানে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান। এ আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীও আছেন। কিন্তু শাহ আবু জাফর নানা পক্ষের সহযোগিতা পাচ্ছেন বলে মাঠে আলোচনা আছে।
ঝালকাঠি-১ আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর। বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে গিয়ে প্রার্থী হওয়ার পর শুরুতে তার পক্ষে নেতাকর্মী না থাকলেও এখন জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
আরো পড়ুন : ১২৬ আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয় হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই ১৭৪ আসনে
কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনে বিএনপি’র দুইবারের সংসদ সদস্য মেজর (অব.) মো. আখতারুজ্জামান রঞ্জন ঘোষণা দিয়েছেন তিনি ঘুমিয়ে থাকলেও পাস করবেন। তাকে নিয়েও নানা আলোচনা এলাকায়। দলীয় প্রার্থী রেখে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা তার পক্ষে কাজ করায় আছে নানা আলোচনা। একইভাবে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া- পেকুয়া) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত জাফর আলমের দুর্গে হানা দিচ্ছেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। এই আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নেই। বর্তমান এমপি স্বতন্ত্র হিসেবে লড়ছেন। সৈয়দ ইবরাহিমকে বিজয়ী করতে আওয়ামী লীগের বড় অংশ মাঠে সক্রিয় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
আরো পড়ুন : স্বতন্ত্র প্রার্থীদের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখছেন নৌকার মাঝিরা
নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে ভোটের মাঠে উত্তাপ ছড়াচ্ছে তৃণমূল বিএনপি’র প্রার্থী এডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার। সিলেট-৬ আসনে শেষ মুহূর্তে নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তৃণমূল বিএনপি চেয়ারপারসন শমসের মবিন চৌধুরীকে এ আসনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা চাপে পড়ে শেষ মুহূর্তে সমর্থন দিচ্ছেন বলে আলোচনা আছে।
ঘরে ঘুমিয়ে থাকলেও পাস করার ঘোষণা আখতারের
স্টাফ রিপোর্টার কিশোরগঞ্জ থেকে জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনে বিএনপি’র ২ বারের সংসদ সদস্য মেজর (অব.) মো. আখতারুজ্জামান রঞ্জন (ট্রাক) কে সমর্থন দিয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত বর্তমান সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পর আবদুল কাহার আকন্দ সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদের বাসভবনে গিয়েছিলেন। তখন এমপি নূর মোহাম্মদ তার সমর্থক নেতাকর্মীদের নৌকার পক্ষে কাজ করার নির্দেশনা দেয়ার পাশাপাশি আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবদুল কাহার আকন্দকে সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু গত ২৪শে ডিসেম্বর রাতে কটিয়াদী উপজেলার চান্দপুর ইউনিয়নের মীরেরপাড়া গ্রামের নিজ বাসভবনে সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ তার কর্মী-সমর্থকদের মেজর (অব.) আখতারের ট্রাক প্রতীকের জন্য নির্বাচন করার নির্দেশনা দেন। এ সময় মেজর (অব.) মো. আখতারুজ্জামান রঞ্জন উপস্থিত ছিলেন। সমর্থনের বিষয়টি নিশ্চিত করে এমপি নূর মোহাম্মদ জানিয়েছেন, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী মেজর আখতার বেটার, এ কারণেই তাকে সমর্থন দিয়েছি। অন্যদিকে এ আসনের আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট মো. সোহ্রাব উদ্দিন অভিযোগ করেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি’র সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) মো. আখতারুজ্জামান রঞ্জনের পক্ষে কাজ করার জন্য নানাভাবে তার নেতাকর্মী, সমর্থক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এরকম পরিস্থিতিতে নির্বাচনী মাঠে নতুন মেরূকরণ তৈরি হয়। শুরুতে প্রায় একা নির্বাচনী প্রচারণায় নামলেও এখন এমপি সমর্থক নেতাকর্মী, আওয়ামী লীগের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতাকর্মী এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের প্রচারণায় পাশে পাচ্ছেন মেজর আখতার।
আরো পড়ুন : জমজমাট নির্বাচনি প্রচারনা, স্বতন্ত্র ঠেকাতে মরিয়া নৌকার প্রার্থীরা
এ আসনে ২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ মোট ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কাহার আকন্দ (নৌকা), দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি’র সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) মো. আখতারুজ্জামান রঞ্জন (ট্রাক) ও আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট মো. সোহ্রাব উদ্দিন (ঈগল), গণতন্ত্রী পার্টির প্রার্থী মো. আশরাফ আলী (কবুতর), এনপিপি প্রার্থী আলেয়া (আম), গণফ্রন্ট প্রার্থী মীর তৈয়ব মো. রেজাউল কবির (মাছ) এবং বিএনএফ প্রার্থী মো. বিল্লাল হোসেন (টেলিভিশন)।
আরো পড়ুন : হেভিওয়েট প্রার্থীরা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি থাকলেও হাড্ডাহাড্ডি ১২৬ আসনে
জাফর ঠেকাতে একাট্টা আওয়ামী লীগ, ইবরাহিমের পক্ষে বাড়ছে জনসমর্থন
স্টাফ রিপোর্টার কক্সবাজার থেকে জানান, কক্সবাজার-১ (চকরিয়া- পকুয়া) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত জাফর আলমের দুর্গে হানা দিচ্ছেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। যতই দিন যাচ্ছে ততই ইবরাহিমের পক্ষে সমর্থন বাড়ছে। ইবরাহিমের পক্ষে একাট্টা বিভিন্ন সময়ে জাফর আলমের হাতে নিগৃহীত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশ। স্থানীয় নেতাদের পাশাপাশি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে শীর্ষ নেতারাও ইবরাহিমের পক্ষে গণসংযোগে অংশ নিয়েছেন। ইতিপূর্বে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে জাফর আলমকে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। সব মিলিয়ে চরম বেকায়দায় আছে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ও ট্রাক মার্কার স্বতন্ত্র প্রার্থী জাফর আলম। জাফর আলমের অনুসারী ও সমর্থকরা জানান, কল্যাণ পার্টির প্রার্থীর পক্ষে তাদের নানামুখী চাপ ও ভয়ভীতি প্রয়োগ করা হচ্ছে।
২০১৮ সালে নির্বাচিত জাফর আলম এবার মনোনয়ন বঞ্চিত হন। তার পরিবর্তে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পান কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দীন আহমদ। তবে তার প্রার্থিতা ঋণখেলাপির দায়ে বাতিল হয়।
সালাহউদ্দীন আহমদও কল্যাণ পার্টির প্রার্থী ইবরাহিমের পক্ষে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন। বুধবার বিকালে চকরিয়া মহিলা কলেজের হলরুমে সালাহউদ্দীন আহমদ চকরিয়া ও পেকুয়ার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে মতবিনিময় সভা ডেকে কল্যাণ পার্টির প্রার্থী সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের হাতঘড়ি মার্কার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান।
