বিনা টিকিটের যাত্রীদের ট্রেনে ভ্রমণ এবং ছাদে চড়া ঠেকাতে স্টেশনে বেষ্টনী বসিয়েছিল রেলওয়ে। স্টেশনে প্রবেশের আগে যাত্রীদের করা হয়েছে তল্লাশি। কিন্তু শেষ সময়ে বজ্র আঁটুনি হয়েছে ফসকা গেরো।
বৃহস্পতিবার কলকারখানা, গার্মেন্টস ছুটির পর রাজধানীর কমলাপুর ও বিমানবন্দর স্টেশনে যাত্রীর ঢল নামে। উত্তরবঙ্গ ও ময়মনসিংহমুখী প্রতিটি ট্রেনের ছাদে চড়েন হাজারো মানুষ। টিকিট না পেয়ে বিমানবন্দর স্টেশনের বেষ্টনী ভেঙে কয়েকশ মানুষ ভেতরে প্রবেশ করে কাউন্টারের সামনে বিক্ষোভ করেন। কাউন্টার আগেই বন্ধ হওয়ায় তাঁরা স্ট্যান্ডিং টিকিট পাননি। ক্ষোভে ইটপাটকেল ছোড়েন বিক্ষোভকারীরা। পুলিশ এসে তাঁদের সরিয়ে দেয়। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
রাত ১০টার দিকে কমলাপুর রেলস্টেশনে দেখা যায় কয়েক হাজার মানুষের জটলা। টিকিট না থাকায় তাঁদের স্টেশনে প্রবেশ করতে দিচ্ছিলেন না রেলের নিরাপত্তা বাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা। টিকিট দেখিয়ে যাত্রীদের প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছিল। তবে স্টেশনের ভেতরে ঢুকে দেখা যায়, নানা ফাঁকফোকর দিয়ে হাজারো মানুষ প্রবেশ করেন।
২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো ময়মনসিংহ হয়ে মোহনগঞ্জগামী হাওর এক্সপ্রেসের ছাদে তখন শতাধিক বিনা টিকিটের যাত্রী। বেলাল হোসেন নামের একজন জানান, গার্মেন্টে চাকরি করেন। অনলাইনে কীভাবে টিকিট কিনতে হয়, জানেন না। স্টেশনে স্ট্যান্ডিং টিকিটও পাননি। ফুট ওভারব্রিজ বেয়ে স্টেশনে ঢুকে ট্রেনের ছাদে চড়েছেন।
কমলাপুর স্টেশনের ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো লালমনি এক্সপ্রেসের ছাদে হাজারো মানুষের ভিড় ছিল। পুলিশ সদস্য এক নারীকে সহায়তা করছিলেন ছাদে উঠতে। ওই পুলিশ বললেন, ‘গরিব মানুষ কেমনে যাবে? একটু সাহায্য করলাম।’
বিক্ষুব্ধ যাত্রীদের একাংশ বিমানবন্দর স্টেশনের সামনে অবরোধ করলে গুরুত্বপূর্ণ সড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ১৫-২০ মিনিট পর পুলিশ তাঁদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। পুলিশের বিমানবন্দর জোনের সহকারী কমিশনার আসমা আক্তার সোনিয়া সমকালকে বলেন, রাত পৌনে ৯টা নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। সেখানে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন আছে।
এবারের ঈদযাত্রায় সব টিকিট অনলাইনে বিক্রি করেছে রেলওয়ে। ইন্টারনেট সুবিধার বাইরে থাকা প্রান্তিক মানুষ টিকিট পাননি। স্মার্টফোন ও উচ্চগতির ইন্টারনেট নেই, এমন মানুষও টিকিট পাননি। যাঁরা প্রযুক্তি ব্যবহারে পারদর্শী, তাঁদের সুবিধা হয়েছে। রেলওয়ে মোট আসনের ২৫ শতাংশ স্ট্যান্ডিং টিকিট দিয়েছে দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করা যাত্রীদের জন্য। রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের ঘোষণা ছিল, বিনা টিকিটের যাত্রীরা ট্রেনে চড়তে পারবেন না। ছাদেও চড়তে পারবেন না। ঈদযাত্রার প্রথম তিন দিন কড়াকড়ি থাকলেও বৃহস্পতিবার যাত্রীর ঢল নামায় তা ভেঙে পড়ে।
আরো পড়ুন : আজ দক্ষিণ চট্টগ্রামের শতাধিক গ্রামে ঈদ