যে কারণে ঢাকা-১৯ এ চমক দেখালেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল

ওকে নিউজ স্পেশাল জনপ্রতিনিধি তথ্য-প্রযুক্তি নির্বাচন পুরুষ প্রচ্ছদ মুক্তমত রাজনীতি লাইফ স্টাইল সফলতার গল্প হ্যালোআড্ডা

সাভার প্রতিনিধি: মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ছিলেন সাভার উপজেলার স্বনির্ভর ধামসোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। গত ৭ বছরে তার নির্বাচনি এলাকা ব্যাপক উন্নয়ন করে স্বনির্ভর ইউনিয়ন পরিষদকে পৌরসভার রূপান্তরের উদ্যোগ নেন মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। কিন্তু আইনি জটিলতার কারণে এই উদ্যোগ অনেকটাই স্থির হয়ে যায়।

পরে জটিলতা নিরসনে সাইফুল ইসলাম দ্বারস্থ হন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানের কাছে। এ ব্যাপারে তার সহযোগিতা না পেয়ে ইউপি চেয়ারম্যান নিজেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নেন সাইফুল ইসলাম। ঘটনাটি ২০২৪ নির্বাচনের ৭ মাস আগের।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঢাকা-১৯ আসনে অংশ নিয়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম চমক দেখিয়েছে। ঢাকা-১৯ গুরুত্বপূর্ণ আসনটিতে জ্যৈষ্ঠ নেতাদের টপকে বিপুল ভোটে সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতীকে ৮৪ হাজার ৪১২ ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। তার এই নির্বাচনি প্রতিভায় সাভার-আশুলিয়ার সর্বস্তরের জনগণের প্রশংসায় ভাসছেন।

আওয়ামী লীগের এক জ্যেষ্ঠ নেতা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৯ এ সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার মো. তৌহিদ জং ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে আমরা মনে করেছিলাম। নির্বাচনি প্রচারণার সময়ও আমাদের ধারণা ছিল মূল ভোট যুদ্ধ হবে নৌকা এবং ঈগলের মধ্যে। কিন্তু আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে, ৭ তারিখের নির্বাচনি ফলাফল শুনে অনেকেই হতভম্ব। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তাকুলদার মো. তৌহিদ জং মুরাদ ঈগল প্রতীকে ৭৬ হাজার ২০২ ভোট পেয়েছেন এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে ডা. এনামুর রহমান নৌকা প্রতীকে ৫৬ হাজার ৩৬১ ভোট পেয়েছে।

সাভার উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-১৯ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৭ লাখ ৫৬ হাজার ৪১৬। এর মধ্যে ভোট পড়েছে ২ লাখ ২২ হাজার ৬৫০টি। এর মধ্যে ভোট বাতিল হয়েছে ৪ হাজার ৯১টি এবং বৈধ ভোটের সংখ্যা ২ লাখ ১৮ হাজার ৫৫৯।

কেউ কেউ বলছেন, নৌকার ভরাডুবির কারণ প্রার্থী নিজেই। তিনি গত ১০ বছর সংসদ সদস্য হিসেবে থাকলেও তার নির্বাচনি এলাকা ঢাকা ১৯ আসনের জন্য উল্লেখযোগ্য কিছুই করতে পারেনি তিনি। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক না থাকার কারণে নৌকার ভরাডুবির কারণ মনে করেন তারা।

তারা আরও মনে করেন, সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদের সঙ্গে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীবের পূর্বে থেকেই রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ছিল। এই নির্বাচনে স্বতন্ত্র পদে মুরাদ জং প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই রাজীব তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে নৌকার হাল ছেড়ে অন্য স্বতন্ত্রের ট্রাকে উঠেন রাজীব। এরপর থেকে নৌকার বৈঠায় পানিশূন্যতা। আর এই সুযোগই লুফে নেয় সাইফুল।

ডিইপিজেড-এ কর্মরত এক কর্মকর্তা বলেন, আমার দেখা ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করেছে এমন দৃষ্টান্ত নেই বললেই চলে। অথচ স্বনির্ভর ধামসোনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম ৭ বছরে রাস্তাঘাট, কার্লভার্ট, ব্রিজ, মাদরাসা, মসজিদসহ বেশকিছু দৃশ্যমান কাজ করেছে।

যে কারণে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন সাইফুল: দুই বছর আগে স্বনির্ভর ধামসোনা ইউনিয়ন পরিষদকে পৌরসভা করার জন্য উদ্বেগ নেয় সাইফুল ইসলাম। এজন্য ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন দুই বছর স্থগিত রয়েছে। এ দিকে ক্যান্টনম্যান্ট বোর্ড ওই এলাকাটি পৌরসভা না করতে আইনি জটিলতায় ফেলে দেয় তাকে। আইনি জটিলতা এড়াতে সাবেক সংসদ এনামুর রহমানের কাছে ডিও লেটার (আধা সরকারি সুপারিশপত্র) চান তিনি। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে ডিও লেটার দেওয়ার বেশ কিছুদিন পর এনামুর রহমান তার লেটারটি অন্য পত্রের মাধ্যমে প্রত্যাহার করে। যার ফলে পৌরসভাকরণে বাধাগ্রস্ত হয়।

এতে ইউপি চেয়ারম্যানের চোট লাগে। ঘটনাটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাস সাতেক আগে। এরপর তিনি সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়। খুব অল্প সময়ে বিচক্ষণ এই নেতা সাভার উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ভোটারদের কব্জায় নিয়ে নেন।

সংসদ নির্বাচনের প্রচারণায় তার মূলমন্ত্র ছিল স্বনির্ভর ধামসোনা ইউনিয়ন পরিষদের দৃষ্টান্ত উন্নয়ন ও তার নীতি ও রাজনৈতিক আদর্শ। তাকে বলতে শোনা যায়, আমি কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ সমাজের নিকৃষ্ট লোকের ভোটে নির্বাচিত হতে চাই না। জনসভায় তার এমন বক্তব্য মানুষের মনে মুহূর্তেই জায়গা করে নেয়। এসব কারণে অতি অল্প সময়ে সাভার আশুলিয়ার ভোটারদের মন জয় করে নেয় সাইফুল।

সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার ইচ্ছে ছিল স্বনির্ভর ধামসোনা ইউনিয়ন পরিষদকে পৌরসভায় রূপান্তরিত করার। আইনি জটিলতার কারণে সম্ভব হয়নি। আমার রাজনৈতিক আদর্শ, উদ্দেশ্য, দর্শন ও উন্নয়নের অভিজ্ঞতা দেখে ঢাকা -১৯ আসনের জনগণ আমাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেছে। এই এলাকার জনগণের কাছে যেসব ইশতেহার আমি দিয়েছি দায়িত্বগ্রহণের পর থেকে তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করব।

আরো পড়ুন : নলছিটিতে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের বসতঘর পুড়ে ছাই করল দুর্বৃত্তরা

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *