আওয়ামী লীগের এমপিদের সঙ্গে প্রকাশ্য বিরোধ স্থানীয় নেতাদের। সব উপজেলায় আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত। মনোনয়ন অর্জন প্রশ্নে নেতারা বিভক্ত হয়েছিলেন। সেই বিভক্তি এখনো মেটেনি। মনোনয়ন ঘোষণার পর সবগুলো আসনেই দলের একাধিক নেতা প্রার্থী হয়েছেন। পক্ষে-বিপক্ষে চলছে কথার লড়াই।
২০০৮ সালের পর রাজশাহীতে বদলে যেতে থাকে আওয়ামী লীগের অবস্থান। স্বাধীনতা পরবর্তী নির্বাচনগুলোয় এমন সাফল্য পায়নি দলটি। এরপর থেকে টানা তিন মেয়াদে জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ ও তাদের জোট সঙ্গীরা এমপি।
রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী এবারও মনোনয়ন পেয়েছেন। তবে তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে চারজন স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। প্রাথমিক বাছাইয়ে সেই মনোনয়নপত্রগুলো বাতিল হয়ে যায়। ওই আসনটিতে এখনো ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মাঠে চারজন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারা ফারুক চৌধুরীকে ইঙ্গিত করে দিচ্ছেন পোস্ট।
রাজশাহী-২ (সদর) আসনটি আওয়ামী লীগের জোট সঙ্গী ওয়ার্কার্স পার্টির। কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার। তার সঙ্গে শীতল সম্পর্ক নগর আওয়ামী লীগের। এবার তিনি প্রার্থী হয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে নগর সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামালকে। আসনটিতে দলীয় প্রার্থী রাখতে আওয়ামী লীগ নেতারা ফজলে হোসেন বাদশাকে কথার বাণে জর্জরিত করছেন। ফজলে হোসেন বাদশা অবশ্য জানিয়েছেন, জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন হবে। আওয়ামী লীগের নেতারা ১৭ তারিখের পর তার পক্ষেই কাজ করবেন।
রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে দুবার বিজয়ী হয়েছেন আয়েন উদ্দিন। এবার সেখানে মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ। তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আয়েন উদ্দিন। এরপর থেকে উত্তপ্ত পবা-মোহনপুরের রাজনীতি। ইতোমধ্যে দুই পক্ষের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, দলের নেতা-কর্মীরা তার সঙ্গেই আছেন।
রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনটির এমপি এনামুল হক। নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগে একাধিকবার দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। নিজ স্বার্থে আত্মস্বীকৃত সর্বহারা সদস্যদের নিয়ে এসেছেন দলীয় পদে। এবার দল তার ওপর আস্থা রাখেনি। মনোনয়ন পেয়েছেন তাহেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ। এ আসনটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান এমপি এনামুল হক। দলীয় নেতা-কর্মীরাও এখানে বিভক্ত দুই শিবিরে। আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ জানান, দলীয় নেতা-কর্মীরা তার সঙ্গেই আছেন। টাকা দিয়ে এনামুল হক কিছু লোককে তার সঙ্গে রাখার চেষ্টা করছে। তবে ১৮ তারিখের পর সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।
রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের এমপি ডা. মনসুর রহমান। স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তার উপস্থিতি নেই বললেই চলে। সেখানে আওয়ামী লীগ বিভক্ত এমপি মনসুর ও জেলার সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারার নামে। যার প্রভাব পড়েছে বিগত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে। এবার আওয়ামী লীগ আবদুল ওয়াদুদ দারাকে মনোনয়ন দিয়েছে। দলের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান এমপি ডা. মনসুর রহমান।
রাজশাহী-৬ (চারঘাট-বাঘা) আসনের এমপি শাহরিয়ার আলম। চারঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগকে ঐক্যবব্ধ করতে পারলেও বাঘা উপজেলায় তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র আক্কাস আলী। এ ছাড়া শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে শীতল সম্পর্ক উপজেলা চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দিন লাভলুর সঙ্গে। দল আবারও তাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। এ আসনটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাবেক এমপি রায়হানুল হক।
আরো পড়ুন : ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় যুক্ত হলো ইফতার