চট্টগ্রাম ব্যুরো: তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘যারা সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে লালন-পালন করে, সাম্প্রদায়িকতাকে নিয়ে রাজনীতি করে, সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে যারা দেশে গণ্ডগোল পাকায়, যারা এই অসাম্প্রদায়িক দেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়-তাদেরকে আপনারা চেনেন, তাদেরকে বর্জন করুন।’
শুক্রবার নগরের প্রবর্তক মোড়ে চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন)- এর উদ্যোগে আয়োজিত রথযাত্রা উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ইসকন প্রবর্ত্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলারাজ দাশ ব্রহ্মচারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান, চট্টগ্রামস্থ ভারতীয় সহকারী হাই-কমিশনার ডা. রাজীব রঞ্জন ও ইসকন চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারী।
চট্টগ্রামে রথযাত্রা উৎসবের গৌরবোজ্জ্বল অতীত প্রসঙ্গে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘রথযাত্রা চট্টগ্রামে একটি বড় উৎসব। যুগ যুগ ধরে এই রথযাত্রা উৎসব হয়ে আসছে। চট্টগ্রামে রথযাত্রা উৎসব বেশ বড় হয়। চট্টগ্রামে হাজার হাজার লাখ লাখ মানুষ রথযাত্রায় অংশ নেন। প্রকৃতপক্ষে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নানাবিধ অনুষ্ঠান আমাদের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে। এই রথযাত্রাও আমাদের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে। অসম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ব্যবস্থার জন্যই বাংলাদেশের অভ্যুদয়। সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে এসে অসম্প্রদায়িক রাষ্ট্র রচনার জন্যই বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘কেউ স্বীকার করুক আর না করুক ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগ হয়েছিল সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে। হিন্দুদের জন্য একটি রাষ্ট্র আর মুসলিমদের জন্য আরেকটি রাষ্ট্র। কিন্তু বিভাজনের পর আমরা বাঙালিরা অনুধাবন করেছি, এই সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ব্যবস্থা আমাদের জন্য নয়। কারণ আমাদের প্রথম পরিচয় হচ্ছে আমি কে, আমি বাঙালি, আমি বাংলায় কথা বলি, বাংলায় গান গাই। দ্বিতীয় পরিচয় হচ্ছে আমি কে, আমি হিন্দু না মুসলিম, না বৌদ্ধ নাকি খ্রীস্টান। সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় পাকিস্তানে সেই সংস্কৃতি এবং পরিচয় যখন হুমকির মুখে পড়লো তখন জাতির পিতার নেতৃত্বে এই বাংলাদেশ রচিত হলো।’
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে যেই চেতনার ভিত্তিতে, যে অসম্প্রদায়িক চেতনাকে বুকে ধারণ করে আমাদের পূর্বসুরীরা দেশ রচনা করেছিলেন, লাল-সবুজ পতাকার জন্ম হয়েছিল সেই চেতনার মূলে আঘাত হানা হলো। রাষ্ট্রের পরিচয় বদলে দেয়া হলো। সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বানানোর অপচেষ্টা হলো, অনেক ক্ষেত্রে তারা সফলও হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর যেই চেতনার ভিত্তিতে রাষ্ট্র রচিত হয়েছিল সেই রাষ্ট্রকে মূল চরিত্র ফিরিয়ে আনার জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা চেষ্টা চালিয়েছেন। গত সাড়ে ১৩ বছর ধরে দেশ পরিচালনার প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রের যে পরিচয় নষ্ট করা হয়েছিল সেটি আবার পুনরম্নদ্ধার করা হয়েছে। তবে এখনো অনেক কাজ বাকী আছে। এখন বাংলাদেশে সব মানুষের সমান অধিকার, সব ধর্মের মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষে আমাদের সরকার জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কাজ করছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের এই দেশে সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠার চেষ্টা করে এবং এ অপশক্তি মাঝেমধ্যে সাপের মতো ছোবল মারার চেষ্টা করে। বিভিন্ন সময় সেই অপচেষ্টা হয়েছে। আমাদের সরকার সেগুলোকে কঠোর হস্তে দমন করেছে। আমরা যেকোনো সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে কঠোর হস্তে দমন করতে বদ্ধপরিকর। এই দেশে যারা সাম্প্রদায়িকতাকে নিয়ে রাজনীতি করে, তাদের রাজনীতির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতা এবং ভারত বিরোধিতা। যখন নির্বাচন আসে তখন তারা সাম্প্রদায়িকতাকে নিয়ে আসে নির্বাচনের মাঠে। বলতে শুরু করে আওয়ামী লীগ হচ্ছে হিন্দুদের দল, আওয়ামী লীগ হচ্ছে ভারতের চর। যদিও এই সমস্ত্ম ট্যাবলেট আগের মতো কাজ করে না। আগামীর নির্বাচন অতি সন্নিকটে। তারা আবারও একই স্তোগান নিয়ে হাজির হবে।’
রথযাত্রা উপলক্ষে শুক্রবার সকাল থেকে নগরজুড়ে নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যাতে যোগ দেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।
আরো পড়ুন : এবার হঠাৎ করেই প্রকাশ্যে এলেন তালেবানের শীর্ষ নেতা মোল্লা হাইবাতুল্লাহ