যশোর এলজিইডি’র অফিসের হিসাবরক্ষক নাজমুল আহসান নিজেই ঠিকাদার

অনুসন্ধানী অর্থনীতি দুর্নীতি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচ্ছদ মুক্তমত লাইফ স্টাইল শিল্প প্রতিষ্ঠান হ্যালোআড্ডা

যশোর প্রতিনিধি: যশোরের চৌগাছায় এলজিইডি অফিসের হিসাবরক্ষক নাজমুল আহসান নিজেই ঠিকাদারি করছেন। নাহিদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী হিসেবে স্ত্রী ফারজানা নাহিদকে কাগজে কলমে দেখিয়ে নিজেই ঠিকাদারি করছেন তিনি। সম্প্রতি উপজেলা প্রকৌশলী অফিসের পক্ষ থেকে উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে (ইউআরসি) পিইডিপি-৪ এর অধীনে মেরামত ও এসি সরবরাহ কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়। কাজটি নাহিদ এন্টার প্রাইজের নামে নেন নাজমুল।

সূত্র মতে, উপজেলা রিসোর্স সেন্টার মেরামতের কাজের টেন্ডার আহ্বান করা হয় গত ২রা মে। কাজের মূল্য ছিল ৮ লাখ ১৬ হাজার ৯২৯ টাকা। ৮ই অক্টোবরের মধ্যে কাজটি সম্পাদনের শর্তে উপজেলা প্রকৌশলী রিয়াসাত ইমতিয়াজ কাজটির কার্যাদেশ দেন। চুক্তিমূল্য ছিল ৭ লাখ ৩৩ হাজার ৭৭২ টাকা। চুক্তিপত্রে ফারজানা নাহিদের ছবি এবং স্বাক্ষর থাকলেও এলজিইডি অফিসে এসে স্বাক্ষর করেননি বলে একাধিক স্টাফ নিশ্চিত করেছেন। তারা বলেন, নাজমুল নিজে তার স্ত্রীর স্বাক্ষর করে দিয়েছেন। ঠিকাদার হওয়ায় কার্যাদেশের দিনেই চুক্তি সম্পাদন হয়েছে।

কার্যাদেশ পেতে ঠিকাদারের অন্তত একদিন সময় লাগার কথা। আরও জানা গেছে, কাজটি সম্পাদন না করেই বিল দাখিল করা হয়েছে গত ১০ই সেপ্টেম্বর। যেখানে ২ টন ৪টি এসি’র বিল ভ্যাট ও আইটি ছাড়া ৪ লাখ ৩৩ হাজার ৭৯৫ টাকা দাখিল করা হয়েছে। অথচ কাজটির চুক্তিমূল্য অনুযায়ী এটি ১০ শতাংশ কম মূল্যে সরবরাহ করার কথা।

অভিযোগ অস্বীকার করে হিসাবরক্ষক নাজমুল আহসান বলেন, আমি অফিসে বিল নিরীক্ষার দায়িত্ব পালন করি। সে হিসেবে ফাইল তো আমিই ড্রিল করবো। আমার শ্বশুর এই ঠিকাদারের প্রতিনিধি। কাজ সম্পন্ন না করেই বিল দাখিল করেছেন প্রশ্নে বলেন, এটা সম্পূর্ণ কাজের বিল না, চলতি বিল। চার মাস আগে এসিগুলো সরবরাহ করা হয়েছে। এখনো বিল পাইনি। তাই ইউএনও স্যারের কাছে বিলটির তদবিরে গিয়েছিলাম। ১ টন এসি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পরে ইউআরসির অন্য একটি রুমে দিয়ে দেবে বলে জানিয়েছে। তাহলে স্টিমেটে ২ টন ৪টি ধরা হয়েছে কেন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা উপজেলা প্রকৌশলী বলতে পারবেন। আপনি হিসাবরক্ষক হয়েও এই প্রতিষ্ঠানের হয়ে ঠিকাদারি করেন কেন প্রশ্নে তিনি বলেন না, আমি করি না। এই লাইসেন্সে ওটিএম (ওপেন টেন্ডার ম্যাথুড) পদ্ধতিতে ১০ শতাংশ কমে কাজটি পেয়েছে। এর মাধ্যমে উপজেলায় অন্য ছোট দুটি কাজ ছাড়া কোনো কাজ করা হয়নি। তবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে উপজেলা রিসোর্স সেন্টার মেরামত ও এসি সরবরাহ কাজের সঙ্গে অভিজ্ঞতা সনদ হিসেবেই তিনি ২০১৮-১৯ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ৮১ লাখ টাকায় চৌগাছা উপজেলার তাহেরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৭৩ লাখ টাকায় দুলালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৫২ লাখ টাকায় ঝিনাইকু-ু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৭৮ লাখ টাকা ব্যয়ের উপজেলার সুখপুকুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনগুলো নির্মাণকাজ করেছেন। এ ছাড়াও এডিপি, জাইকা, পিইডিপি ও জিওবিসহ বিভিন্ন ফান্ডের উন্নয়ন কাজের ঠিকাদারি তিনি নিয়মিত করেন।

এ বিষয়ে উপ-সহাকারী প্রকৌশলী বুলবুল আহমেদ বলেন, বিষয়টি দেখছি। চলতি বিল দাখিল করায় বিষয়টি সেভাবে দেখা হয়নি। যেটুকু কাজ হয়েছে তার চেয়ে বেশি চলতি বিল দাখিল হয়েছে কীভাবে প্রশ্নে তিনি বলেন, স্টিমেটটা অনেক আগের। বিষয়টি ভালো করে দেখছি। উপজেলা প্রকৌশলী রিয়াসাত ইমতিয়াজ বলেন, সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী হিসাবরক্ষক ঠিকাদারি করতে পারেন না, তবে তার স্ত্রী তো সরকারি চাকরি করেন না। ঠিকাদারের প্রতিনিধি বিল দাখিল করেছেন। আর অফিসে বিল নিরীক্ষার কাজ তো হিসাবরক্ষকই করে থাকেন। ৮ টন এসি সরবরাহ না করেই চলতি বিল দাখিল করার বিষয়ে তিনি বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পরে ওই ১ টন এসি দিয়ে দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। হিসাবরক্ষকের বিরুদ্ধে ঠিকাদারি করার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, বিল দাখিল হওয়ার পর খোঁজ নিয়ে জেনেছি সেখানে ৮ টনের জায়গায় ৭ টন সরবরাহ করা হয়েছে। ঠিকাদারকে কাজ সম্পূর্ণ করার পর বিল দাখিলের জন্য বলা হয়েছে। এলজিইডি’র হিসাবরক্ষক নিজেই ঠিকাদারি করছেন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটি আমার জানা নেই। তবে হিসাবরক্ষক বার বার বিলটি ছেড়ে দেয়ার জন্য তদবির করছেন। সরকারি কর্মচারী হয়ে তিনি ঠিকাদারি করতে পারেন না। তাছাড়া তিনি নিজেই তো বিল নিরীক্ষার দায়িত্ব পালন করেন।

আরো পড়ুন : নগ্ন ভিডিও এবং টর্চার করে টাকা আদায় করত চক্রটি

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *