টাঙ্গাইলে নৌকার মিছিলে গুলি
কুমিল্লায় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানকে কুপিয়ে আহত গাড়ি ভাঙচুর
লালমনিরহাটে স্বতন্ত্র সমর্থকদের ওপর হামলা
নওগাঁ ফরিদপুরে ক্যাম্পে আগুন ভাঙচুর
নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘাত-সহিংসতা ততই বাড়ছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনি ক্যাম্পে আগুন, প্রতিপক্ষের ওপর হামলা, হুমকি এমনকি গুলিবর্ষণের ঘটনাও ঘটছে। নির্বাচনি ডামাডোলে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বিভিন্ন এলাকা। সারা দেশে প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘাত-সহিংসতার খবর পাঠিয়েছেন আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও জেলা প্রতিনিধিরা-
টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনে নৌকার মিছিলে বর্তমান এমপি ও স্বতন্ত্র ঈগল প্রতীকের প্রার্থী ছানোয়ার হোসেনের সমর্থকের গুলিতে যুবলীগ নেতাসহ তিনজন আহতের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় গতকাল সদর থানায় মামলা দায়ের করেছেন আহত রোকনের বাবা ফজলুল রহমান। মামলায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর আগে রবিবার রাত ১১টার দিকে উপজেলার বাঘিল ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধরা হলেন বাঘিল ইউনিয়ন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক রোকনুজ্জামান রোকন, কর্মী এমদাদুল ও সিয়াম। রোকনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। জেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক আবু সায়েম তালুকদার বিপ্লব বলেন, রোকন, সিয়াম ও এমদাদুল চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রতিপক্ষ স্বতন্ত্র ঈগলের কর্মী-সমর্থকরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থী অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ বলেন, রাতে বাঘিলে নৌকার পক্ষে তাঁর সমর্থকরা মিছিল বের করেন। এ সময় স্বতন্ত্র প্রার্থী ছানোয়ার হোসেনের সমর্থকরা অতর্কিত গুলি চালান। এতে ইউনিয়ন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদকসহ তিনজন গুলিবিদ্ধ হন। তাদের টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি দোষীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। এমপি ছানোয়ার হোসেন বলেন, আমার কোনো নেতা-কর্মী এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ দেওয়া আছে, গত কয়েক দিনে আমার অনেক নেতা-কর্মীর ওপর হামলা করেছে। টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, এ ঘটনায় স্বতন্ত্র (ঈগল) প্রতীকের প্রার্থীর দুই সমর্থককে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান চলমান রয়েছে।
লালমনিরহাট : স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলা, অফিস ভাঙচুর : লালমনিরহাট-১ (হাতীবান্ধা-পাটগ্রাম) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমানের ঈগল পাখি প্রতীকের সমর্থকদের ওপর হামলা ও নির্বাচনি অফিস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে। এতে ১২ জন আহত হয়েছেন। তাদের হাতীবান্ধা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। রবিবার রাতে উপজেলার দোয়ানী সাধুর বাজার ও মিলন বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন সাজ্জাদ হোসেন (২১), মনির (২০), বাদল মিয়া (৩৮), রমজান আলী (৩২), আল আমিন (১৮), বিপ্লব হোসেন (১৯), অর্ণব (২৪), মাছুম হোসেন (২৮) ও পাটগ্রাম উপজেলা যুবলীগের ক্রীড়া সম্পাদক রাসেল (৩০)।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হাতীবান্ধা উপজেলার গুড্ডিমারী ইউনিয়নের দোয়ানী সাধুর বাজার এলাকায় রাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমানের পক্ষে ঈগল মার্কার সমর্থকরা মিছিল বের করলে নৌকার সমর্থকরা হামলা চালায়। এর পর ঈগল প্রতীকের নির্বাচনি অফিস ভাঙচুর করে। একই সময় উপজেলার মিলন বাজার এলাকায় ঈগল মার্কার সমর্থকদের মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। এতে ১২ সমর্থক আহত হয়।
নওগাঁ : নৌকার ক্যাম্পে আগুন দেওয়ার অভিযোগ : নওগাঁ-৫ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জনের পাঁচটি নির্বাচনি ক্যাম্পে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান ছেকার আহমেদ শিষাণের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। রবিবার রাতে শহরের গোস্তহাটির মোড়, সদর উপজেলার তিলকপুর ইউনিয়নের ত্রিমোহনী বাজার মোড়, বক্তারপুর ইউনিয়নের হালঘোষপাড়া এবং চকতারতাও মুক্তারপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নওগাঁ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুবুল হক কমল বলেন, প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই নৌকার সমর্থকদের উসকে দিচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান ছেকার আহমেদ শিষাণের সমর্থকরা। রবিবার নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে মতবিনিময়ে শিষাণের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আমরা তুলে ধরেছি। তাৎক্ষণিক শিষাণকে সাবধান করে দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা। অথচ ওই রাতেই তাঁর সমর্থকরা আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে নৌকার বিভিন্ন ক্যাম্পে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। নওগাঁ সদর মডেল থানার ওসি জাহিদুল হক বলেন, রাতে নৌকার পাঁচটি ক্যাম্পে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুমিল্লা : উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানকে কুপিয়ে আহত করেছে নৌকার সমর্থকরা : কুমিল্লা-৭ (চান্দিনা) আসনে নৌকার সমর্থকরা চান্দিনা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও যুবলীগের আহ্বায়ক জহিরুল ইসলাম মুন্সীকে কুপিয়ে আহত করেছে। গতকাল বিকালে উপজেলার গজারিয়ায় এ ঘটনা ঘটে। হামলায় আরও দুজন আহত হয়েছে। আহত জহির মুন্সী এ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মুনতাকিম আশরাফ টিটুর অনুসারী। ওই স্বতন্ত্র প্রার্থীর অভিযোগ, তার কর্মী-সমর্থকদের ওপর দফায় দফায় হামলা ঘটলেও পুলিশ এ পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তিনি (টিটু) অভিযোগ করেন, জহির মুন্সী তাঁর কয়েকজন সহযোগী নিয়ে নবাবপুর ইউনিয়নে পোস্টার বিতরণ শেষে ফেরার পথে তাদের ১০-১২টি মোটরসাইকেল নিয়ে ধাওয়া করে নৌকার সমর্থকরা। প্রাইভেট কারটি গজারিয়ায় পৌঁছালে ভাঙচুর করা হয়। পরে তাদের গাড়ি থেকে নামিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে মারাত্মক আহত করা হয়। যুবলীগ নেতা আবুল খায়ের, মহিউদ্দিন ও গাড়িচালক ইউসুফকে কুমিল্লার একটি বেসরকারি হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নৌকার প্রার্থী ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত ফোন রিসিভ না করায় এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
লাকসাম : জাতীয় পার্টির গণসংযোগে হামলা, আহত ২ : কুমিল্লা-১০ (নাঙ্গলকোট, লালমাই ও সদর দক্ষিণ) আসনে জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীকের প্রার্থী জোনাকী হুমায়ুনের নির্বাচনি গণসংযোগ চলাকালে হামলা ঘটেছে। গতকাল দুপুরে উপজেলার পেরিয়া ইউনিয়নের কাকৈরতলা বাজারে এ হামলা ঘটে। হামলায় জাতীয় পার্টির দুই সমর্থক আহত হয়। তারা হলেন কাকৈরতলা গ্রামের মানিক মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ রাব্বি (১৯) ও সুরুজ মিয়ার ছেলে ইকবাল হোসেন (৩৫)।
কুমিল্লা-১১ : সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবি : নির্বাচনি প্রচারে হামলা, পোস্টার-ব্যানার ছিঁড়ে ফেলায় অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন কুমিল্লা-১১ চৌদ্দগ্রাম আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী, আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক পৌর মেয়র মিজানুর রহমান। গতকাল বিকালে তিনি এ দাবি জানান। তিনি বলেন, আমি নির্বাচনি প্রচার উপজেলার কাশিনগর থেকে শুরু করলে প্রথম দিনই আওয়ামী লীগের প্রার্থী মুজিবুল হকের নির্দেশে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেনের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী আমার প্রচার কার্যক্রমে হামলা করে। খবর পেয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনাস্থলে পৌঁছালে সন্ত্রাসীরা তাদের উপস্থিতিতেও সন্ত্রাস চালায়।
নোয়াখালী : স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে ভাঙচুর-গুলিবর্ষণ : নোয়াখালী-২ (সেনবাগ-সোনাইমুড়ী আংশিক) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিকের (কাঁচি) সমর্থক আবদুর রহমান চেয়ারম্যানের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও গুলি ছোড়ার অভিযোগে সোহরাব হোসেন সুমনসহ ৬৬ জনের নাম উল্লেখসহ শতাধিক লোকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সেনবাগ উপজেলার ছাতারপাইয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রহমানের স্ত্রী বাদী হয়ে সেনবাগ থানায় এ মামলা করেন। এর আগে শনিবার রাতে আবদুর রহমানের বাড়িতে এ হামলা ঘটে। হামলাকারীরা আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী মোরশেদ আলমের সমর্থক বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবিতে সংবাদ সম্মেলনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক জানান, ?সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে নৌকার প্রার্থী মোরশেদ আলমের ছেলের নেতৃত্বে হেলমেট বাহিনী তার গণসংযোগে অতর্কিত হামলা চালায়। এতে ব্যাপক হাতবোমার বিস্ফোরণ ও গুলিবর্ষণ করে তারা। পরে চেয়ারম্যান আবদুর রহমানের বাড়িতে গুলি বর্ষণ করে। নৌকার প্রার্থী মোরশেদ আলম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আবদুর রহমান চেয়ারম্যানের বাড়িতে তার কোনো লোকজন হামলা করেনি।
ফরিদপুর : এ কে আজাদের সমর্থকের প্রাইভেট কার ভাঙচুর : ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এ কে আজাদের সমর্থক সেলিম মিয়ার প্রাইভেট কার ভাঙচুর করা হয়েছে। রবিবার গভীর রাতে দুর্বৃত্তরা প্রাইভেট কারটি ভাঙচুর করে। শহরের পশ্চিম খাবাশপুর এলাকায় সেলিম মিয়ার বাড়ির সামনে গাড়িটি পার্কিং করা ছিল। রাত ৪টার দিকে মোটরসাইকেলে এসে দুর্বৃত্তরা প্রাইভেট কারটি ভাঙচুর করে পালিয়ে যায়। সেলিম মিয়া জানান, এ ঘটনার পর থেকে আতঙ্কে আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদের ঈগল প্রতীকের সমর্থকরা। এর আগে রবিবার বিকালে এ কে আজাদের নির্বাচনি ক্যাম্প ভাঙচুর এবং কর্মীদের ওপর হামলা করা হয়। এ সময় চিহ্নিত সন্ত্রাসী সম্রাট বাহিনীর হামলায় এ কে আজাদের দুই কর্মী আহত হন। উপজেলার গেরদা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের গেরদা হাইস্কুলসংলগ্ন নির্বাচনি ক্যাম্প ভাঙচুর ও হামলার ঘটনা ঘটে। অভিযোগে বলা হয়, গেরদা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ এমার হকের নির্দেশনায় এ হামলায় অংশ নেন কথিত ক্রসফায়ারের আসামি তোফাজ্জল হোসেন সম্রাট ও হাসিবুর রহমান জেমিসহ সম্রাটের বাহিনীর সদস্যরা।
ভাঙ্গা (ফরিদপুর) : ভাঙ্গায় নৌকার ক্যাম্প ভাঙচুর : ভাঙ্গা উপজেলার কালামৃধা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ কালামৃধা গ্রামে আওয়ামী লীগ মনোনীত কাজী জাফরউল্লাহর নৌকা প্রতীকের ক্যাম্প ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। রবিবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে নৌকা মার্কার সমর্থক ও কালামৃধা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মান্দার বেপারী গতকাল ভাঙ্গা থানায় একটি অভিযোগ করেছেন।
কালামৃধা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জায়েম বেপারী বলেন, রবিবার সন্ধ্যার দিকে কালামৃধা ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বাদল হোসেনের নেতৃত্বে স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনের সমর্থকরা নৌকা প্রতীকের ক্যাম্পের চেয়ার, দলীয় প্রধান ও দলীয় প্রার্থীর ছবি ভাঙচুর করে। এ সময় তারা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হুমকি দেয়।
বরিশাল : স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্যাম্প ভাঙচুর, কর্মীদের মারধর : বরিশাল সদর আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সালাহউদ্দিন রিপন তার নির্বাচনি ক্যাম্প ভাঙচুর, কর্মীদের মারধর এবং ভোটারদের এলাকা ছেড়ে যাওয়ার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করেছেন নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নৌকার প্রার্থী জাহিদ ফারুক।
বরিশাল সদর আসনে ছয়জন প্রার্থীর মধ্যে মাঠে শুধু আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহিদ ফারুক এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মো. সালাহউদ্দিন রিপন। এরই মাঝে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মারধর, অফিস ভাঙচুর এবং ভোটারদের এলাকাছাড়া করার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সালাহউদ্দিন রিপন। তিনি বলেন, গত কয়েকদিনে নগরীর ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের ফরেস্টার বাড়ি এলাকায় তার কয়েকজন কর্মীকে মারধর করে প্রচার বন্ধ করে দেয় নৌকার লোকজন। ২১ নম্বর ওয়ার্ডে মাইক ভাঙচুর করা হয়। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে মাইক ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। ২২ নম্বর ওয়ার্ডে কর্মীদের এলাকা ছেড়ে যাওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। তবে নৌকার প্রার্থী জাহিদ ফারুক বলেছেন, তিনি ভাঙচুর-মারধর করার মতো লোক নন। স্বতন্ত্র প্রার্থী আলোচনায় আসতে মিথ্যা অভিযোগ করছেন বলে পাল্টা অভিযোগ তার।
খুলনা : নৌকার ক্যাম্পে আগুন, স্বতন্ত্রের কর্মী-সমর্থকদের হুমকি : খুলনার বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনি সহিংসতায় উত্তাপ ছড়াচ্ছে। এর মধ্যে খুলনা-৩ আসনে নগরীর ৭ নম্বর ওয়ার্ড যোগীপোলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এস এম কামালের নির্বাচনি প্রচার ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগ ও খুলনা-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারার কর্মী-সমর্থককে মারধর ও জীবননাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে। খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবিদ হোসেন বলেন, রবিবার রাতে যোগীপোলের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ক্যাম্পে আগুন ধরানো হয়। এতে ওই ক্যাম্পের চেয়ার টেবিল পুড়ে যায়। ঘটনাটি পুলিশকে জানানো হয়েছে।
এ ছাড়া গতকাল দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে খুলনা-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারা বলেন, ‘নৌকার প্রার্থী সালাম মুর্শেদীর কর্মী-সমর্থকদের আচরণে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। তারা আমার কর্মী-সমর্থককে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে।’
পঞ্চগড় : নৌকাবিরোধীদের পা ভেঙে দেওয়ার হুমকি : নৌকার বিপক্ষে যারা ভোট করছে তাদের পা ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন পঞ্চগড়-১ আসনের অমরখানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান নুরু। রবিবার রাতে কাজিরহাট বাজারে নৌকা সমর্থিত নেতা-কর্মী ও ভোটারদের উদ্দেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি এ হুমকি দেন। তিনি নৌকার প্রার্থী নাঈমুজ্জামান মুক্তার অনুসারী। এ সময় চেয়ারম্যান বলেন, যারা নৌকাকে ব্যবহার করে দীর্ঘদিন চলেছে, এখন নৌকার বিরোধিতা করে এদের চিহ্নিত করে রাখবেন। ৭ তারিখের পর এ সমস্ত লোককে নৌকার আশপাশে দেখলে প্রয়োজন বোধে তাদের ঠেংগুলো (পা-গুলো) ভেঙে দেওয়া হবে। এদের খন্দকার মোশতাক বলা হয়। হুমকির ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হলে জেলাজুড়ে সমালোচনা সৃষ্টি হয়। স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাট বলেন, নৌকা মার্কার যে চেয়ারম্যান প্রকাশ্যে হুমকি দিলেন এতে আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়েছে। আশা করি রিটার্নিং অফিসার এর যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।
রাজশাহী : বাগমারায় এনামুলের গাড়িবহরে হামলা, আটক ২ : রাজশাহী-৪ বাগমারা আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান এমপি এনামুল হকের প্রচারণার গাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। রবিবার রাতে বাগমারা দ্বীপপুর ইউনিয়নের কালিতলা মাদরাসা মোড়ে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এতে মজিবর রহমান ও সুইট নামে দুজন আহত হয়েছেন। ঘটনার পর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এনামুল হক রবিবার দ্বীপপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করছিলেন। রাত ৮টার দিকে তিনি গাড়ি নিয়ে বাগমারার দ্বীপপুর ইউনিয়নের কালিতলা মাদরাসা মোড়ে পৌঁছালে সেখানে ওত পেতে থাকা নৌকার সমর্থকরা গাড়ি লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। তাদের ছোড়া ইটের আঘাতে আহত হন এনামুল হকের সমর্থক মজিবর রহমান ও সুইট। বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকার জানান, হামলার ঘটনা শোনার পর সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি পুলিশের নাগালের মধ্যে আছে। ঘটনাস্থল থেকে দুজনকে আটক করা হয়েছে।
বগুড়া : আওয়ামী লীগের তিন নেতা-কর্মীকে মারধর : বগুড়ার নন্দীগ্রামে আওয়ামী লীগের তিন নেতা-কর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে বগুড়া-৪ আসনের ১৪ দলের প্রার্থী জেলা জাসদের সভাপতি এ কে এম রেজাউল করিম তানসেনের ভাগ্নের বিরুদ্ধে। গতকাল দুপুরে উপজেলার শিমলা বাজারে এ ঘটনা ঘটে। যাদের মারধর করা হয়েছে তারা হলেন নন্দীগ্রাম সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি রুবেল হোসেন, সহসভাপতি মোফাজ্জল হোসেন এবং যুগ্ম সম্পাদক রুহুল আমিন।
মারধরের শিকার রুবেল হোসেন জানান, বিএনপির সাবেক এমপি ডা. জিয়াউল হক মোল্লা বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শিমলা বাজারে ডা. জিয়াউল হক মোল্লা গণসংযোগ করে চলে যান। আমরা রুহুল আমিনের দোকানে আওয়ামী লীগের তিন নেতা বসে নির্বাচনি আলোচনা করছিলাম। এ সময় রেজাউল করিম তানসেনের ভাগ্নে মিলন ও চাচাত ভাই বাবুর নেতৃত্বে ১০ থেকে ১২ জন যুবক দোকানে এসে হঠাৎ মারধর করে এলাকা ছাড়ার হুমকি দিয়ে চলে যায়। নন্দীগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আজমগীর হোসাইন জানান, সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরো পড়ুন: লাঙল চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন অর্ধশত নৌকাকে