১০ বছর আগে উচ্চ আদালতের রায়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষিত হয়। ঘোষিত ঐ রায়ের বিরুদ্ধে তখনই আপিল করে দলটি। কিন্তু এক দশক পেরিয়ে গেলেও ঐ আপিল শুনানির জন্য এখনো প্রস্তুত হয়নি। দলটির পক্ষ থেকে আপিলের সারসংক্ষেপ দাখিল না করায় শুনানি শুরু করতে পারেনি দেশের সর্বোচ্চ আদালত। তবে গতকাল মঙ্গলবার শেষ বারের মতো আপিলের সারসংক্ষেপ দাখিল করতে জামায়াতে ইসলামীর আইনজীবীদের সময় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। আদালত বলেছে, আগামী দুই মাসের মধ্যে আপিলের সারসংক্ষেপ দাখিল করবেন। যদি এটা দাখিলে ব্যর্থ হন, তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই আপিলটি খারিজ হয়ে যাবে। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের তিন বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
আদেশের পর রিটকারী পক্ষের কৌঁসুলি ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘মামলাটি শুনানি করার জন্য আমরা অনেক বার উদ্যোগ নিয়েছি। আদালত আপিলকারী পক্ষকে অনেক বার সময় দিয়েছে। কিন্তু উনারা আপিল শুনানির জন্য প্রস্তুত না করে গড়িমসি করছেন। আজ আপিল বিভাগ শেষ বারের মতো সময় বেঁধে দিয়েছে। আদালত বলেছে, আট সপ্তাহের মধ্যে আপিলের সারসংক্ষেপ দাখিল করা না হলে মামলাটি খারিজ হয়ে যাবে।’
২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিক দল হিসেবে সাময়িক নিবন্ধন দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আদালতে দাখিল করা হলফনামায় বলা হয়—দলটিকে সাময়িক গঠনতন্ত্রের ভিত্তিতে ইসি কর্তৃক গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ৯০ ডি-এর ‘ব্যতিক্রম বিধান’ অনুযায়ী শর্ত সাপেক্ষে নিবন্ধন প্রদান করা হয়। এই নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন তরীকত ফেডারেশনের তৎকালীন মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফসহ ২৫ জন।
ঐ রিটের ওপর জারিকৃত রুল গ্রহণ করে ২০১৩ সালের পহেলা আগস্ট বিচারপতি এম. মোয়াজ্জাম হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন প্রদানকে অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করে রায় দেয়। বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল-হক এই রায় দেন। তবে এই রায়ে একমত হতে পারেননি বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এম. মোয়াজ্জাম হোসেন। তিনি জামায়াতের নিবন্ধনের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দেন। তবে এই মতের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে দুই বিচারপতির দেওয়া রায়ে বলা হয়, নিবন্ধনের সময় দাখিলকৃত জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রটির উল্লেখযোগ্য ধারা বা বিধানসমূহ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ছিল। অর্থাৎ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ৯০সি (এ) ও (বি) শর্তসমূহ পূরণে সক্ষম হয়নি। যেহেতু সাময়িক গঠনতন্ত্রটি নিবন্ধনকালীন ৯০ সি-এর শর্তসমূহ পূরণ করে দাখিল করা হয়নি, সুতরাং নির্বাচন কমিশন বেআইনি ও আইনবহির্ভূতভাবে তর্কিত নিবন্ধনটি প্রদান করেছে, যা আইনসংগত কর্তৃত্ব ব্যতিরেকে করা হয়েছে এবং এর কোনো আইনগত কার্যকারিতা নেই।
এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দলটি। দলের তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামী ও মহাসচিব আলী আহসান মুজাহিদ এই আপিল করেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে সরকার। জামায়াতে ইসলামীর আইনজীবী মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, আদালত দুই মাসের জন্য সময় দিয়েছে। এ দুই মাসের মধ্যে আপিলের সারসংক্ষেপ জমা দিতে হবে। আর কোনো সময় দেবে না বলেও আদালত উল্লেখ করেছে। আদালতের আদেশ অনুসারে মামলার শুনানিতে জামায়াতে ইসলামী অংশ নেবে।
আরো পড়ুন : ‘পড় বই গড় দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’- আজ শুরু একুশে বইমেলা