স্টাফ রিপোর্টার : জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনার জন্য পুনরায় বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নতুন ইসি গঠনের পর এর আগে একবার দলটিকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ওই সময় সংলাপে না যাওয়ায় গত বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দফায় বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে ইসি’র আমন্ত্রণে এবারও বিএনপি সাড়া দেবে না বলে জানিয়েছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। তাদের দাবি- সবার আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি ফয়সালা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন কিংবা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো আলোচনায় যাবেন না তারা। চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সংলাপ নয়, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মধ্যেই সমাধান দেখছেন বিএনপি হাইকমান্ড। বিএনপি’র নীতিনির্ধারকরা বলছেন- শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগ করে, নির্দলীয় সরকারের মাধ্যমে সংলাপের আমন্ত্রণ পেলে সাড়া দেবে বিএনপি। এ ছাড়া বর্তমান সরকারের অধীনে চলমান পরিস্থিতিতে ইসি’র সঙ্গে সংলাপকে অর্থহীন হিসেবে দেখছেন তারা।
নেতারা বলছেন, বিএনপিকে সংলাপের জন্য যারা আমন্ত্রণ জানিয়েছে তারা সরকারের লোক। ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশ্য হাসিল করতেই কাজ করছেন তারা। সকল দল নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার সক্ষমতা ইসির নেই। বর্তমান সরকার যদি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি না মানে, তাহলে এক দফার আন্দোলনের মাধ্যমেই তার ফয়সালা করা হবেও বলে জানিয়েছেন বিএনপি’র শীর্ষ নেতারা।
এদিকে বৃহস্পতিবার বিকালে ডিও পত্রের মাধ্যমে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আলোচনা ও মতবিনিময়ের আমন্ত্রণ জানায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। চিঠি পেয়ে রাতেই মির্জা ফখরুল মানবজমিনকে বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব না। আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। কোনো সংলাপ হবে না, নির্বাচন কমিশনে আলোচনার জন্য যাবো না যতক্ষণ না পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির ফয়সালা হয়। তিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ। লোক দেখানোর জন্য সংলাপের চিঠি দিয়েছে। সত্যিকার অর্থে কিছু করার মানসিকতা তাদের নেই। এ ছাড়া বিএনপি এই মুর্হূতে সংলাপে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখছে না। ইসির সঙ্গে এখন সংলাপের সুযোগ নেই। আমরা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করছি। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা ছাড়া কোনো ছাড় নয়। সম্প্রতি মাঠপর্যায়ের সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। সেখানেও কোনো ধরনের সংলাপে না যাওয়ার বিষয়টি উঠে আসে। জনপ্রতিনিধিদের বার্তা দেয়া হয়- আন্দোলনের মাধ্যমেই বর্তমান সরকারকে হটানো হবে। দাবি আদায়ে কোনো ছাড় দেয়া হবে না সরকারকে। কোনো দল কিংবা পক্ষ আলোচনা, সংলাপের আহ্বান জানাতে পারে, তবে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার নীতিতে আপস করবে না।
বিএনপি’র নীতিনির্ধারকরা বলছেন, তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছেন। দেশের সাধারণ মানুষেরও দাবি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। জনগণ পরিবর্তন চায়। অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকারকে কেউ চায় না। এজন্য সরকার ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো নাটক সাজাচ্ছে। জনগণের দাবি না মেনে আওয়ামী লীগ সরকার বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে সংলাপ করতে চায়। তাদের উদ্দেশ্য এক দিকে সংলাপের কথা বলে অন্যদিকে ভোট ডাকাতি করা। বিএনপি এবার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগের সকল ষড়যন্ত্র রুখে দেবে। একতরফাভাবে দেশে আর কোনো নির্বাচন হতে দেবে না বিএনপি।
এরআগেও বিএনপি’র সঙ্গে সংলাপ করতে চেয়েছে ইসি। কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন গত বছরের ১৭ থেকে ৩১শে জুলাই পর্যন্ত দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে। গত ২০শে জুলাই বিএনপি’র সঙ্গে সংলাপের দিনক্ষণ থাকলেও দলটি তা বর্জন করে। বিএনপি ধারাবাহিকভাবে নির্বাচন ও ইসির সংলাপ বর্জন করার প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার বিশেষ সংলাপের চিঠি দেয়া হয়। বিএনপি মহাসচিবকে শুভেচ্ছা জানিয়ে চিঠিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার লিখেছেন- ‘আমরা (ইসি) অবগত আছি যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রথম থেকেই বর্তমান নির্বাচন কমিশনের উপর অনাস্থা ব্যক্ত করে এই কমিশনকে প্রত্যাখ্যান করে এসেছে। আপনারা (বিএনপি) নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার ব্যতীত নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্তও বারংবার ব্যক্ত করেছেন। আপনাদের নিজস্ব দলীয় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও কৌশল বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কোনোরূপ মন্তব্য নেই। তবে, নির্বাচন কমিশন আপনাদের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হলেও মনে করে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান উপলক্ষে আনুষ্ঠানিক না হলেও অনানুষ্ঠানিক আলোচনা ও মতবিনিময় হতে পারে।’
আরো পড়ুন : খুশির রমজান যেন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা