বছরজুড়ে রাজধানীর কিছু কিছু এলাকায় গ্যাস সংকট লেগেই থাকে। রাজধানীবাসী এই সংকট মেনে না নিলেও খুব বেশি প্রতিবাদেও কখনো সোচ্চার হয়নি। তবে, এবার রোজার প্রথম দিনে এমন সংকট তারা মানতে পারছেন না। তারা বলছেন, সারাদিন রোজা রাখার পর পরিবারের সদস্যদের জন্য ইফতার ও সেহরি তৈরি করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়েতে হচ্ছে। এদিকে, গ্যাস সংকট নিয়ে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগামী ১০ এপ্রিল পর্যন্ত এ সমস্যায় পড়তে হবে রাজধানীবাসীকে।
জানা গেছে রবিবার (৩ এপ্রিল) থেকে রাজধানীর জিগাতলা, শ্যামলী, কল্যাণপুর, আগারগাঁও, শেওড়াপাড়া, মোহাম্মদপুর, কাফরুল, আদাবর, বনশ্রী, রামপুরা, বসুন্ধরা আবাসিক, আজিমপুর, লালবাগ, এলিফ্যান্ট রোড, গ্রিন রোড, মতিঝিল, সেগুনবাগিচা, নারিন্দা, ওয়ারিসহ ডেমরা, যাত্রাবাড়ি, মালিবাগ, খিলগাও, পুরান ঢাকার বেশ কয়েকটি এলাকা। এছাড়া মিরপুর ১, ২ ও ১০ নম্বর এলাকায়ও গ্যাসের সংকটে ইফতারি ও সেহরির রান্নার কাজ করতে ভোগান্তিতে পড়েছেন অনেকেই।
এসব এলাকায় হোটেল ও ইফতারের দোকানগুলোতে তীব্র ভিড় দেখা গেছে ক্রেতাদের। অনেক ক্রেতাকেই ইফতার না কিনেই বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে। কেউ কেউ বাসায় থাকা কেরোসিনের স্টোভ, ইনডাকশন ও লাকরির চুলায় কোনমতে রান্নার কাজ চালাচ্ছেন।
ভুক্তভোগীরা ইত্তেফাক অনলাইনকে জানান, পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই রমজানের প্রথম দিন থেকে এভাবে গ্যাস না থাকায় তাদের বিপাকে পড়তে হয়েছে। এটা রমজানে কোনোভাবেই কাম্য নয়।
ডেমরার বাসিন্দা বাবুল আক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘মাসজুড়ে গ্যাস থাকে না। তারপরও বিল দিতে হচ্ছে পুরোটাই। প্রতিদিনই গ্যাস থাকছে না দিনের বেশিভোগ সময়। এরপর বিকালে গ্যাস এলেও জ্বলে মিটমিট করে। সেই গ্যাস দিয়ে রান্না তো হয়ই না, পানিও গরম করাও যায় না।’
পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, বিবিয়ানার ছয়টি কূপ থেকে গত রাতে গ্যাস উত্তোলনের সময় বালি উঠতে শুরু করে। এ কারণে বন্ধ করে দিতে হয় উৎপাদন। এতে রাতে প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সংকট দেখা দেয়। কূপ মেরামত কাজ চলছে জানিয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্যাস সরবরাহ পুরো স্বাভাবিক হতে ১০ই এপ্রিল পর্যন্ত লেগে যেতে পারে।
রবিবার (৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তিতে বিদ্যুৎ ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় জানায়, ‘বিবিয়ানা ক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন হঠাৎ করে সমস্যা তৈরি হওয়ায় তার প্রভাব পড়ে সারা দেশে। বিশেষ করে রাজধানীর গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থায়। শেভরন পরিচালিত এই গ্যাসক্ষেত্রে জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছে। অভিজ্ঞ প্রকৌশলীরা মেরামতের কাজ করে যাচ্ছেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে আশা করা যাচ্ছে। গ্রাহকদের সাময়িক অসুবিধার জন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছে।’
ধানমন্ডি এলাকার বাসিন্দা হিমিকা আহমেদ বলেন, ‘অন্য সময় গ্যাস না থাকলে আগে থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়। এবার সেটা করা হয়নি। খোঁজ নিয়ে জেনেছি, আমাদের এলাকাসহ ঢাকায় আমাদের অন্যান্য স্বজনদের বাড়িতেও গ্যাস নেই। সবাই ভোগান্তিতে পড়েছেন। এটি একেবারেই গ্রহণযোগ্য না।’
বসুন্ধরা এলাকার ইয়াকুব হোসেন বলেন, ‘কাল সকাল থেকে গ্যাসের সংকটে নিভু নিভু করে চুলা জ্বলছে। কোনো কিছুই করা যাচ্ছে না। রমজানে এ রকম পরিস্থিতি হবে চিন্তাও করা যায় না। বাধ্য হয়ে স্টোভে রান্না করতে হয়েছে।’
রাজধানীজুড়ে গ্যাস সংকট নিয়ে তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. রবিউল আওয়াল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এলএনজি আমদানিতে কাজ করা দুটি টার্মিনালের একটিতে সমস্যা দেখা দেওয়ায় সেটা মেরামতের কাজ চলছে। এ কারণে গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তবে, কাজ খুব দ্রুত গতিতে চলছে। মেরামত শেষ হলে আশা করা যায় গ্যাস সংকট কমে আসবে।’
এদিকে, গ্যাসের উৎপাদন কমে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনেও বিঘ্ন ঘটছে। রবিবার দুপুরে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর ফেসবুক পেজে বলা হয়েছে, ‘বিবিয়ানা গ্যাস ক্ষেত্রের জরুরি মেরামত ও সংরক্ষণ কাজের জন্য গ্যাস সরবরাহে ঘাটতিজনিত কারণে কিছু কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটছে। ফলে কোনো কোনো এলাকায় সাময়িকভাবে সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে। এই অসুবিধার জন্য মন্ত্রণালয় আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছে।’
আরো পড়ুন : পাঁচ থেকে সাত মিনিটের রাস্তায় আধা ঘণ্টা পার