মিরসরাই (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা: প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি মিরসরাইয়ের খইয়াছড়া, নাপিত্তাছড়া, সহস্রধারা, মহামায়া, বাওয়াছড়া, রূপসী, বোয়ালিয়া, হরিণাকুণ্ড ও সোনাইছড়ি ঝরনা। পাহাড়ের গহীনে অবস্থিত ঝরনার মায়ায় বিমোহিত হবেন যে কোনো প্রকৃতিপ্রেমী। বর্ষাকালে মিরসরাইয়ে পাহাড়ি ঝরনাগুলোতে পর্যটকদের পদচারণা বছরের অন্য সময়ের চেয়ে কয়েক গুণে বেড়ে যায়। তবে পাহাড়ি ঝরনাগুলোতে পর্যটকদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা না থাকায় প্রত্যেক বছরই ঘটছে প্রাণহানি। বিশেষ করে বর্ষাকালে পাহাড়ি পথ পিচ্ছিল হয়ে যাওয়ায় দুর্ঘটনার পরিমাণ বেড়ে যায়। ঝরনা দেখতে গিয়ে বিগত কয়েক বছরে প্রায় ১২ জন পর্যটক নিহত ও প্রায় শতাধিক আহত হয়েছেন। নজরকাড়া এই ঝরনাগুলো মিরসরাইয়ের সুনাম ছড়িয়েছে সারা দেশে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঝরনা দেখার জন্য পর্যটকরা ছুটে আসছেন। কিন্তু প্রশাসনের কোনো নজরদারি না থাকাতে একের পর এক ঘটছে দুর্ঘটনা। তবুও ঝরনার পানিতে একটু শরীর ভিজিয়ে নিতে ছুটে যাচ্ছে হাজারো পর্যটক।
সর্বশেষ গত রবিবার নাপিত্তারছড়া ঝরনায় ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চট্টগ্রামের (ইউএসটিসি) স্নাতকের ছাত্র মাসুদ আহম্মেদ তানভীর, চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজের মেধাবী ছাত্র তৌফিক আহম্মেদ তারেক ও চট্টগ্রাম ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের মেধাবী ছাত্র ইশতিয়াকুর রহমান প্রান্তের মৃত্যু হয়। এর আগে নিকট অতীতে এভাবে মৃত্যু হয়েছে বেশ কয়েক জনের।
জানা গেছে, চলতি বছর ২৯ এপ্রিল মিরসরাইয়ের নাপিত্তারছড়া ঝরনা, খৈয়াছড়া ঝরনা, রূপসি ঝরনা ও বাওয়াছড়া লেক এবং সীতাকুণ্ডের সহস্রধারা ঝরনা লিজ দেয় চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগ। ২৭ লাখ ৮১ হাজার টাকা মূল্যে এটি লিজ পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান টিএসআর ইন্টারন্যাশনাল। তারা গত দুই মাস ঝরনা ও লেক অভিমুখে টিকিট কাউন্টার তৈরি করে পর্যটকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করলেও নিরাপত্তা এবং গাইডের কোনো ব্যবস্থা রাখেনি। ঝরনা এলাকায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে থাকেন পর্যটকরা। কোনো অবকাঠামো উন্নয়ন না করে বন বিভাগ কর্তৃক ঝরনা ইজারা দেওয়া অযৌক্তিক এবং অমানবিক বলে দাবি পর্যটকদের। ঝরনায় যাওয়া পথ ভালো না হওয়ায় কোনো পর্যটক যদি দুর্ঘটনায় পতিত হন তাহলে তাদের উদ্ধার করতে সময় লেগে যায় উদ্ধারকর্মীদের। এভাবেই প্রাণহানি ঘটে। এছাড়া মিরসরাইয়ের ঝরনাগুলোতে গভীর কূপ থাকায় পর্যটকরা যখন গোসল করতে নামে তখন পানিতে ডুবে মারা যায়।
গত রবিবার নাপিত্তারছড়া ঝরনায় নিহত পর্যটক ইশতিয়াকুর রহমান প্রান্তর বাবা মোহাম্মদ জাকারিয়া নিজের ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায়। তিনি বলেন, এমন ভরা বর্ষায় পর্যটকদের পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে দিচ্ছে। অথচ তাদের নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্হা রাখা হয়নি।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টিএসআর ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী আনিসুর রহমান বলেন, ‘ঝরনা এলাকায় সরকারিভাবে নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্হা নেই। তবে আমরা ঝরনার প্রবেশ মুখে ঝরনার চূড়ায় না উঠতে নির্দেশনামূলক কিছু প্ল্যাকার্ড লাগিয়েছি।’ পর্যটকদের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কোনো গাইড রাখা হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি এ ঠিকাদার।
বারৈয়াঢালা জাতীয় উদ্যান সহ-ব্যবস্হাপনা কমিটির (সিএমসি) সভাপতি মো. সরওয়ার উদ্দিন বলেন, ‘আমরা পর্যটকদের জন্য সচেতনতামূলক সাইনবোর্ড স্হাপন করেছি। খৈয়াছড়া, সহস্রধারা, নাপিত্তারছড়া, লবণাক্ষছড়া, বাওয়াছড়া, কমলদহছড়া, সোনাইছড়া ঝরনা এলাকায় গাইড নিয়োগ দেওয়া হবে। পর্যটকরা যদি ঝরনা এলাকায় যাওয়ার সময় ইকো গাইডদের সঙ্গে নিয়ে যায় তাহলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। এছাড়া ঝরনায় নামার পথ বন্ধ করে দিতে হবে। পর্যটকরা যদি ঝরনায় না নামেন তাহলে দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবে। বিশেষ করে বর্ষাকালে কোনো পর্যটক যাতে পাহাড়ের ওপরে না ওঠেন সেটা তদারকি করতে হবে।’ চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) জামিল মোহাম্মদ খান বলেন, ‘মিরসরাইয়ের ঝরনাগুলো যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইজারা পেয়েছে তাদের অবশ্যই পর্যটকদের জন্য গাইড রাখতে হবে।’
আরো পড়ুন : আজ ২২ জুন; আজকের দিনে জন্ম-মৃত্যুসহ যত ঘটনা