সভায় সালাহউদ্দীন আহমদ বলেন,‘ প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ ইবরাহিমের পক্ষে নির্বাচন করতে, এ জন্য সবাই তার পক্ষে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়যুক্ত করতে হবে। এতেই চকরিয়া ও পেকুয়ার মানুষ সন্ত্রাসী ও ডাকাতদের কবল থেকে মুক্ত হতে পারবে।’
এদিকে চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলা, চকরিয়া পৌরসভা এবং মাতামুহুরী সাংগঠনিক থানা আওয়ামী লীগের পদবিধারী নেতারা জাফর আলমের পক্ষে এখনো নির্বাচনী মাঠে কাজ করছেন। দুই উপজেলার ইউপি চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদের সদস্যসহ ১৭ জন জনপ্রতিনিধি গত মঙ্গলবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।
অপরদিকে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির প্রার্থী সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম সুষ্ঠু নির্বাচনে শঙ্কা প্রকাশ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর বুধবার লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এতে তিনি বলেন,‘গত ৫ বছরে সংসদ সদস্য জাফর আলম চকরিয়া ও পেকুয়ায় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের অভয়াশ্রমে পরিণত করেছেন। সন্ত্রাসীদের রাজনৈতিক পদে বসিয়েছেন ও জনপ্রতিনিধি বানিয়েছেন। তার মদদপুষ্ট জনপ্রতিনিধি ও সন্ত্রাসীরা কল্যাণ পার্টির কর্মী-সমর্থকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হুমকি দিচ্ছে। এসব অস্ত্রধারী চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হবে।
কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘চকরিয়া ও পেকুয়ায় শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে তিনি প্রার্থী হয়েছেন। এতে সাধারণ মানুষ তাকে গ্রহণ করছেন। নৌকার প্রার্থী না থাকায় তার জয় সুনিশ্চিত বলে তিনি মনে করেন।
আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য জাফর আলম বলেন, ‘বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের পক্ষে কাজ করার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে জনপ্রতিনিধি ও দলীয় নেতাকর্মীদের চাপ প্রায়োগ করা হচ্ছে। এ অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
বস্ত্রমন্ত্রীর দুর্গে আঘাত হানতে মরিয়া তৈমুর
স্টাফ রিপোর্টার, রূপগঞ্জ থেকে জানান, ঢাকার অদূরে রূপগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে ভোটের মাঠে উত্তাপ ছড়াচ্ছে তৃণমূল বিএনপি। আসনটিতে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজীর বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন আরও ৮ জন। তবে এখানে ত্রিমুখি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এদের মধ্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তারই দলের নেতা শাহজাহান ভূঁইয়া। একই দলের দুই বিভাজন কাজে লাগিয়ে ছক্কা হাকাতে চান তৃণমূল বিএনপি’র মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার।
গণমাধ্যমের কল্যাণে দেশব্যাপীও আলোচনায় আছেন তৃণমূল বিএনপি’র এই প্রার্থী। জেলার পাঁচটি সংসদীয় আসনের মধ্যে এবারের নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত আছেন। তবে ভোটের মাঠে সবচেয়ে বেশি সরব গোলাম দস্তগীর গাজী, তৈমুর আলম খন্দকার ও শাহজাহান ভূঁইয়া।
তারা প্রতিদিন সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগের মধ্যদিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। গোলাম দস্তগীর গাজী এ আসনটিতে টানা তিনবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য। তিনি সরকারের বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর দায়িত্বেও আছেন।
সফল ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ দস্তগীরের সামনে নির্বাচনী মাঠ এবার সহজ নয়। মাঠের সমীকরণ বলছে, গোলাম দস্তগীর গাজী স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হলেও তার প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার ও শাহজাহান ভূঁইয়া নির্বাচনে শক্ত অবস্থানে আছেন। প্রচারের শুরু থেকেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করে নির্বাচনী মাঠ গরম রেখেছেন তৈমুুর আলম।
স্থানীয় ভোটারদের অনেকের দাবি পৈতৃক নিবাস রূপগঞ্জে হলেও তৈমুর আলম সবসময় শহরকেন্দ্রিক রাজনীতিতে ব্যস্ত ছিলেন।
বিএনপি থেকে বহিষ্কার হওয়ার পর দলটির নেতাদের সঙ্গেও তার তেমন সখ্য নেই। তার প্রচারে বিএনপি’র কোনো নেতাকে দেখা যায়নি। তাছাড়া তার নতুন দল তৃণমূল বিএনপি’রও সাংগঠনিক ভিত্তি নেই। তবে গত কয়েকদিনের প্রচারে ভোটারদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন বলে দাবি এই প্রার্থীর।আসনটিতে নৌকার প্রার্থীর ব্যাপক জনপ্রিয়তা আছে। তিনিই বিজয়ী হবেন। তবে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী শাহজাহান ভূঁইয়ার কেতলি প্রতীক।
শনিবার সকালে তৈমুর আলম বলেন, যারা বলেন আমি জেলাভিত্তিক রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলাম সেটা তাদের ভুল তথ্য, আমার পৈতৃক নিবাস রূপগঞ্জে। এখানে বিএনপি থেকে ২ বার প্রার্থী হয়েছি আমি। এই এলাকার স্কুল, মাদ্রাসা, কবরস্থানে আমাদের পারিবারিকভাবে দান করা জমিতে নির্মিত। রূপগঞ্জে বৈধ গ্যাস এনে দিয়েছি আমি। বিআরটিসি’র চেয়ারম্যান থাকাবস্থায় রূপগঞ্জের ১ হাজার মানুষকে চাকরি দিয়ে আমি ২৬ মাস জেল খেটেছি। এখানকার ভূমিদস্যুতা নিয়ে আন্দোলন করা একমাত্র ব্যক্তি আমি। রূপগঞ্জের মাটি ও মানুষের সঙ্গে আমার রক্তের আত্মীয়তা। আমাকে প্রলোভন দেয়া হয়েছে, নির্বাচন থেকে সড়ে আসার জন্য যেকোনো কিছুর বিনিময়ে। আমি বলেছি, জীবনের বিনিময়ে হলেও আমি যেটার কথা দিয়েছি তার বাইরে যাবো না।
অবাধ সুষ্ঠু ও প্রভাবমুক্ত নির্বাচন হলে আমি এখান থেকে বিজয়ী হবো। আর নির্বাচন যদি ১৪ ও ১৮ এর ধাপে হয় তাহলে সরকার সাংবিধানিক সংকটে পড়বে। শেখ হাসিনা কথা দিয়েছেন নিরপেক্ষ নির্বাচনের। তার কথার ওপর আস্থা রেখেই তৃণমূল বিএনপি নির্বাচনে এসেছে। এখন যদি উনি কথা না রাখতে না পারেন। সেক্ষেত্রে তৃণমূল বিএনপিও বিকল্প চিন্তা করবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে ‘হালাল’ মদের ব্যবসা, কালো টাকার শোরগোল, দুধের ফেরিওয়ালা
স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে জানান, মদ-মাদক, কালো টাকা, দুধের ফেরিওয়ালা, নিরাপদ ও শান্তির শহর-এসবেই সরব ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের ভোটের মাঠ।
একজন বলছেন মদের ব্যবসা হালাল। টাকাও সাদা। আরেকজন দুধের ফেরিওয়ালা। সোচ্চার মাদকের বিরুদ্ধে। ‘মাদক না দুধ’ কিনবেন, সেটা নির্ধারণের ভার ছেড়ে দিয়েছেন তিনি জনগণের ওপর। বিষয়টি নিয়ে তার সমর্থকরা সোচ্চার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ব্যানার- ফেস্টুনেও রয়েছে মাদকের বিরুদ্ধে প্রচারণা।
