মানুষের শীতের অনুভূতি কি আবহাওয়ার ব্যাকরণ মেনে চলে?

জনদুর্ভোগ প্রচ্ছদ লাইফ স্টাইল

দিনভর কুয়াশায় ঢাকা আকাশ আর হিম হাওয়ার কবলে পড়েছে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশ। কয়েক দিন ধরে হাড়কাঁপানো শীতে পুরো শহরের অধিবাসীরা প্রায় কাবু হয়ে পড়েছে। এ ধরনের আবহাওয়া ও শীতের অনুভূতি কোথাও থাকলে সাধারণত শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে। কিন্তু দেশের আবহাওয়াবিদদের হিসাবে ঢাকার ১০০ কিলোমিটারের দূরত্বের বেশির ভাগ জেলায় শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়ে গেছে। কারণ, সেখানকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এরই মধ্যে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে এসেছে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০–এর নিচে না নামলেও খোদ ঢাকায় সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য ছিল মাত্র চার ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের কাছে থাকা ১৯৭১ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তাপমাত্রার যে তথ্য আছে, তাতে ঢাকাসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকায় তীব্র শীতের অনুভূতি বেড়ে যাওয়ার কিছু কারণ বের করা গেছে। দেখা গেছে, সাধারণত ঢাকায় যে তাপমাত্রা থাকে, তাতে শনিবার (৭ জানুয়ারি) সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকার কথা ছিল ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেখানে এদিন ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বনিম্ন ছিল ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি। আর দুপুরে মাত্র এক ঘণ্টার জন্য ঢাকায় রোদের দেখা পাওয়া গেছে। ফলে ঢাকা শহর রোদস্বল্পতার কারণে প্রায় ২৪ ঘণ্টা শীতল ছিল।

আবহাওয়া অধিদপ্তর প্রতিদিন দুইবার করে ঢাকাসহ দেশের সব কটি আবহাওয়ার পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে আকাশে বেলুন উড়িয়ে একটি স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের মাধ্যমে তাপমাত্রা মেপে থাকে। শনিবার ওই বেলুন উড়িয়ে দেখা গেছে, ঢাকার ৩০০ থেকে ৫০০ মিটার পর্যন্ত উচ্চতায় কুয়াশার ঘন আবরণ ছিল। সাধারণত ভূপৃষ্ঠ থেকে যত উঁচুতে ওঠা যায়, তাপমাত্রা তত কমতে থাকে। কিন্তু কোনো এলাকায় কুয়াশার স্তর যত ঘন হয়, সেখানকার ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা কমে আসে, আর ভূপৃষ্ঠের ৫০০ মিটার ওপর থেকে প্রতি কিলোমিটারে তাপমাত্রা দুই–তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস করে কমতে থাকে। ঢাকার ওপরে চাদরের মতো প্রলেপ তৈরি করা কুয়াশার কারণে আবহাওয়ার ওই ব্যাকরণ পাল্টে গেছে। ভূপৃষ্ঠের তুলনায় ওপরের তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। কারণ, কুয়াশার ওপরের স্তরে রোদের আলো থাকছে। আর কুয়াশার কারণে ভূপৃষ্ঠে রোদ প্রবেশ করতে পারছে না।

এ ব্যাপারে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ঢাকার ওপরে ৩০০ থেকে ৫০০ মিটার পর্যন্ত পুরু কুয়াশার স্তর থাকায় ভূপৃষ্ঠ ঠান্ডা রয়ে যাচ্ছে। আর রাত ও দিনের তাপমাত্রার পার্থক্য ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে। যে কারণে ঢাকাসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকায় তীব্র শীতের অনুভূতি রয়েছে। ঢাকায় সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৭ জানুয়ারি তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামে। অর্থাৎ শৈত্যপ্রবাহ অনুভূত হয়। এরপরে ঢাকায় আর কোনো শৈত্যপ্রবাহের তাপমাত্রা নামেনি। কিন্তু দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্যের কারণে এবার ঢাকায় জানুয়ারিতে তীব্র শীতের অনুভূতির দিনের সংখ্যা বেশি।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, শনিবার সিলেটে কুয়াশা কম ছিল। যে কারণে সেখানে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যে কারণে সিলেট জেলায় তেমন শীতের অনুভূতি ছিল না।

আবহাওয়ার ব্যাকরণে ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা শনিবার যেহেতু ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তার মানে ঢাকায় কোনো শৈত্যপ্রবাহ নেই। আসলেই কি তাই? মানুষের শীতের অনুভূতি কি আর আবহাওয়ার ব্যাকরণ মেনে চলে? কারণ, ঢাকায় কয়েক দিন ধরে রীতিমতো হাঁড়কাপানো শীত পড়েছে। শহরের ছিন্নমূল মানুষ থেকে শুরু করে ফ্ল্যাটের বাসিন্দারাও তীব্র শীতে কাবু হয়ে পড়েছেন। এ ধরনের পরিস্থিতির কারণ হিসেবে আবহাওয়াবিদেরা এবারের শীতে কুয়াশার কারণে তাপমাত্রার ব্যাকরণ উল্টে যাওয়াকে দায়ী করেছেন।

আরো পড়ুন : দিনাজপুরে শাহী অনলাইন পণ্যের সহায়তায় শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল উপহার

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *