রূপগঞ্জের অধিকাংশ ভোট কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ

অনুসন্ধানী ক্রাইম নিউজ জনদুর্ভোগ জনপ্রতিনিধি জাতীয় তথ্য-প্রযুক্তি নির্বাচন প্রচ্ছদ মুক্তমত রাজনীতি হ্যালোআড্ডা

নিজস্ব প্রতিবেদক : নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, উত্তপ্ত হয়ে উঠছে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের পরিবেশ। সংঘটিত হচ্ছে সন্ত্রাসীরা। বাড়ছে সহিংসতা। আসন্ন নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে ১৮৫টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৬৩টিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ। তবে নির্বাচনি বিভিন্ন সহিংসতার কারণে নৌকাবিরোধী প্রার্থীরা রূপগঞ্জের অধিকাংশ ভোট কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন। গত কয়েকদিনে আগ্নেয়াস্ত্রসহ সন্ত্রাসী গ্রেফতার, স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রচারে হামলা, নির্বাচনি ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন সহিংসতার ঘটনা এ আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলেছে। এমন পরিস্থিতিতে চরম আতঙ্কে রয়েছেন রূপগঞ্জের ভোটাররা। আসন্ন নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, স্বতন্ত্রসহ নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে প্রার্থী নয়জন। তবে মাঠে তৎপর রয়েছেন নৌকার প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজী, কেটলি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী সদ্য পদত্যাগ করা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান ভূঁইয়া, তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব ড. তৈমূর আলম খন্দকার, জাতীয় পার্টির মো. সাইফুল ইসলাম ও জাকের পার্টির মো. যোবায়ের আলম। আসনটিতে মোট ভোটার ৩ লাখ ৮৫ হাজার ৬১৬ জন। কিন্তু সহিংসতার কারণে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে সন্দিহান প্রার্থীরা। নির্বাচন ঘিরে গত কয়েকদিনে রূপগঞ্জে বাড়ছে সহিংসতার ঘটনা। সোমবার রাতে উপজেলার গোলাকান্দাইল থেকে গাজীর সমর্থক মাহফুজকে বিদেশি পিস্তল, মাদকসহ গ্রেফতার করে পুলিশ। এদিন নাওড়া ও পোনাব এলাকায় কেটলি প্রতীকের ক্যাম্প পুড়িয়ে দেয় সন্ত্রাসীরা। গুতুলিয়ায় কেটলি সমর্থকের বাড়িতে হামলা চালিয়ে টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করা হয়। এর আগে কালনী বাজারে কেটলির ক্যাম্প পুড়িয়ে দেওয়া হয়। চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রের শাহিন নামে এক বাস ড্রাইভারকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে জখম করে নৌকার সমর্থকরা। কিছুদিন আগে গাজীর সমর্থক কাঞ্চন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসূল কলির সন্ত্রাসী বাহিনী প্রকাশ্যে কাঞ্চন বাজারে বড় বড় রামদা, চাপাতি ও অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে এক মিষ্টির দোকানে হামলা করে। কেটলি প্রতীকে গণসংযোগের সময় ৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধাকে পিটিয়ে আহত করে গাজীর সমর্থক ডাকু শমসের মেম্বার ও তার বাহিনী। এসব কর্মকাণ্ডের কারণে রূপগঞ্জে সুষ্ঠু ভোট অনুষ্ঠান নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে।

স্থানীয়রা বলছেন, রূপগঞ্জ আসনে দীর্ঘ ১৫ বছর ক্ষমতায় আছেন গোলাম দস্তগীর গাজী। এ সময়ে সাধারণ মানুষের হাজার হাজার বিঘা জমি দখল, মাদক ব্যবসায়ীদের শেল্টার, প্রকৃত আওয়ামী লীগারদের সরিয়ে হাইব্রিডদের মূল্যায়ন, নিজের পরিবারের নামে সব সেতু, স্কুল-কলেজ, কমিউনিটি সেন্টারের নামকরণ, শত শত ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীকে অবমূল্যায়ন ও নিজস্ব বলয়ের সন্ত্রাসীদের দ্বারা রূপগঞ্জে একক শাসন কায়েম করায় জনপ্রিয়তায় চরম ভাটা পড়েছে গাজীর। সদ্য পদত্যাগ করা তিনবারের উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান ভূঁইয়া আসন্ন সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় রূপগঞ্জের দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। ভোটের মাঠে উপযুক্ত বিকল্প পাওয়ায় গাজীর অপশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষ। ফলে রূপগঞ্জে এবার নৌকার ভরাডুবির সম্ভাবনা রয়েছে। ভরাডুবি ঠেকাতে রূপগঞ্জে সন্ত্রাসীদের সংগঠিত করা হচ্ছে। এতে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে রূপগঞ্জের অধিকাংশ ভোট কেন্দ্র। এদিকে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ ১২৮ কেন্দ্রের মধ্যে ৬৩টিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তবে প্রশাসন শক্ত অবস্থানে না থাকলে রূপগঞ্জের প্রতিটি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন ভোটার ও প্রার্থীরা।

এ ব্যাপারে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. শাহজাহান ভূঁইয়া বলেন, ‘গত ১৫ বছরে বিভিন্ন সন্ত্রাসী দিয়ে রূপগঞ্জে একটি গাজীলীগ তৈরি করেছেন গোলাম দস্তগীর গাজী। নির্বাচনি প্রচারকালে তার বাহিনীর সন্ত্রাসীরা ৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধার ওপর হামলা করে মারধর করেছে, আমার কেটলি প্রতীকের বিভিন্ন ক্যাম্পে আগুন দিয়েছে, প্রকাশ্যে ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলাসহ একের পর এক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে। রূপগঞ্জে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কায় আছি। এখানকার অধিকাংশ কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ।’

তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী ড. তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, ‘রূপগঞ্জে নৌকার পক্ষে প্রচুর টাকা বিলি করা হচ্ছে। এ ছাড়া ভোটারদের বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। প্রশাসন যদি নিরপেক্ষ না থাকে, তাহলে রূপগঞ্জে সুষ্ঠু ভোট হবে না, আর কেন্দ্রগুলোও ঝুঁকিপূর্ণ থাকবে।’

জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘নৌকার পক্ষে সন্ত্রাসীরা মাঠে নেমেছে। অবৈধভাবে টাকা বিলানো হচ্ছে। সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কায় আছি। ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দিতে পারে। এখানকার সব কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছি।’

এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) যোবায়ের হোসেন বলেন, রূপগঞ্জে ৬৩টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে সব কেন্দ্রেই পুলিশ তৎপর থাকবে।

সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আহসান মাহমুদ রাসেল বলেন, ‘আমরা ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র মূলত চিহ্নিত করি কোনো কেন্দ্র যদি উপজেলা থেকে দুর্গম এলাকায় হয়, যোগাযোগব্যবস্থা খারাপ হয়। রূপগঞ্জের কেন্দ্রগুলোয় যোগাযোগব্যবস্থা তেমন খারাপ নেই, তবু কিছু কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে আমরা কাজ করছি। রূপগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথেষ্ট তৎপর রয়েছে। নির্বাচন ঝুঁকিমুক্ত ও সুষ্ঠু হবে আশা করি।’

এদিকে নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে যমুনা ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ না দিতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল এ-সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী ড. তৈমূর আলম খন্দকারসহ রূপগঞ্জের একাধিক প্রার্থীর অভিযোগের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন এ নির্দেশনা দেয়। জানা গেছে, অন্য দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অভিযোগ, নির্বাচনি প্রচারের শুরু থেকেই রূপগঞ্জের স্থানীয় সংসদ সদস্য বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী তার সংঘবদ্ধ সশস্ত্র সন্ত্রাসী দিয়ে স্বতন্ত্র ও অন্য দলীয় প্রার্থীদের প্রচারকাজে নানাভাবে বাধা সৃষ্টি করে আসছেন। যমুনা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি ব্যাংকের বেশ কিছু কর্মকর্তাকে সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছেন। এসব কর্মকর্তা দিয়ে যাতে ভোট কেন্দ্রে অনৈতিক সুবিধা নিতে না পারে, এজন্য রূপগঞ্জের একাধিক প্রার্থী নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে অভিযোগ করেন। অভিযোগ আমলে নিয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় এ সিদ্ধান্ত নেয়।

আরো পড়ুন : ছয়টি গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে হামাসের উপ-প্রধানকে হত্যা করা হয়

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *