চলতি বছরের ১৬ ডিসেম্বর চালু হওয়ার কথা রয়েছে স্বপ্নের মেট্রোরেল (এমআরটি)। সবকিছু ঠিক থাকলে প্রথম দফায় রাজধানীর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার উড়ালপথে চলবে এই রেল। পরের বছর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার অংশে শুরু হবে যাত্রী পরিবহন। অথচ মেট্রোরেলের স্থাপনা, স্টেশন আর যাত্রী নিরাপত্তায় এখনও গঠন হয়নি ‘এমআরটি পুলিশ’।
রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) চাহিদা অনুযায়ী এমআরটি পুলিশ ইউনিট গঠন হওয়ার কথা। পুলিশ সদর দপ্তর ও ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, শুরুর দিকে রেলওয়ের পুলিশের অধীনে মেট্রোরেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার বিষয়ে পরিকল্পনা হয়। তবে ২০১৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি সভায় প্রধানমন্ত্রী মেট্রোরেলের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য স্বতন্ত্র বিশেষায়িত এমআরটি পুলিশ ফোর্স দ্রুত গঠনের অনুশাসন দেন। এরপর এ প্রক্রিয়া শুরু হলেও এখনও তা আলোর মুখ দেখেনি।
পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি (ওঅ্যান্ডএম) মোশতাক আহমেদ বলেন, যাচাই-বাছাইয়ের পর এমআরটি পুলিশ ইউনিট গঠনের ৩৫৭ জনবলের একটি প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর বিশেষ এই পুলিশ ইউনিটের যাত্রা শুরু হবে। প্রস্তাবনা অনুযায়ী এমআরটি পুলিশে একজন ডিআইজি প্রধান থাকবেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, মেট্রোরেলের নিরাপত্তায় আলাদা পুলিশ ইউনিট গঠনের সিদ্ধান্ত হওয়ার পর একজন ডিআইজি ও একজন অতিরিক্ত ডিআইজি ছাড়াও তিনজন পুলিশ সুপার, চারজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, তিনজন সহকারী পুলিশ সুপার, ১৪ জন পরিদর্শক, ২১ জন উপপরিদর্শক, ৭৪ জন সহকারী উপপরিদর্শক, ২৫ জন নায়েক ও ৬৩৯ কনস্টেবলসহ মোট ৮০৯ জনের জনবল ও ৯৬টি যানবাহনের প্রস্তাব করা হয়। তা যাচাইয়ের পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এমআরটি পুলিশের জন্য ৫৪২টি জনবল সৃষ্টি ও ৩১টি যানবাহন টিওঅ্যান্ডই ভুক্তিতে সম্মতি দেয়। আরও যাচাইয়ের পর মোট ৩৫৭ জনবলের প্রস্তাব যায় কেবিনেটে।
ঢাকা মহানগরী ও আশপাশের এলাকায় অত্যাধুনিক গণপরিবহন হিসেবে পাঁচটি মেট্রো রেল সমন্বয়ে ডিএমটিসিএলের মাধ্যমে কার্যকম চলছে। এই যোগাযোগ নেটওয়ার্কে ৫১টি উড়াল ও ৫৩টি পাতাল স্টেশনসহ মোট ১০৪টি স্টেশন তৈরি হবে। যার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই বিশেষ ইউনিট গঠন হচ্ছে। মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-৬ বা দেশের প্রথম উড়াল মেট্রোরেলে ঘণ্টায় ৬০ হাজার এবং দিনে পাঁচ লাখ যাত্রী যাতায়াত করবে। ছয়টি কোচ সংবলিত প্রতিটি একমুখী মেট্রো ট্রেন প্রতিবারে ৩৮ মিনিটে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১৬টি স্টেশনে থেমে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৩০৮ জন যাত্রী পরিবহন করতে পারবে।
ডিএমটিসিএল ও পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, এই স্থাপনার নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা ও যাত্রী সুরক্ষায় পুলিশের বিশেষ ইউনিট দায়িত্ব পালন করবে। প্রয়োজনে প্রত্যেক স্টেশনেই ফাঁড়ি স্থাপন করা হবে। নারায়ণগঞ্জের পিতলগঞ্জ ডিপো এলাকায় স্বতন্ত্র বিশেষায়িত এমআরটি পুলিশের প্রধান কার্যালয় নির্মাণের জন্য ভূমি চিহ্নিত করে রেখেছে ডিএমটিসিএল।