বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক : কোটা সংস্কার আন্দোলন ও ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে নিহতদের স্মরণে রেজিস্ট্যান্স উইকের কর্মসূচি রোডমার্চের অংশ হিসেবে রাজধানীর ধানমন্ডি রাপা প্লাজা অভিমুখে পদযাত্রা, মোমবাতি প্রজ্বালন ও অন্যান্য কর্মসূচি পালন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
গতকাল বিকাল পৌনে ৬টার দিকে শাহবাগ থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে এ পদযাত্রা শুরু হয়। এ সময় ‘একতার বাংলাদেশ’ সংগঠন এবং ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের প্রতিনিধিরা পদযাত্রায় যুক্ত হন। অনুষ্ঠানে শপথ পাঠ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি প্লাবন তারিক। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু সায়েম, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক শাফী মোহাম্মদ, ফাদার তপন ডি রোজারিও প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ‘একতার বাংলাদেশ’-এর মুখপাত্র তাহমীদ আল মুদাসসির। ধানমন্ডি রাপা প্লাজার সামনে জড়ো হয়ে শিক্ষার্থীরা শেখ হাসিনার বিচার ও ফ্যাসিবাদ বিষয়ক নানান স্লোগান দিতে থাকেন। এর পর গান ও আবৃত্তির মাধ্যমে নিহতদের শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে নিহতদের জন্য দোয়া করেন তারা। শেষে ফ্ল্যাশলাইট জ্বালিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করে মিছিলটি ফিরে যায়।
এ সময় ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, শেখ হাসিনা তার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য লাঠিয়াল বাহিনী পুলিশ দিয়ে এভাবে শিক্ষার্থীদের রাস্তায় মেরে ফেলেন। আমরা আপনাদের বলে দিতে চাই, নৌকার তলা ফুটো হয়ে গেছে, যতই বৈঠা নিয়ে নাড়ুন লাভ হবে না। নৌকার পাটাতন বাঙালিরা খুলে নিয়েছে। আপনাদের সবার বাসায় সালমান এফ রহমানের ছবি টাঙিয়ে রাখুন, গণভবনের ছবিটি টাঙিয়ে রাখুন। যারাই আজ বিভাজনের রাজনীতি করবে তাদের অবস্থা ৫ আগস্টের গণভবনের মতো হবে। এখনো রক্তের দাগ শুকায়নি, আহতরা হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। কিন্তু ঠিক এই সময়ে আমরা খবর পাচ্ছি ১৫ আগস্টকে কেন্দ্র করে একটা মেকানিজমের মাধ্যমে একজনকে গ্রাউন্ড ফিগার বানিয়ে মেকি শোক পালন করা হতো। সেটিকে অন্তর্বর্তী সরকার বাতিল করেছে। খবর এসেছে কিছু স্বার্থান্বেষী আইনজীবী এটার বিরুদ্ধে রিট করেছে। আরেক সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, আমাদের কর্মসূচির প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে খুনি হাসিনার বিচারসহ চার দফা দাবি। ঢাকার সব ছাত্র ও জনতাকে রেজিস্ট্যান্স উইকের প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হচ্ছে। এ ছাড়া সারা দেশে যেসব স্থানে নিহতের ঘটনা ঘটেছে, সেসব স্থানে পদযাত্রা, মোমবাতি প্রজ্জ্বলন ও দোয়া কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো হচ্ছে।
তাদের দাবিগুলো হলো- ফ্যাসিবাদী কাঠামোকে ব্যবহার করে যেসব হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে, সেগুলোর দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। সংখ্যালঘুদের ওপর আওয়ামী লীগ ও চৌদ্দ দলসহ যারা পরিকল্পিত ডাকাতি ও লুণ্ঠনের মাধ্যমে গণ অভ্যুত্থানকে বিতর্কিত করার প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণ করেছে, তাদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসন ও বিচার বিভাগে যারা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হামলা, মামলা এবং হত্যাকান্ডকে বৈধতা দিয়েছে এবং ফ্যাসিবাদ বারংবার কায়েমের চেষ্টা করেছে, তাদের দ্রুততম সময়ে অপসারণ ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসন ও বিচার বিভাগে যারা এতদিন বৈষম্যের শিকার হয়েছে, তাদের জন্য সমান সুযোগসুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
শাহবাগের শপথ অনুষ্ঠানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. আবদুল লতিফ মাসুম বলেন, যতদিন দেশ থেকে কুচক্রী মহল বিতাড়িত না হবে, ততদিন আমাদের পাহারায় থাকতে হবে। কোনোভাবেই কুচক্রী মহলকে ছাড় দেওয়া যাবে না। দিল্লিতে পরিত্যক্ত স্বৈরাচার আছেন। অথচ তার ছেলে জয় বলেন, তার মা পদত্যাগ করেনি। সেখান থেকে তারা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। অবশ্যই ভিতরের ষড়যন্ত্র আঁচ করতে হবে। ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, যারা প্রতিবিপ্লবের মাধ্যমে বিভিন্ন সিন্ডিকেট গঠন করে দেশটাকে অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছেন, তাদের সাবধান করে দিতে চাই। তাদের সমূলে উৎপাটিত করা হবে। আমাদের এই বিপ্লবে আগে নিজেদের নৈতিকতার সংস্কার করতে হবে। আমরা দুর্নীতি করব না, অনাচার করব না। যারা দুর্নীতি করেছে, ঋণখেলাপি করেছে, তাদের শাস্তি দিতে হবে।
শিবিরের কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক সিগবাতুল্লাহ বলেন, আমরা এমন একটা সময় এখানে জড়ো হয়েছি যখন আমাদের দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। এ দেশে আমরা সবসময় সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করে আসছি। আগে ব্রিটিশরা হিন্দু-মুসলমান দাঙা লাগিয়ে নিজেদের সুবিধা নিতে ষড়যন্ত্র করত। এখন আবার সেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। আপনারা যে ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন তা আমরা বাস্তবায়ন করতে দেব না।
প্রসঙ্গত, গত ১৮ জুলাই ধানমন্ডি ২৭ নম্বর এলাকার সংঘর্ষ রাপা প্লাজার পাশের মোড় থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। এই সংঘর্ষে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থী মো. ফারহানুল ইসলাম ইসলাম ভূঁইয়ার (ফারহান ফায়াজ) মৃত্যু হয়। নিহত এই শিক্ষার্থীর বয়স ১৮ বছর। তিনি উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী ছিলেন এবং ২০২৫ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের কথা ছিল।
আরো পড়ুন : আমূল পরিবর্তন আনা হচ্ছে প্রশাসনে