অমর একুশে বইমেলায় এসেছে গাজী মুনছুর আজিজের নতুন ভ্রমণগল্প ‘অজানা অজন্তা’। প্রকাশ করেছে চমনপ্রকাশ। প্রচ্ছদ করেছেন দেওয়ান আতিকুর রহমান। দাম ২৫০ টাকা। চমন প্রকাশের স্টল নম্বর ৫৩৮। এ ছাড়া বইটি পাওয়া যাবে বাতিঘর বাংলামটর (বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র) ও শাহবাগের আজিজ মার্কেট শাখায়। বাতিঘরের ০১৯৭৩৩০৪৩৪৪ নম্বরে যোগাযোগ করে অনলাইনেও কেনা যাবে।
অজন্তার রহস্যময় গুহাগুলো পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন। খ্রিষ্টপূর্ব ২০০ বছর আগে থেকে পাহাড় খোদাই করে গুহাগুলো তৈরি। এসব গুহার ভেতর পাথর কেটে কেটে তৈরি নানা শিল্পকর্ম ও গুহার দেয়ালে আঁকা রঙিন চিত্রকর্ম। যে কেউ রীতিমতো বিষ্মিত হবেন এসব শিল্পকর্ম দেখে। ছোট-বড় ৩০টি গুহা রয়েছে অজন্তায়। গুহাগুলোর মধ্যে কোনোটি চৈত্য বা উপাসনালয়। আবার কোনোটি বিহার। প্রতিটি গুহার শিল্পকর্মে আছে আলাদা বৈচিত্র্য। মূলত বৌদ্ধ ভিক্ষু বা সন্ন্যাসীরা সংস্কৃতিচর্চা বা ধর্মচর্চা বা উপাসনার জন্য এসব গুহা ও শিল্পকর্ম করেছেন। প্রায় ৯০০ বছর ধরে নির্মাণ করা অজন্তা নবম বা দশম শতাব্দীতে হঠাৎ সম্পূর্ণভাবে পরিত্যক্ত হয়। এরপর প্রায় হাজার বছর লোকচক্ষুর আড়ালেই ছিল শিল্পসমৃদ্ধ এসব গুহা। লেখক অজন্তার গুহাগুলো ঘুরে ঘুরে যা দেখেছেন আর জেনেছেন, তা সহজ ভাষায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন ‘অজানা অজন্তা’য়। তবে অজন্তার শিল্পের যে গভীরতা, সে ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেননি লেখক।
লেখক সম্পর্কে :
গাজী মুনছুর আজিজের নেশা ভ্রমণ। পেশা লেখালেখি। ঘুরে বেড়ান দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। ঘুরতে গিয়ে সেখানকার নদীর পানিতে শরীর ভেজানো তার আরেক নেশা। মাঝেমধ্যে বের হন সাইকেল অভিযানে। দেশের বাইরেও যান। লেখালেখি করছেন পাখি-প্রকৃতি, লোকসংস্কৃতি, খাবার, ইতিহাস-ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে। তার উল্লেখযোগ্য বই ‘রূপসী বাংলার রূপের খোঁজে’; ‘ভ্রমণের দিন’; ‘ভুটান দার্জিলিং ও অন্যান্য ভ্রমণ’; ‘অনন্য আরব’; ‘পজিটিভ বাংলাদেশ’, ‘ফাদার মারিনো রিগন’; ‘৭১-এর খÐচিত্র’। সম্পাদনা করছেন ‘ঈদ উৎসব’ ম্যাগাজিন। বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সদস্য হিসেবে পাখি শুমারিসহ বিভিন্ন গবেষণা কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাবের সদস্য। পরিবেশ সচেতনতা নিয়ে নিয়মিত প্রচারণা চালান। এভারেস্ট জয়ী সজল খালেদ স্মরণে প্রতি বছর কক্সবাজারে একক ম্যারাথন করেন। বাড়ি চাঁদপুর সদরের নানুপুর গ্রাম। জন্ম ও বেড়ে ওঠা খুলনার দিঘলিয়ার চন্দনীমহল গ্রামে। বাবা মোহাম্মদ মুনছুর গাজী, মা মরিয়ম বেগম। ২০০১ সালে তিনি চাঁদপুরে প্রতিষ্ঠা করেন মুনছুর গাজী ফাউন্ডেশন। এর উদ্যোগে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান, বই বিতরণ, বৃক্ষরোপণ, পাঠাগার পরিচালনা, পরিবেশ সচেতনতা, ইলিশ আড্ডাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
