‘রহস্যের আগুনে’ পুড়ছে মার্কেট- ব্যবসায়ীরা বলছে পরিকল্পিত

অর্থনীতি জনদুর্ভোগ প্রচ্ছদ হ্যালোআড্ডা

সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন মার্কেটগুলোতে একের পর এক অগ্নিকাণ্ডে দিশেহারা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। বারবার কেন টার্গেট হচ্ছে সরকারি মালিকানার বাণিজ্যিক মার্কেটগুলো?

এমন প্রশ্নের জবাব ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরাই দিয়েছেন। তারা বলেছেন, যেসব মার্কেট ভেঙে বহুতল ভবন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সেসব মার্কেটই পুড়ছে ‘রহস্যের আগুনে’। গত ছয় মাসে এ ধরনের অন্তত তিনটি ঘটনার পর ব্যবসায়ীরা পরিকল্পিত অগ্নিকাণ্ডের অভিযোগ তুলেছেন।

বঙ্গবাজার, নিউ সুপার মার্কেটের পর এবার আগুনে পুড়ে ছারখার মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট। এবারও পরিকল্পিত আগুনের অভিযোগ উঠেছে। ক্ষতিগ্রস্তরা বলছেন, সিটি করপোরেশনের যে মার্কেটগুলো ভেঙে পাকা বহুতল ভবন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সেই মার্কেটগুলোতেই আগুন ধরছে। এমনকি আগুনের সূত্রপাতও হচ্ছে শেষ রাতের দিকে। ভোরের আলো ফোটার আগেই দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠা আগুনে নিঃস্ব হচ্ছেন তারা।

বৃহস্পতিবার দুপুরে কৃষি মার্কেটের আগুন পরিদর্শনে গিয়ে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন একই ইঙ্গিত দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, ‘আমাদের এই মার্কেটগুলো কাঁচা। দীর্ঘদিন ধরে মার্কেটগুলো গড়ে উঠেছে। এগুলো পরিকল্পিত মার্কেট না, সেটা আমরা সবাই জানি। সিটি করপোরেশনের যে মার্কেটগুলো ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, যে মার্কেটগুলো পাকা করার সিদ্ধান্ত হচ্ছে, সেই মার্কেটগুলোই আগুনে জ্বলছে। আমরা এর আগেও বঙ্গবাজারসহ অন্যান্য মার্কেট দেখলাম, এবার দেখলাম কৃষি মার্কেট।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বেশ কিছু কাঁচা মার্কেট ভেঙে বহুতল পাকা মার্কেট তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এসব মার্কেটের ব্যবসায়ীদের একাধিকবার উচ্ছেদের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে তারা। মার্কেট ছেড়ে দিতে ব্যবসায়ীদের নোটিশ করা হলেই তারা উচ্চ আদালতে গিয়ে আটকে দেন। ফলে সিদ্ধান্ত হওয়ার পরও নতুন মার্কেট ভবন নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না। আর এমন আইনি জটিলতায় থাকা মার্কেটগুলোই একের পর এক আগুনে পুড়ছে।

গত এপ্রিল মাসে স্মরণকালের ভয়াবহ আগুনে শত শত কোটি টাকার মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ঈদের আগে ঘটে যাওয়া ওই অগ্নিকাণ্ড সম্পর্কে ব্যবসায়ীরা প্রকাশ্যে বলেছিলেন, ‘মার্কেট খালি করতে পরিকল্পিতভাবে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারণ সিটি করপোরেশন দীর্ঘদিন ধরে মার্কেটটি খালি করার চেষ্টায় ছিল। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় তারা মার্কেট থেকে ব্যবসায়ীদের তুলতে না পেরে আগুনে পুড়িয়ে মার্কেট খালি করেছে। এরপর নতুন করে বঙ্গবাজারে আর স্থাপনা তৈরি করতে দেওয়া হয়নি।

একই মাসে নিউমার্কেট এলাকার নিউ সুপার মার্কেটে ঘটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। এই মার্কেটটিও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে ঘোষণা করা আছে। মার্কেটি ভেঙে নতুন করে বহুতল ভবন তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বঙ্গবাজার ও নিউ সুপার মার্কেটে আগুন ধরে শেষ রাতের দিকে। নগরবাসীর ঘুম ভাঙার আগেই আগুনের লেলিহান শিখা কুণ্ডলী পাকিয়ে উড়তে থাকে আকাশে। যা দেখে হতবাক হয় মানুষ। সবশেষ কৃষি মার্কেটে আগুনের ঘটনাও প্রায় কাছাকাছি সময়ে। রাত সাড়ে তিনটার দিকে এই মার্কেটে আগুন ধরে।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা পাকা মার্কেট চাই। আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে আমরা পাকা মার্কেট করতে চাই না। এটার কোনো যৌক্তিকতা নেই। সিটি করপোরেশন যদি মনে করে এই মার্কেট চলবে না, তাহলে আগে বলে ব্যবসায়ীদের অন্যত্র ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ দিয়ে মার্কেট ভাঙতে হবে। নতুন মার্কেটে কত দিনের মধ্যে দোকান বুঝিয়ে দেবে তার নিশ্চয়তা দিতে হবে। দাম কেমন হবে সেটাও আগে জানিয়ে দিতে হবে।’

নূরুজ্জামান নামের এক ব্যবসায়ী জানান, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা নতুন তৈরি করা মার্কেটে দোকান পান না। আবার এমন দাম ধরেন যা দিয়ে ক্ষুদ্র দোকানদাররা দোকান কিনতে পারবেন না-এমন ভয় থাকায় কাঁচা মার্কেট ছেড়ে দোকানদাররা যেতে চান না।

শাকিল নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, আগুন লাগার পর চলে তদন্ত তদন্ত খেলা। একাধিক সংস্থা তদন্ত কমিটি করে। কিন্তু আমাদের পোড়া কপাল জোড়া দিতে কেউ এগিয়ে আসে না। প্রতিটি তদন্ত কমিটি তদন্ত শেষে গৎবাঁধা রিপোর্ট দেয়। যা দোকানদারদের কোনো কাজে আসে না।

বিক্ষুব্ধ এক ব্যবসায়ী উচ্চ কণ্ঠে বলেন, ‘প্রতিটি মার্কেটে এমনভাবে আগুন লাগে যে, সব পুড়িয়ে শেষ করে দেওয়ার আগে কেউ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে না। এটা কিসের ইঙ্গিত। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে তিনি বলেন, এই দ্যাখেন বেলা দুইটার সময়ও আগুন নেভে নাই। আমরা এর বিহিত চাই।’

উত্তেজিত কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘কোনো বেসরকারি ভবনে আগুন ধরলে মালিককে গ্রেফতার করে জেলে দেওয়া হয়। এই মার্কেটের মালিক সিটি করপোরেশন। এরাই মার্কেট রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে। অবহেলায় আগুন ধরলে এদের এখন জেলে দেবে কে? সিটি করপোরেশনের দায়িত্বশীলদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। ফলে একের পর এক এমন রহস্যের আগুনে ব্যবসায়ীদের স্বপ্ন পুড়ে ছাই হচ্ছে।

আরো পড়ুন : পাকিস্তানকে ২ উইকেটে হারিয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠল শ্রীলঙ্কা

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *