সিলেট থেকে : নগরের ৩৯ ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতা। সিটিতে নতুন অন্তর্ভুক্ত ওয়ার্ড। ওখানে এখনো উন্নয়ন কাজ শুরু করেনি সিটি করপোরেশন। গেল সপ্তাহে ওয়ার্ডের সোনাতলা এলাকার জলাবদ্ধতা নিয়ে ইতিমধ্যে রক্তারক্তি ঘটনা ঘটে গেছে। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সংঘর্ষের সময় এলাকায় গিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছিলেন। পরে অবশ্য সওজ’র পক্ষ থেকে বিকল্প পথে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তখন জরুরি কাজে ঢাকায় ছিলেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। বৃহস্পতিবার তিনি ঢাকা থেকে এসেই যান ওই এলাকায়। পরিস্থিতি দেখেন এবং বুঝেন। সময় নিলেন না মেয়র আরিফ।
শনিবার সকাল থেকে সিলেটে তুমুল বর্ষণ। টানা বৃষ্টিতে সকাল ৯টার দিকে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েন আরিফ। সঙ্গে সিটি করপোরেশন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নূর আজিজুর রহমান সহ অর্ধশতাধিক স্টাফ। বুলডোজার সহ নানা যন্ত্রপাতিও নেন সঙ্গে। গন্তব্য তেমুখী। সোনাতলা এলাকার প্রবেশমুখ। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের তেমুখী থেকে জলাবদ্ধতা দূর করার অভিযান শুরু করবেন।
সকাল ১০টার আগে সেখানে পৌঁছে দেখা যায় তেমুখীর ডানপাশ পুরোটাই জলাবদ্ধ। ময়লা পানি ও বৃষ্টির পানি মিলেমিশে একাকার। অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকে পড়েছে পানি। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। প্রতিদিন অর্ধলাখ মানুষ এই এলাকা দিয়ে যাতায়াত করেন। রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও। জলাবদ্ধতার কারণে পুরো এলাকায় যানজট। সুনামগঞ্জ সড়কের একপাশ দিয়ে চলছিল গাড়ি। তেমুখী এলাকা আগে ছিল টুকের বাজার ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত। ফলে ইউনিয়ন থাকাকালে ওই এলাকায় ড্রেনের কাজ করা হয়েছিলো। এক বছর আগে এটি সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত হয়। এরপর থেকে উন্নয়ন কাজ হয়নি। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানিয়েছেন- যেসব এলাকা সিটির অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সেসব এলাকায় নতুন করে উন্নয়ন কাজ শুরু করা হবে। এখন যেসব এলাকায় জলাবদ্ধতা হচ্ছে সেখানে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কাজ করা হচ্ছে। তেমুখী পয়েন্টের পাশে পেট্রোলপাম্প, তেমুখী মার্কেটের সামনজুড়ে রয়েছে পানি। দৃশ্যমান ড্রেন আছে। কিন্তু পানি নিষ্কাশনের কোনো সুযোগ নেই। ড্রেন মাটি ও ময়লায় ভর্তি। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বৃষ্টির মধ্যেই হেঁটে দেখলেন পরিস্থিতি। সঙ্গে ছিলেন টুকেরবাজার ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শহীদ আহমদ ও কাউন্সিলর প্রার্থী গিয়াস আহমদ।
জলাবদ্ধ পানির মধ্যে পর্যবেক্ষণের পর এক্সেভেটর দিয়ে ড্রেন খুঁড়া শুরু করলেন। উপরের স্লাব সরাতেই দেখা গেল মাটি। এছাড়া- অগভীর ও প্রশস্ত হওয়ায় অল্প আবর্জনাতেই ভরে গেছে ড্রেন। এ কারণে পানি নিষ্কাশন হচ্ছিলো না। আর সওজ’র ড্রেনের উপর ছিল অবৈধ স্থাপনা। এ সময় আরিফুল হক চৌধুরীর নির্দেশে প্রথমে চালানো হয় অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান। এরপর চলে ড্রেনের ময়লা অপসারণের কাজ। আপাতত পানি নামতে বিকল্প ব্যবস্থা করে দিয়ে ড্রেন উদ্ধারের কাজ শুরু হয়। বেলা দু’টার মধ্যে অর্ধেক পানি নেমে যায়। ততোক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে থাকেন মেয়র আরিফ। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পাশাপাশি ড্রেনের মাটি সরানোর কাজ তদারকি করেন। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানিয়েছেন- সওজ’র সড়কের পাশে যে ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছিল সেটি দখল করে দোকানপাট নির্মাণ করা হয়েছে। সবাই স্থাপনা করেছেন, কিন্তু পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করেননি। আমরা ঘুরে দেখলাম এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে অবৈধ স্থাপনা ও ড্রেন ভরাট। কাজ শুরু হয়েছে। মনে হচ্ছে ৫-৬ দিন সময় লাগতে পারে। যতদিন সময় লাগুক আমরা আছি। কাজ শেষ করা হবে।
তিনি জানান- তেমুখী পয়েন্ট থেকে সোনাতলা পর্যন্ত কাজ চলবে। ওই এলাকায় জলাবদ্ধতা দূর করা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। আমরা সেটি করবো। এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য ও বর্তমান কাউন্সিলর প্রার্থী গিয়াস আহমদ জানিয়েছেন- প্রায় এক হাজার স্থাপনা হবে তেমুখী পয়েন্টে। কিন্তু কিছু স্বার্থান্বেষী মহল পেশিশক্তি ব্যবহার করে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলেছে এবং ড্রেন ভরাট করেছে। এরজন্য তিনি তেমুখী পয়েন্টের পেট্রোল পাম্প ও তেমুখী মার্কেটকে দায়ী করেন। তিনি জানান- তেমুখী পয়েন্টে কোনো শৃঙ্খলা নেই। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হলে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। টুকেরবাজারের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শহীদ আহমদ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের তদারকিকালে জানান- আমরা দুর্ভোগ চাই না। মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।
আরো পড়ুন : মৌলভীবাজারের কায়রান বিশ্বের বিস্ময় বালক