অজানা অজন্তা বই নিয়ে পাখিবিশারদ ও অভিযাত্রী ইনাম আল হকের মন্তব্য : গাজী মুনছুর আজিজ অজন্তা দেখে দেশে ফিরেছেন, আওরঙ্গাবাদ-অজন্তার দীর্ঘ পথে আমার এক ঝটিকা সফরের দেড় দশক পরে। সেই নিরালা পথ, পানিহীন অঘোরা নদী, খাড়া পাহাড়ের অর্ধচন্দ্রাকার পাথুরে দেয়াল কেটে দুই সহস্রাব্দ আগে গড়া মনোহর প্রস্তরমূর্তি আর মলিন হয়ে আসা দেয়ালচিত্রগুলো চোখের সামনে নতুন করে তুলে ধরলেন মুনছুর আজিজ। অজন্তার অনন্য গুহাগুলো এবার ঘরে বসেই ঘুরে দেখার সুযোগ এনে দিলো তার এ বই। আরামকেদারার এই ভ্রমণে কিছু নতুন চিত্র দেখলাম আর কিছু অজানা কাহিনি জানলাম যা দেড় দশক আগের ভ্রমণে আমার দেখা ও জানা হয়নি। প্রাচীনকালের ভিক্ষু-জীবনের নানা কথা জেনে প্রস্তুত মন নিয়েই মুনছুর আজিজ অজন্তা দেখতে গেছেন আর দেখেছেন খুঁটিনাটি অনেক কিছু, যা না দেখেই গুহার পর গুহা পার হয় লোকে। তার চেয়ে বড় কথা, তিনি যা দেখেছেন আর যা জেনেছেন তার একটা সরল, অনাড়ম্বর, গতিশীল ও উপভোগ্য গল্প লিখেছেন এ বইয়ে। যারা কোনোদিন অজন্তা দেখার সুযোগ পাবেন না, যারা একদিন অজন্তা দেখতে যেতে চান, কিংবা যারা আমার মতো দেখেও পুরো দেখেননি তাদের পাঠ্য-তালিকায় গাজী মুনছুর আজিজের এ বইটির নাম দেওয়া যায়।
কবি আসাদ চৌধুরী ‘ভ্রমণের দিন’ বই প্রসঙ্গে বলেন, লেখকের অন্যান্য বই নিয়ে কয়েকজনের মন্তব্য : গাজী মুনছুর আজিজের পায়ের নিচে শর্ষে-দানা কুট কুট করতে থাকে। ওর দৃষ্টি বাংলাদেশের শ্যামল নিসর্গের অপরূপ রূপ দেখে কখনোই ক্লান্ত হয় না। জীবনানন্দ দাসের রূপসী বাংলা এখনও যে মোহ সৃষ্টি করে তার কিছুটা গাজী মুনছুর আজিজের লেখায় ধরা পড়ে। ঘুরতে-ফিরতে আমারও ভালো লাগে, তবে তার সামনে তা বলার মতোই নয়। গাজী মুনছুর আজিজ দেখতে জানেন, লিখতে জানেন। আমি তার লেখা পড়ে নিজের চোখে দেখার স্বাদ পাই।
ইনাম আল হক, পাখিবিশারদ ও অভিযাত্রী ‘ভুটান দার্জিলিং ও অন্যান্য ভ্রমণ’ বই প্রসঙ্গে বলেন, গাজী মুনছুর আজিজকে আমি বাংলাদেশের মাটি দিয়ে গড়া অসামান্য এক সাদামনের মানুষ বলে জানি। তিনি সোজা সরল কথা বলেন, সহজ ভাষায় লেখেন। তার বয়স কম, বই অনেক; প্রিয় বিষয়বস্তুর তালিকাটা আরও বড়। এ দেশের কোনো কিছুই তিনি তুচ্ছ মানেন না; যা চোখে দেখেন সবই লিখে যান। এ দেশের কাদামাটি, কৃষক, কুমার, তাঁতি, ফসলের জমি, বন, বাদা, মাছ, পাখি, পোকামাকড়, এসবেরই খন্ডচিত্র তার বইয়ে স্থান পায়। মন্দ-ভালোর তর্ক না তুলে কেবল বর্ণনা করেই তৃপ্ত তার লেখনী। মাটিতে চোখ রেখে হাঁটেন তিনি; মনে হয়, মাটির গভীরে তার শিকড় আছে। বাংলাদেশের সঙ্গে তার অনেক মিল; নবীন এ দেশের মতোই অর্জনের চেয়ে তার সম্ভাবনাটা অনেক বড়। জগতের নজর কাড়ার মতো বড় কিছু করে ফেলার সময় এখনও আসেনি তার। তবে যা করা হয়েছে তা-ও কম নয়।
মফিদুল হক, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ‘৭১-এর খন্ডচিত্র’ বই প্রসঙ্গে বলেন, তরুণ সাংবাদিক গাজী মুনছুর আজিজ পেশাগত দায়িত্ব পালনের সুবাদে যতটা না, তার চেয়ে বেশি অন্তরের তাগিদে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সন্ধান করে ফিরছেন, নানা তথ্য ও ঘটনা পাঠকদের সামনে মেলে ধরছেন, তার প্রতিবেদন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কর্তৃক স্বীকৃতিও অর্জন করেছে। এখানে দুই মলাটের মধ্যে নির্বাচিত যেসব রচনা ও প্রতিবেদন স্থান পেয়েছে তা প্রবীণ পাঠকদের হয়তো স্মৃতিভারাতুর করবে, তবে নিঃসন্দেহে নবীন পাঠকদের উদ্দীপ্ত করবে জাতির গৌরবগাথার সঙ্গে নিবিড় সংযোগ দ্বারা।
আরো পড়ুন : ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণ প্রবিধানমালা বাস্তবায়নের দাবি করেন বিভিন্ন সংগঠন ও শ্রেণি-পেশা মানুষ