নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, চট্টগ্রামে যেহেতু ব্যাপক শিল্পায়ন হচ্ছে, কাজেই কর্ণফুলী, হালদা, সাঙ্গুসহ যে কয়টি নদী আছে সেগুলো যাতে কোনোভাবে দূষণ না হয়। দূষণের হাত থেকে সেগুলিকে রক্ষা করতে হবে। বিশেষ করে কর্ণফুলী নদীর দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। প্রত্যেকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে এখন থেকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দিকে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।
চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক নগরী উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একসময় অনেক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় চট্টগ্রামে ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, ৭৫-পরবর্তী যে সকল সরকার ক্ষমতায় এসেছিল তারা সব কিছুই ঢাকা শহরে নিয়ে আসে। ফলে চট্টগ্রাম অনেকটা অবহেলিত থেকে যায়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে চট্টগ্রাম আবার প্রাণ ফিরে পায়। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প সব দিক থেকেই যেন আরো উন্নত হয়, তার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি। চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইনের কাজ চলমান আছে। এভাবে চট্টগ্রামকে সার্বিকভাবে উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাচ্ছি। এ ছাড়া মিরসরাই, মহেশখালী, কক্সবাজারের সাবরাংয়ে শিল্পনগরী গড়ে তোলা হচ্ছে। এ ছাড়া মিরসরাই শিল্পনগর থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ করা হবে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু কাজ এগিয়েছে।
আজ বুধবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পোমরা ইউনিয়নে অবস্থিত চট্টগ্রাম ওয়াসার মেগাপ্রকল্প শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-২ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।
চট্টগ্রামের রেডিসন ব্লু বে ভিউতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ।
বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার অনুরোধ থাকবে বৃষ্টির পানি যাতে সংরক্ষণ করা হয়। ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর থেকে চাপ কমাতে হবে। জলাধার থাকতে হবে। বাংলাদেশ ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। যখনই আপনারা প্রতিষ্ঠান তৈরি করবেন প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানেই যাতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের একটি ব্যবস্থা নেওয়া হয়। শুধু পানি শোধন করে দেব তা না, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা এবং তা ব্যবহার করা একান্তভাবে দরকার। ’
চট্টগ্রামে আরো ৫টি পয়ঃশোধনাগার নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চট্টগ্রামের পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার জন্য বিশেষ প্রকল্প দেওয়া হয়েছে এবং সেটি বাস্তবায়নের জন্য কাজ শুরু হয়েছে। মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী পয়োনিষ্কাশন প্রকল্প প্রথম পর্যায় বাস্তবায়ন হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে চট্টগ্রাম মহানগরীতে আরো পাঁচটি পয়ঃশোধনাগার নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। ’
সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটি টানেল নির্মাণ হোক এটি মহিউদ্দিন চৌধুরী চেয়েছিলেন। তাঁর এটা দাবিও ছিল। এ টানেলের কাজ এখন প্রায় সমাপ্তির পথে। দুর্ভাগ্য, তিনি আর আমাদের মাঝে নেই। বাংলাদেশে যতগুলো সিটি করপোরেশন করা হয়েছে, এর মধ্যে একমাত্র চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মহিউদ্দিন চৌধুরীর আমলে ছিল অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী।
অনুষ্ঠানে এলজিআরডি মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশের সমসাময়িক দেশ পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, ভুটান এবং শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যদি আমরা তুলনা করি, তাহলে আমরা দেখি অর্থনৈতিক সকল প্যারামিটারে আমরা তাদের চেয়ে এগিয়ে আছি। এভাবে চলতে থাকলে ২০৪১ সালের আগেই উন্নত বাংলাদেশ হবে। ’
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ নগর বা জেলা। চট্টগ্রামে ইকোনমিক জোন হচ্ছে। যেখানে হাজার হাজার কোটি টাকার মেগাপ্রজেক্ট হচ্ছে। সে প্রজেক্টগুলো বাস্তবায়নের জন্য কী কী প্রয়োজন সেগুলোর সব কিছু নিয়ে সমন্বিত প্রজেক্ট করা হয়েছে। এখানে বিভিন্ন দেশের অনেক বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করছেন। এত বড় প্রকল্পে সুপেয় পানির জোগান দিতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে যদি পানির অসুবিধা হয়, তাহলে মেঘনা নদী থেকে পানি আনতে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। শুধু মিরসরাইয়ের জন্য না, আরো এক শটি ইকোনমিক জোন করা হচ্ছে; সেগুলোর জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ’
প্রসঙ্গত, দৈনিক ১৪ কোটি ৩০ লাখ লিটার উৎপাদন ক্ষমতার শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-২ বাস্তবায়নে প্রায় চার হাজার ৪৯১ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যে জাইকা তিন হাজার ৬২৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা, বাংলাদেশ সরকার ৮৪৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং চট্টগ্রাম ওয়াসা ২৩ কোটি সাত লাখ টাকা অর্থায়ন করেছে। প্রকল্পটি উৎপাদনে আসায় বর্তমানে চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি সরবরাহে সক্ষমতা বেড়ে ৫০ কোটি লিটারে উন্নীত হয়েছে, যা চট্টগ্রাম নগরীর পানির চাহিদার সমান।