উদ্বোধনের প্রায় দেড় বছর পর শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে পদ্মা সেতু প্রকল্পের। তবে আর্থিক অগ্রগতি এখনো ৯১ দশমিক ১০ শতাংশ। অর্থাৎ এ পর্যন্ত প্রকল্পটির আওতায় ব্যয় হয়েছে ২৯ হাজার ৭০৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। বরাদ্দ দেওয়া আছে ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত মেগা ৮ প্রকল্পের গড় অগ্রগতি ৮৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৭৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ। অক্টোবর পর্যন্ত বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) অগ্রগতি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবর পর্যন্ত প্রকল্পগুলোর আওতায় ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ১২ হাজার ৮৯৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬ হাজার ২৬৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা। অন্য প্রকল্পগুলো হলো-মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ এবং দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-মিয়ানমারের কাছে গুনদুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প।
আইএমইডির সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বৃহস্পতিবার বলেন, প্রতি কোয়ার্টারে একবার করে ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত মেগা প্রকল্পগুলোর মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। সাধারণত অনেক প্রকল্পে দেখা যায়, এক বা দুই বছরে একবার সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়। কিন্তু মেগা প্রকল্পগুলো ঘনঘন পরিদর্শন করা হচ্ছে। এভাবে জোরদার মনিটরিং থাকায় গতি আগের চেয়ে বেড়েছে।
আইএমইডির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত বছরের ২৫ জুন উদ্বোধন করা হয় পদ্মা সেতু প্রকল্পের। কিন্তু এরপর প্রায় দেড় বছরের কাছাকাছি সময়ে প্রকল্পটির ভৌত কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে অক্টোবরে। প্রকল্পের মেয়াদ আছে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। অক্টোবর পর্যন্ত প্রকল্পটির আওতায় ব্যয় হয়েছে ২৯ হাজার ৭০৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এটি বাস্তবায়নে ৩২ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রকল্পটির কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে। এছাড়া পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পে অক্টোবর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ৩২২ কোটি টাকা। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। প্রকল্পটি ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। ইতোমধ্যেই রেল চলাচলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এদিকে মেট্রোরেল প্রকল্পের উত্তরা-আগারগাঁও অংশ গত বছর ২৮ ডিসেম্বর উদ্বোধন হয়েছে। এরপর ৪ নভেম্বর উদ্বাধন করা হয় আগারগাঁও-মতিঝিল অংশ। কিন্তু পুরো প্রকল্প শেষ হতে অপেক্ষা করতে হবে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। অক্টোবর পর্যন্ত প্রকল্পটির আওতায় ব্যয় হয়েছে ২৩ হাজার ৯৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি ৬৯ শতাংশ। এছাড়া ভৌত অগ্রগতি ৮৩ শতাংশ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সংশোধিত ব্যয়সহ মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়ন শেষ হবে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে শুরু থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রকল্পের আওতায় এখন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৬৭ হাজার ১১ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ রূপপুর প্রকল্পটি উৎপাদনে আসতে পারে।
মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম (১২টি প্রকল্প যুক্ত) প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। অক্টোবর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৮১ কোটি ৩১ লাখ টাকা। দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-মিয়ানমারের কাছে গুনদুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। অক্টোবর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার ৩৩৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।
রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। অক্টোবর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১৪ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পটি ৪ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে। অক্টোবর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৭৬১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।
আরো পড়ুন : টাঙ্গাইল নির্বাচনি প্রচারে ব্যস্ত আ.লীগ প্রার্থীরা, দোটানায় বিএনপি