নিজস্ব প্রতিবেদক : নোয়াখালীর মেঘনা নদীতে জলদস্যুদের গুলিতে নিহত দুই জেলের লাশ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন এলাকাবাসী। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত নয়টার দিকে নিহত দুই জেলের লাশ জেলার সুবর্ণচর উপজেলার পূর্ব চরবাটা ইউনিয়নের পূর্ব চর মজিদ গ্রামে পৌঁছালে ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা ওই বিক্ষোভ দেখান। এ সময় তাঁরা খুনিদের ফাঁসির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। পরে রাত ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে দুজনের লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
গত বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মেঘনা নদীর স্বর্ণদ্বীপের পশ্চিমে সন্দীপ চ্যানেলের কাছে মাছ ধরার সময় জেলেদের ওপর হামলা চালান জলদস্যু কেফায়েত বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান সুবর্ণচরের পূর্ব চরবাটা ইউনিয়নের পূর্ব চর মজিদ গ্রামের আবদুর রহমান (৩৩) ও একই গ্রামের কিশোর দেলোয়ার হোসেন ওরফে রাজু (১৬)। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন আরও চারজন। তাঁদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ দুজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা লিটন চন্দ্র দাশ বলেন, গতকাল রাত নয়টার দিকে নিহত দুই জেলের লাশ পূর্ব চর মজিদ গ্রামে আনা হয়। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁরা গুলির ঘটনায় জড়িত কেফায়েত বাহিনীর প্রধান কেফায়েত উল্যাহ ও তাঁর সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে লাশ নিয়ে এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরে রাত ১১টার দিকে জানাজা শেষে দুজনের লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
হামলার শিকার জেলেরা অভিযোগ করেন, সুবর্ণচর উপজেলার ভূঁইয়ারহাট এলাকার আলাউদ্দিনের দখলে থাকা ইলিশ মাছের খোপে (নদীতে মাছ ধরার নির্দিষ্ট স্থান) মাছ ধরতে যান মাইনউদ্দিন, অলি মাঝিসহ একদল জেলে। ওই খোপটি প্রায় ১০ বছর ধরে আলাউদ্দিনের দখলে রয়েছে। কিছুদিন ধরে মাছ শিকারের ওই খোপ দখলের চেষ্টা চালায় জলদস্যু কেফায়েত বাহিনী। গতকাল বিকেলে কেফায়েত বাহিনী ওই খোপ দখল করতে জেলেদের জাল কেটে দেয়। খবর পেয়ে মাছ ধরার দুটি ট্রলার নিয়ে সেখানে যান ভুক্তভোগী জেলেরা।
আলাউদ্দিনের ছোট ভাই গিয়াস উদ্দিন বলেন, কেফায়েতের নেতৃত্বে তাঁর বাহিনীর সদস্য আলতাফ, নুরউদ্দিন ও জুয়েল দলবল নিয়ে ওই দুই ট্রলারে দুই দফায় হামলা চালিয়ে মাছ, জাল, ট্রলারসহ কোটি টাকার মালামাল ডাকাতি করে নিয়ে যান। একপর্যায়ে জলদস্যু বাহিনী গুলি ছুড়লে দেলোয়ার হোসেন ও আবদুর রহমান মারা যান। এ ছাড়া হামলায় আহত হন আরও কয়েকজন।
এদিকে হামলার অভিযোগের বিষয়ে জানতে একাধিকবার কেফায়েত বাহিনীর প্রধান কেফায়েত উল্যার মুঠোফোনে কল করা হলেও তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
গতকাল বিকেলে নিহত আবদুর রহমানের বাড়িতে দেখা যায়, রহমানের আকস্মিক মৃত্যুতে তাঁর তিন সন্তান ও স্বজনদের আহাজারিতে বাড়ির পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। নিহত জেলের ভাই নিজাম উদ্দিন বলেন, তাঁর ভাই পেশাদার জেলে ছিলেন না। এলাকায় কোনো কাজ না থাকায় গত মঙ্গলবার মাইন উদ্দিন মাঝির সঙ্গে নদীতে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। যাওয়ার এক দিন পরই কেফায়েত বাহিনীর রোষানলে পড়তে হয় তাঁর ভাইকে। মাছের খোপ নিয়ে বিরোধ থাকার কথা জানলে তিনি তাঁর ভাইকে মাছ ধরতে যেতে নিষেধ করতেন। এখন ভাইয়ের মৃত্যুতে তাঁর পরিবারটি সম্পূর্ণ অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে।
নিজাম উদ্দিন জানান, একই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত কিশোর দেলোয়ার হোসেন বাবার একমাত্র ছেলে। সেদিন দেলোয়ারকে বাবা রেজাউল হকই সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন মাছ ধরতে। নিজের চোখের সামনে জলদস্যুদের গুলিতে ছেলেকে লুটিয়ে পড়তে দেখে তিনি শোকে এখন শয্যাশায়ী। ছেলের কথা বলতেই বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন।
সুবর্ণচরের চরজব্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, রাতে লাশ বাড়িতে পৌঁছার পর তিনি সেখানে গিয়েছেন। ভুক্তভোগী পরিবার দুটিকে সান্ত্বনা দিয়েছেন। এ ঘটনায় কোস্টগার্ড বাদী হয়ে সন্দ্বীপ থানায় একটি মামলা করেছে।
আরো পড়ুন : পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে মসজিদের কাছে বিস্ফোরণে ৫২ জন নিহত-ডন