সেপ্টেম্বরে শুরু হচ্ছে মূল কাজ ডিপো উন্নয়নের কাজ চলমান বিমানবন্দর-পিতলগঞ্জ রুট দুই বছর পরই খুলবে
ঢাকাবাসীকে যানজট থেকে মুক্তি দিতে ও যোগাযোগব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে পাঁচ রুটে চলবে পাতালরেল। এ রুটগুলোর মধ্যে লাইন-১ এর বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর ১৯ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার পাতালে চলবে মেট্রোরেল। এ লাইনের মূল কাজ শুরু হচ্ছে সেপ্টেম্বরে। ডিপো উন্নয়নের কাজ চলমান।
মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ ও নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনা অনুযায়ী- দুই বছর পরই ২০২৬ সালের শেষে খুলবে বিমানবন্দর-পিতলগঞ্জ রুট। লাইন-১ এর পাতাল রুট সরাসরি যুক্ত হবে থার্ড টার্মিনালের সঙ্গে। এদিকে চোখধাঁধানো বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের পূর্ণতা দিতে পাতালরেলের কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) তথ্যমতে, লাইন-১, ২, ৪ ও ৫-এর নর্দার্ন ও সাউদার্নসহ সব রুটই হবে উড়াল এবং পাতাল। এতে আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঢাকাকে নিয়ে যাওয়া হবে অত্যাধুনিক নগরীর রূপে। ইতোমধ্যে মেট্রোরেল লাইন-৬ উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল পর্যন্ত পুরোদমে চালু হয়েছে। ট্রেনের সময়সূচিও বাড়িয়ে সকাল ৭টা ১০ মিনিট থেকে রাত ৮টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি নগরবাসীর চাহিদা অনুযায়ী করা হয়েছে। আসন্ন বইমেলা ও শুরু হওয়া বাণিজ্য মেলা উপলক্ষে সময়সূচি আরও বাড়ানো হতে পারে। মেট্রোরেল লাইন-৬ এর সুবিধা ইতোমধ্যে পাওয়া শুরু করেছে নগরবাসী। বিশেষ করে উত্তরা, মিরপুর, মতিঝিল ও ফার্মগেট এলাকার অধিবাসী ও অফিসগামীরা ব্যক্তিগত গাড়ি ও পাবলিক বাস ছেড়ে মেট্রোরেলে যাতায়াত শুরু করেছেন। এতে তাদের যোগাযোগব্যবস্থায় এসেছে স্বাচ্ছন্দ্য, কমেছে সময়ের দূরত্ব। মুক্তি পেয়েছে দীর্ঘ যানজটের ভোগান্তি থেকে।
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, আমাদের পরিকল্পনা হলো ২০৩০ সালের মধ্যে সব রুটের কাজ সমাপ্ত করা। তবে যেসব লাইনের কাজ চলমান, সেগুলোর মধ্যে লাইন-১ এর কাজ দ্রুত এগোচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
যেসব রুটে চলবে পাতালরেল : লাইন-১ এর বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর ১৯ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার পাতাল এ অংশে মোট স্টেশন থাকবে ১২টি। লাইন-৫ এর নর্দার্ন রুটের আমিনবাজার থেকে নতুনবাজার পর্যন্ত ১৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার পাতাল। এ অংশে স্টেশন থাকবে ৯টি। লাইন-৫ এর সাউদার্ন গাবতলী থেকে আফতাবনগর ১৩ দশমিক ১০ কিলোমিটার পাতাল। এ অংশে স্টেশন থাকবে ১১টি। লাইন-২ এর গাবতলী-নিউমার্কেট-গুলিস্তান-কমলাপুর-সাইনবোর্ড হয়ে নারায়ণগঞ্জ রুটের প্রায় অর্ধেক অংশে চলবে পাতালরেল। লাইন-৪ এর কমলাপুর-সাইনবোর্ড নারায়ণগঞ্জ জেলার মদনপুর পর্যন্ত প্রায় অর্ধেক অংশে চলবে পাতালরেল।
জানা গেছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল পুরোদমে চালু হবে আগামী অক্টোবরে। এদিকে এ টার্মিনালের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হবে মেট্রোরেল লাইন-১। যা মূলত পাতালরেল নামে পরিচিতি পেতে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে পাতালরেলের যুগে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ।
অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত থার্ড টার্মিনালকে পূর্ণতা দিতে এই পাতালরেলের কাজ দ্রুত করার নির্দেশনা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। কেননা থার্ড টার্মিনাল ব্যবহারকারী যাত্রীরা পাতালরেলের সুবিধা নিতে পারবেন সরাসরি। যার মাধ্যমে টার্মিনাল থেকে বেরিয়ে শহরে ঢুকতে পারবেন পাতালরেলের মাধ্যমে। আবার পাতালরেলের মাধ্যমে থার্ড টার্মিনাল ধরে ফ্লাই করতে পারবেন। এতে যোগাযোগব্যবস্থা হবে অত্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্যের। সময়েরও সাশ্রয় হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। জানা গেছে, মেট্রোরেল লাইন-১ এর আওতায় দুটি রুট নির্মাণ করা হচ্ছে। একটি রুট হযরত শাহজালাল (রহ.) বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার অংশ। এটি মাটির নিচ দিয়ে যাবে। নতুনবাজার থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত ১১ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার রেললাইন উড়ালপথে যাবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে ৫২ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৬ সাল পর্যন্ত। এ অংশের প্যাকেজ-১ এর কাজের অগ্রগতি হয়েছে ২৯ শতাংশ। এ ছাড়া বাকি ১১টি প্যাকেজের কাজের দরপত্র আহ্বান প্রক্রিয়াধীন বলে জানা গেছে।
লাইন-১ বাস্তবায়নের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। তবে লাইন-৬ বাস্তবায়নের সময় ঢাকাবাসীকে যে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে তা হবে না পাতালরেল নির্মাণের ক্ষেত্রে। কেননা পাতালরেলের লাইন স্থাপনের সব ধরনের কাজই সম্পন্ন হবে মাটির নিচে। ফলে মাটির ওপরে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। এ ছাড়া পৃথিবীর যেসব শহরে মেট্রোরেল সফল ও জনপ্রিয় তার বেশির ভাগই মাটির নিচে। অবশ্য সেগুলো সাবওয়ে নামে পরিচিত।
ডিটিএমসিএলের ওয়েবসাইটে থাকা লাইন-১ এর অগ্রগতি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পের দুটি লাইন থাকবে। হযরত শাহজালাল (রহ.) বিমানবন্দর থেকে মাটির নিচ দিয়ে কমলাপুর পর্যন্ত এই পাতাল পথে রেলের স্টেশন থাকবে ১২টি। স্টেশনগুলোর নির্ধারিত জায়গাগুলোর মধ্যে রয়েছে-কমলাপুর, রাজারবাগ, মালিবাগ, রামপুরা, আফতাবনগর, বাড্ডা, উত্তর বাড্ডা, নতুনবাজার, নর্দা, খিলক্ষেত, বিমানবন্দর টার্মিনাল-৩ এবং বিমানবন্দর। এমআরটি লাইন-১ এর অপর অংশ নতুনবাজার থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত উড়ালপথে। স্টেশন থাকবে ৭টি। সেগুলোর নির্ধারিত জায়গা হলো-জোয়ারসাহারা, বোয়ালিয়া, মস্তুল, শেখ হাসিনা ক্রিকেট স্টেডিয়াম, পূর্বাচল সেন্ট্রাল, পূর্বাচল পূর্ব এবং পূর্বাচল টার্মিনাল। এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পের দৈর্ঘ্য হবে ৩১ দশমিক ২৪১ কিলোমিটার। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ হবে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। ৪০ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। বাকি ১২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা খরচ করবে বাংলাদেশ সরকার।
এমআরটি লাইন-১ চালু হলে এই রুটে প্রতিদিন ৮ লাখ যাত্রী চলাচল করতে পারবেন। বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর যেতে সময় লাগবে ২৪ দশমিক ৩০ মিনিট। নতুনবাজার থেকে পূর্বাচল যেতে সময় লাগবে ২০ দশমিক ৩৫ মিনিট। এমআরটি লাইন-১ এর প্রতিটি পাতাল স্টেশন হবে তিনতলা। টিকিট কাউন্টার ও অন্যান্য সুবিধা থাকবে প্রথম বেজমেন্টে। প্ল্যাটফরম থাকবে দ্বিতীয় বেজমেন্টে। উড়াল স্টেশনের টিকিট কাউন্টার এবং প্ল্যাটফরম থাকবে তিনতলায়। যাত্রীদের চলাচলের জন্য উড়াল ও পাতাল- দুই পথের স্টেশনেই থাকবে লিফট, সিঁড়ি ও এস্কেলেটর সুবিধা। স্টেশনগুলোয় পর্যাপ্ত বাতাস ও অক্সিজেনের প্রবাহ ঠিক রাখতে থাকবে অতিরিক্ত ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা।
আরো পড়ুন : ‘তিনজন মেয়ে ও এক পেয়ালা বিষ’ হলো জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’