জেলায় সর্বাধিক প্রতিদ্বন্দ্বী এই আসনে। তবে ৮ প্রার্থীর মধ্যে চোখে পড়ার মতো প্রচার-প্রচারণা ৩ জনের। হেভিওয়েট প্রার্থী আওয়ামী লীগের র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ফিরোজুর রহমান ওলিও (কাঁচি) এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) শাহ জামাল রানা (নোঙ্গর)। আসনটিতে এবারের ভোটের লড়াই নানা কারণে টক অব দ্য ডিস্ট্রিক্ট হয়ে উঠেছে।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন- নিয়মনীতি ভঙ্গ করা যে শুধু পোস্টার লাগানোর ক্ষেত্রে তা নয়। মাইকিংয়ের ক্ষেত্রেও তা নয়। আরও অনেক ক্ষেত্র আছে। যেমন গণভোজনের আয়োজন করা এটা নিয়মনীতির ভেতরে পড়ে না। মানুষকে টাকা দিয়ে ইনফ্লুয়েন্স করা এটাও নিয়মনীতির ভেতরে পড়ে না। কালো টাকার অপব্যবহার রোধ করাও নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব বলে আমি মনে করি। এসব ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন সক্রিয় হলে ভালো। তারা যেহেতু নিরপেক্ষতার সঙ্গে কাজ করেন আমি এটা আবেদন রাখবো। আমি আশঙ্কা করছি এবং লোকমুখে নানা কথা শুনছি। লোকমুখে যেহেতু শোনা এনিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ করছি না। তবে আমি যখন কালো টাকার বিরুদ্ধে বলছিলাম নির্বাচন কমিশনারের সামনে তখন কেউ কেউ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। এটা আমার একটু সন্দেহের বিষয়।
বিএনএম প্রার্থী শাহ জামাল রানা বলেন টাকার ছড়াছাড়ি। বাংলাদেশে ৩শ’ আসন আছে। কোথাও এমন আছে কিনা আমার জানা নেই। নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধিতে বলা আছে ২৫ লাখ টাকা সর্বোচ্চ খরচ করতে পারবে। আমি বিভিন্ন জায়গায় যেখানে প্রচারণায় যাচ্ছি ফেস্টুন-বিলবোর্ড যে হারে দেখছি তাতে মনে হয় কোটি কোটি টাকার পোস্টারই করছেন তারা। সেই ভাবে আমরা কিন্তু তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছি না। ব্যয়বহুল, টাকা খরচ করে মাঠা থাকাটা কিন্তু একটা চ্যালেঞ্জের মতো ব্যাপার হয়ে গেছে। কিছু মানুষ তো আছে টাকা যেদিকে সেদিকে দৌড়াতে শুরু করে। ভোটটা দিলে কি হবে না হবে, ৫ বছর ভালো থাকতে পারবে কিনা সেটা চিন্তা করে না। বেচাকেনার একটা বিষয় কিন্তু থাকে।
ফিরোজুর রহমান ওলিও বলেন- ‘কালো টাকা কীভাবে থাকে সরকার থাকলে। সেদিন এখানে আলাপ হয়েছিল নির্বাচন কমিশনার যে আসছিলেন। আপনি যে কালো টাকা বলছেন, আপনি তো সংসদ সদস্য আপনি কেন কালো টাকার বিচার করেন না। তারা ক্ষমতায় থেকে বলে যে, এটা কালো টাকা। তাহলে তাদের কাজটা কি। কালো টাকা কী। আল্লাহর রহমতে তিলে তিলে এখানে এসেছি। ৫২ বছর নিজে ব্যবসা করে এই জায়গায় এসেছি। তারা জনগণের ইয়া পাচ্ছে না, মানুষকে খোঁচায়া খোঁচায়া যা বের করতে পারে। এগুলো জনগণ জানে বুঝে। কালো টাকা যার আছে তারে তো ধইরা নিয়া জেলে ঢুকানোর কথা। অবৈধ টাকা থাকলে বের করুক না।’
এই আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা হচ্ছেন আওয়ামী লীগের র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী (নৌকা), স্বতন্ত্র ফিরোজুর রহমান ওলিও (কাঁচি), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের জামাল রানা (নোঙ্গর), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের সৈয়দ মো. নূরে আজম (মোমবাতি), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মুজিবুর রহমান হামিদী (বটগাছ), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির সৈয়দ মাহমুদুল হক আক্কাছ (আম), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির সোহেল মোল্লা (একতারা), জাসদের আবদুর রহমান খান ওমর (মশাল)।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর এবং বিজয়নগর উপজেলা নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ অর্থাৎ সদর আসনের মোট ভোটার ৬ লাখ ২১ হাজার ৫৮৪জন। এরমধ্যে সদরের ভোটার ৪ লাখ ১৩ হাজার ৯৩২ আর বিজয়নগরের ২ লাখ ৭ হাজার ৬৫ জন।
আরো পড়ুন : ময়মনসিংহের নান্দাইলে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে প্রাণ গেল একই পরিবারের ৪ জনের