শাহ্ আলম শাহী,স্টাফ রিপোর্টার,দিনাজপুর খেকেঃ মহান মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ ৫০ বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৬ জানুয়ারি ভয়াবহ মাইন বিস্ফোরণ স্থল দিনাজপুর মহারাজা গিরিজানাথ স্কুল প্রাঙ্গণে ২ কোটি ১১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে শহীদ স্মৃতি স্তম্ভ নির্মিত হচ্ছে। ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্যে এই শহীদ স্মৃতি স্তম্ভ ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে মাইল ফলক হয়ে থাকবে বলে আশাব্যক্ত করেছেন,সংশিষ্টরা।
দীর্ঘ ৯ মাসের যুদ্ধ শেষে বিজয়ের স্বাদ নিয়ে ঘরে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো বাংলার বীর মুক্তিযোদ্ধারা। তাঁরা সমবেত হতে থাকেন বিভিন্ন ট্রানজিট ক্যাম্পে। সেখানেও অনেক কাজ। বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পুঁতে রাখা, ফেলে রাখা, ছেড়ে যাওয়া মাইন, বোমা ও অন্যান্য অস্ত্র উদ্ধার করা।
ঊীরমুক্তিযোদ্ধা মো.সফিকুল হক ছুটু জানিয়েছেন, প্রতিদিনের উদ্ধারকৃত অস্ত্র ট্রানজিট ক্যাম্পের বড় বাংকারে রেখে দেওয়া। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া ৬ ও ৭ নম্বর সেক্টরের আওতায় দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ের যেসব মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, তাঁদের নিয়ে ট্রানজিট ক্যাম্প করা হয়,দিনাজপুরের মহারাজা গীরিজানাথ হাইস্কুল প্রাঙ্গণে। প্রায় সহস্রাধিক মুক্তিযোদ্ধার সমাগম ছিলো এ ট্রানজিট ক্যাম্পে। কিন্তু, বিজয়ের মাত্র ২০ দিন পর ১৯৭২ সালের ৬ জানুয়ারি সব আনন্দ উদ্দীপনা নিঃশেষ হয়ে যায় এক অকল্পনীয় দুর্ঘটনায়।সূর্য তখন অস্তগামী। আকাশে লাল আভা। ঠিক এ সময় অকস্মাৎ প্রচন্ড বিস্ফোরণে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হলো মহারাজা স্কুল। স্কুলের দ্বিতল ভবন গুঁড়িয়ে যায়। স্কুলের বিশাল এলাকা এবং এর চারপাশে নিহত আর আহত মানুষের পোড়া গন্ধে ভয়ংকর এলাকায় পরিণত হয় ট্রানজিট ক্যাম্প।এই ভয়াবহ মাইন বিস্ফোরণে প্রায় ৫ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। আহত হন অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা।
৬ জানুয়ারি শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে দিনাজপুর মহারাজা গিরিজানাথ স্কুল প্রাঙ্গণে ২ কোটি ১১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে শহীদ স্মৃতি স্তম্ভ নির্মিত হচ্ছে,তা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্যে ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে মাইল ফলক হয়ে থাকবে।
ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে বীরমুক্তিযোদ্ধা ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন, যা আমার জীবনের এক অবিস্ফোরণীয় ঘটনা। ঘটনার কিছুক্ষণ আগেই আমি বাইরে চা পানের জন্য বেরিয়েছিলাম। তাই বেঁচে আছি। তিনি বলেন,সরকারতো অনেক কিছুই করে দিচ্ছে। তাই,আমার বাদী, আগে যেমন দিনাজপুরের মহারাজা গীরিজানাথ হাইস্কুল ছিলো,তেমনি দেখার মতো স্কুলের ভবনগুলো করে দেয়া হোক।
সেই ভয়াকহ মাইন বিস্ফোরণে শহীদ বীরমুক্তিযোদ্ধ গুলজার রহমানের ছেলে কাওসার পারভেজ মিলন জানান,সেইদিনে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজনেরা এখনো খুঁজে ফিরে বাড়ি না ফেরা আপনজনকে। অথচ,দিনটি পালন হয় নীরবে-নিভূতে। শুধু দেশে নয়, স্বাধীরতা অর্জন করা এতা সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধ এক সাথে সারাবিশ্বে কোথাও শহীদ হয়নি। তাই,বিষয়টি পাঠ্যপুস্তকে আনা হোক,এটা আমার দাবী।
মহান মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ ৫০ বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৬ জানুয়ারি ভয়াবহ মাইন বিস্ফোরণ স্থল সেই আলোচিত দিনাজপুর মহারাজা গিরিজানাথ স্কুল প্রাঙ্গণে ২ কোটি ১১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে শহীদ স্মৃতি স্তম্ভ নির্মিত হচ্ছে। জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিমের সহায়তায় গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্বাবধানে নির্মিত হচ্ছে, এই শহীদ স্মৃতি স্তম্ভ।
হুইপ ইকবালুর রহিম জানান,স্বাধীন বাংলাদেশে এত বড় ট্র্যাজেডি আর কোথাও হয়নি। এক সঙ্গে কয়েক ’শ বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধার প্রাণ ঝরে যাওয়া বড়ই বড় মর্মান্তিক, হৃদয়বিদারক ঘটনা অকল্পনীয়। তাঁদের এ প্রাণ বিসর্জন বেদনাদায়ক। তাই, মহান মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ ৫০ বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৬ জানুয়ারি ভয়াবহ মাইন বিস্ফোরণ স্থল দিনাজপুর মহারাজা গিরিজানাথ স্কুল প্রাঙ্গণে ২ কোটি ১১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে শহীদ স্মৃতি স্তম্ভ নির্মিত হচ্ছে।
শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর থেকে।