রংপুর প্রতিনিধি: বিএনপির উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি বলেছেন, বিএনপি আজকে ভোট চুরির কথা বলে, অথচ তারাই মাগুরার নির্বাচনের মাধ্যমে ভোট চুরি শুরু করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে এ দেশে আর নির্বাচন হবে না। সেই সুযোগ নেই। আন্দোলন যতই করুন কাজে আসবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়াই তাদের নির্বাচন করতে হবে। এবার বিএনপি নির্বাচনে না আসলে তাদের দলের নেতাকর্মীরাই তাদের খবর করবে। তাই এখনও সময় আছে, নির্বাচনে আসেন। আপনাদের জনপ্রিয়তা থাকলে নির্বাচনে আসুন। জনপ্রিয়তা যাচাই করুন। শনিবার বিকালে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা আজম বলেন, বিএনপি মিথ্যাচার করছে। মিথ্যাই তাদের সম্পদ। বিএনপি দেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। আওয়ামী এদেশের জনগণকে নিয়ে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এদেশের জনগণের জন্য নিবেদিতভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। দেশ নিম্ন মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চ মধ্যবিত্ত দেশে নিয়ে গেছেন। উন্নয়নশীল দেশে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। দেশের উন্নয়ন রোধ করতে বিএনপি ষড়যন্ত্র করছে।
শান্তি সমাবেশ উপলক্ষে দুপুর থেকে আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগসহ দলের বিভিন্নস্তরের নেতা-কর্মীরা পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে সমবেত হন। সমাবেশ শুরু হলে পাবলিক লাইব্রেরি মাঠ পূর্ণ হয়েও রাস্তার পাশে মানুষ ভিড় জমায়।
বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি প্রসঙ্গে মির্জা আজম বলেন, তত্ত্বাবধায়ক কি আমরা জানি। তত্ত্বাবধায়কের আন্দোলন আমরা করেছিলাম স্বৈরাচারী এরশাদকে ক্ষমতা থেকে হটানোর জন্য। কিন্তু সেই তত্ত্বাবধায়কের আমলে আমরা একটি দিনের জন্যও মানুষের কাছে ভোট চাইতে পারি নাই। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে জেল রাখা হয়েছিল।
পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করে জেলে রাখা হয়েছিল। এদেশে আর তত্ত্বাবধায়ক ফিরে আসবে না। বিএনপি দেশটাকে শ্রীলঙ্কা মত দেখতে চায়।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান বেঁচে থাকা অবস্থায় নিজেকে কখনও স্বাধীনতার ঘোষক বলেননি। জিয়াউর রহমান মারা যাওয়ার পরে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক বলছেন। বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। তার ডাকে সারা দিয়ে বাঙালিরা মহান মুক্তিযুদ্ধ ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ ও দুই লাখ মা-বোনে সম্ভ্রমের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে।
পদ্মা সেতুর প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্র হয়েছিল। বিশ্ব ব্যাংক নানা শর্তে টাকা দিতে চায়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, তোমরা টাকা না দিলেও আমরা আমাদের নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু করবো। পদ্মা সেতু নির্মাণ করে শেখ হাসিনা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছেন। তিনি মেট্রো রেলের প্রসঙ্গে বলেন, মেট্রোরেলে উঠলে মনে হয় না বাংলাদেশে রয়েছি।
মির্জা আজম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুরের চেহারা পাল্টে দিয়েছেন। এক সময় রংপুরে মানুষের অভাব ছিল, দুর্ভিক্ষ ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। সারাদিন কাজ করে একজন মানুষ ১২০ টাকার বেশি আয় করতে পারতো না। এখন একজন মানুষ কয়েক ঘণ্টায় ৫০০/৬০০ টাকা আয় করছেন। শুধু রংপুরই নয় সারাদেশের মানুষের উন্নত জীবনের জন্য কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মির্জা আজম আরও বলেন, বিএনপি বলতো আওয়ামী লীগকে ভোট দিলে দেশের সিলেট ও ফেনী ভারতের অংশ হয়ে যাবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে এর কিছুই হয়নি। বরংঞ্চ ভারতের কাছ থেকে কিছুু কিছু অধিকার আদায় করে নিয়েছে।
তিনি বলেন, বিশ্বের কোথাও সরকারি ভাবে শত শত মসজিদ নির্মাণের দৃষ্টান্ত নেই। শেখ হাসিনা এটা করে দেখিয়ে দিয়েছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছেন। গত ১৪ বছর ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ সরকার লাখ লাখ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করেছে। মেট্রোরেলের পরে পাতাল রেলের উদ্বাধন হয়েছে। এটা এক সময় কল্পনাও করা যেতো না। এসব সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে। তিনি আসন্ন নির্বাচনে আবার নৌকা মার্কাকে বিজয়ী করে শেখ হাসিনাকে আবার প্রধানমন্ত্রী করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধান বক্তা ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, বিএনপির মিথ্যাচারের প্রতিবাদের এই সমাবেশ। বিএনপির মিথ্যাচার প্রতিহত করে জনগণকে সাথে নিয়ে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। দেশের উন্নয়ন কোনভাবেই বাধাগ্রস্ত হতে দেয়া যাবে না।
মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ডা. দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে এবং মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাশেম ও জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক মাজেদ আলী বাবুলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সদস্য এ্যাড. সফুরা বেগম রুমি ও রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ছায়াদত হোসেন বকুল।