রহমতের আর মাগফেরাতের পর নাজাত লাভের দিন শুরু

জাতীয় ধর্ম প্রচ্ছদ লাইফ স্টাইল শিক্ষা হ্যালোআড্ডা

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন: পবিত্র মাহে রমজানের প্রথম ১০ দিন রহমতের, মধ্যবর্তী ১০ দিন মাগফেরাতের এবং শেষাংশ হচ্ছে জাহান্নাম থেকে মুক্তি তথা নাজাতের দশক। রহমত, বরকতের বার্তা দিয়ে যার শুরু, মাগফেরাত তথা ক্ষমাপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা যার মধ্যাংশে, তারই ধারাবাহিকতায় দোজখের অনলকুণ্ড থেকে পরিত্রাণ তথা সামগ্রিক নাজাত লাভের খোশ খবর রয়েছে এর শেষাংশে। আমরা আজ পবিত্র রমজানের ২১তম দিবস থেকে সেই প্রত্যাশিত সময় অতিক্রম করছি।

আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে মানুষ সৃষ্টি করে মহান রব আমাদের জীবনযাপনের উপযুক্ত নির্দেশনাও প্রদান করেছেন। পাপ-পুণ্যের অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণের পরিপ্রেক্ষিতে বেহেশত আর দোজখে মানুষের জন্য চিরনিবাসের ব্যবস্থা করা হবে। কোনো ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কাজের হিসাবও বাদ যাবে না অন্তিম বিচারে। কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখতে পাবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে। কিন্তু যখনই কোনো ব্যক্তির অসৎকর্মের পাল্লা ভারী হয়ে যাবে, তারই আবাসস্থল হিসেবে জাহান্নাম নির্ধারিত হবে। বস্তুত আমরা কেউ তা চাই না। সুতরাং, রমজানের এই শেষ দশক আমাদের দ্বারে সমুপস্থিত সেই জাহান্নাম থেকে মুক্তির বার্তা নিয়ে; সিয়াম সাধনার এই বরকতমণ্ডিত সময়ে বেশ কিছু আমলের মাধ্যমে আমরা দোজখের অগ্নি থেকে পরিত্রাণের সুযোগ লাভ করতে পারি। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণের কর্মপ্রক্রিয়াগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো– পরনিন্দা-পরচর্চা থেকে দূরে থাকা, প্রতিদিন তাকবির, তাহমিদ, তাহলিল ও তাসবিহ পাঠ করা, সালাতে মনোযোগী হওয়া, বেশি বেশি করে মহান রবের বিশালত্বের স্বীকৃতি প্রদান করা, দান-খয়রাতে অভ্যস্ত হওয়া, মানুষের সঙ্গে সর্বোত্তম ব্যবহার করা, পাপাচার থেকে দৃষ্টিকে সংযত রাখা, ফরজ রোজার পাশাপাশি নফল রোজা পালন করা, কন্যাসন্তানের উত্তম প্রতিপালন ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য মহান আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করা। মহানবী (সা.) বলেন, ‘আল্লাহুম্মা আজিরনা মিনান্নার’– এই দোয়া যে অধিক পরিমাণে পাঠ করবে, সে দোজখ থেকে নাজাত লাভ করবে।

মহান প্রভুর দরবারে অধিক হারে জান্নাতের প্রত্যাশা ও প্রার্থনার পাশাপাশি জাহান্নামের শাস্তি থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য সবসময় দোয়া করা উচিত। তারাবির নামাজ শেষে আমরা মহান আল্লাহর কাছে মোনাজাতে বলি, ‘আল্লাহুম্মা আন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনান্নার ইয়া খালিকাল জান্নাতি ওয়ান্নার।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমরা তোমার কাছে জান্নাতের প্রত্যাশা করি এবং জাহান্নাম থেকে পানাহ চাই; ওহে জান্নাত এবং জাহান্নামের সৃষ্টিকর্তা পরম রব, তুমি আমাদের প্রার্থনা কবুল করো। আমরা এভাবেও মহান আল্লাহর কাছে মিনতি করতে পারি, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিন আযাবিল ক্বাবর ওয়া মিন আযাবি জাহান্নাম ওয়া মিন ফিতনাতিল মাহয়া ওয়াল মামাত ওয়া মিন শাররিল ফিতনাতিল মাসিহিদ্‌ দাজ্জাল।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! কবরের আজাব থেকে তুমি আমাকে রক্ষা করো, একইভাবে জাহান্নামের শাস্তি এবং জীবন-মৃত্যুর বিপর্যয় থেকে বাঁচাও এবং দাজ্জালের ফেতনা থেকেও রক্ষা করো।

উম্মুল মুমেনিন হজরত আয়শা (রা.) বলেন– রাসুল (সা.) রমজানের শেষ দশকে অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে অধিক পরিমাণে ইবাদতে মনোনিবেশ করতেন। তিনি নিজে রাত জাগরণ করতেন এবং পরিবারের সদস্যদেরও জাগিয়ে দিতেন। এহেন মনোযোগের অন্যতম কারণ ছিল, এই শেষ ১০ দিনগুলোর কোনো এক বেজোড় রাতে সহস্র মাসের চেয়েও অধিক বরকতের মহিমান্বিত শবেকদর রয়েছে; কদরের পবিত্র রজনীতে পরম রবের বন্দেগির মাধ্যমে অভীষ্ট লক্ষ্য হলো জাহান্নাম থেকে মুক্তি। এমনকি মহানবী (সা.) এই ১০ দিন মসজিদে নিরবচ্ছিন্ন কাটাতেন এবং অন্যদেরও এ বিষয়ে উৎসাহ ও পরামর্শ দিতেন। মূলত রমজানের শেষ ১০ দিনের বরকত উম্মতে মোহাম্মদির (সা.) জন্য বিরাট এক প্রাপ্তি; যা অন্য কোনো উম্মতের ভাগ্যে জোটেনি। তাই নাজাত প্রাপ্তির মোক্ষম সময় পেয়েও যারা সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি, তাদের চেয়ে দুর্ভাগা-হতভাগ্য আর নেই। সে কারণেই মহানবী (সা.) বলেছেন– যে ব্যক্তি মাহে রমজানকে পেল এবং এর বরকতে নিজের গোনাহগুলো ক্ষমা করাতে পারেনি, সে ধ্বংস হয়ে যাক।

আমরা নাজাত পেতে চাই, পরম রবের বিরাগভাজন হতে চাই না। তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে জীবনে সফল হতে চাই। আল্লাহ বলেন– ‘ফামান যুহযিহা আনিন্নার ওয়া উদখিলাল জান্নাতা ফাকাদ ফাযা।’ অর্থাৎ সেই প্রকৃত সফল, যে জাহান্নাম থেকে দূরে রয়েছে এবং জান্নাতে প্রবিষ্ট হয়েছে। আমরা জাহান্নামের ভয়াবহ অগ্নিতে প্রজ্বলিত হতে চাই না, বরং বরকতময় মাহে রমজানের চলমান শেষাংশে একনিষ্ঠ চিত্তে, নিরবচ্ছিন্ন ও গভীর মনোযোগের সঙ্গে পরম প্রভুর ইবাদতের মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে নাজাত পেতে চাই। তাই আসুন, বেশি বেশি করে পাঠ করি ‘আল্লাহুম্মা আজিরনা মিনান্নার।’ হে আল্লাহ! জাহান্নামের আগুন থেকে তুমি আমাদের রক্ষা করো। আমিন

চেয়ারম্যান, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আরো পড়ুন: বিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন রেকর্ড কেরল দেশ

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *