দেশটিতে পাঁচ মাসে প্রবৃদ্ধি কমেছে ৯ শতাংশ, আয় কমছে ইউরোপীয় ইউনিয়নেও, নেতিবাচক প্রভাব জার্মানি ইতালি বেলজিয়ামে
সবচেয়ে বড় গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতে ধস নেমেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর এ পাঁচ মাসে ৩ হাজার ৬৪০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ২ শতাংশ কম। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর প্রান্তিকে ৪ হাজার ৯ মিলিয়ন ডলার পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। দেখা যাচ্ছে, গতবারের তুলনায় চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে রপ্তানি কমে গেছে প্রায় ৩৬৯ মিলিয়ন ডলারের। স্থানীয় মুদ্রায় যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি কমেছে প্রায় ৪০ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকার। বাংলাদেশের মোট পণ্য রপ্তানির প্রায় ১৭ ভাগ আয় আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। ফলে বৃহত্তম এ গন্তব্যে পণ্য রপ্তানি হ্রাসের বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়াচ্ছে। রপ্তানি কমেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বড় গন্তব্য জার্মানি, ইতালি, বেলজিয়ামেও। বড় বাজারগুলোর রপ্তানি কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে দেশের সামগ্রিক রপ্তানি আয়ে। গতকাল প্রকাশিত ইপিবির তথ্যে দেখা গেছে, নভেম্বরে রপ্তানি আয় এসেছে ৪ হাজার ৭৮৪ মিলিয়ন ডলারের। এটি আগের অর্থবছরের একই মাসের তুলনায় প্রায় ৬ শতাংশ কম।
যুক্তরাষ্ট্রে যেভাবে রপ্তানি কমেছে : রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়েও যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক ছিল। ওই মাসে ৮০৯ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ। আগের অর্থবছরের জুলাইয়ে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৭৮৬ মিলিয়ন ডলার। তবে এর পর থেকেই প্রতি মাসে কমতে থাকে রপ্তানি আয়। চলতি অর্থবছরের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি আয় সামান্য কমে ৮০৬ মিলিয়ন ডলারে নামে। সেপ্টেম্বরে বড় ধরনের পতন ঘটে আয় নেমে আসে ৬৭৫ মিলিয়ন ডলারে। এক মাসেই প্রায় ১৩১ মিলিয়ন ডলার পণ্যের রপ্তানি কমে যায়। আর অক্টোবরে ধস নামে রপ্তানিতে। আয় কমে ৫৭৪ মিলিয়ন ডলারে নেমে গেছে।
রপ্তানি কমছে ইউরোপীয় ইউনিয়নেও : বাংলাদেশি তৈরি পোশাক পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয় আসে জার্মানি থেকে। একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য জার্মানি। কিন্তু চলতি অর্থবছরে এ দেশটিতেও রপ্তানিতে ধস নেমেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর প্রান্তিকে দেশটিতে ২ হাজার ৪৪৬ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ কম। গত অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর প্রান্তিকে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৯০২ মিলিয়ন ডলার। আগের বছরের তুলনায় এবার রপ্তানি কমেছে প্রায় ৪৫৬ মিলিয়ন ডলারের। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আরেক বড় গন্তব্য ইতালিতে এত দিন রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক থাকলেও নভেম্বরে এসে নেতিবাচক হয়ে গেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর প্রান্তিকে দেশটিতে পণ্য রপ্তানি কমেছে দশমিক ৬৭ শতাংশ। এ ছাড়া গত পাঁচ মাসে বেলজিয়ামে রপ্তানি কমেছে প্রায় ১০ শতাংশ। ইইউ দেশগুলোয় পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পায়। এর পরও জার্মানি ও ইতালির মতো বড় বাজারগুলোয় দেশের রপ্তানি কমে যাওয়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক। বাংলাদশের মোট পণ্য রপ্তানির ৪৮ শতাংশের গন্তব্য ইইউভুক্ত ২৭ দেশ। আর একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বড় গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে দেশের প্রায় ৬৫ শতাংশ রপ্তানি আয় আসে। এ গন্তব্য থেকে রপ্তানি কমার কারণটি সে কারণেই বেশি উদ্বেগ ছড়াচ্ছে। এর ওপর আরও বড় আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্টের ঘোষিত শ্রমনীতি। ওই নীতি নিয়ে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, গৃহীত স্মারক নিয়ে বাংলাদেশের শঙ্কিত হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। চিঠিতে এর রাজনৈতিক ব্যবহারের বিষয়টিও তুলে ধরে বলা হয়েছে, এর ফলে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার মতো ঘোষণা আসতে পারে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গতকাল রপ্তানিতে জড়িত ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। চলতি মাসেই বাংলাদেশের শ্রম খাতের অগ্রগতির বিষয়টি (থ্রি প্লাস ফাইভ অ্যান্ড ওয়ান বৈঠক) যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর পাঁচ কূটনীতিকের কাছে তুলে ধরা হবে। এসব উদ্যোগের ফলে নিষেধাজ্ঞা এড়ানো গেলেও সেসব দেশে রপ্তানি বাড়ানোর কৌশলটি এ মুহূর্তে নেই সরকারের হাতে। সেটি নির্ভর করছে ইউরোপ-আমেরিকায় ভোক্তা চাহিদা বাড়ার ওপর। যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের দেশগুলোয় রপ্তানি কমার কারণ জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপনকান্তি ঘোষ বলেন, ‘বাংলাদেশ যেসব দেশে বেশির ভাগ পণ্য রপ্তানি করে প্রকৃত অর্থে সেই দেশগুলোর অর্থনীতি ভালো অবস্থায় নেই। মূল্যস্ফীতি বেশি হওয়ায় পশ্চিমা দেশগুলোর ভোক্তাদের চাহিদা কমে গেছে। এর ফলে আমাদের পণ্য রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।’
আরো পড়ুন : কমল জমি ফ্ল্যাট নিবন্ধন কর