স্টাফ রিপোর্টার: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগ করে সরকার নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে যেন কেউই রুখে দাঁড়াতে না পারে, কেউ যেন তাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে না পারে এবং নির্বাচনে তাদেরকে কেউ যেন বাধা দিতে না পারে তার জন্য এই সমস্ত আইনগুলো করে নিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে যারা এখন ক্ষমতায় আছেন তারা কোনো নির্বাচিত সরকার নয়, দখলদারী সরকার। তারা এসব আইন করে ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ করতে চায়। গতকাল দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বিষয়ক এক সেমিনারে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দিয়ে নাগরিকদের প্রতিহত করা হচ্ছে। জনগণ তাদের কথা বলবে না, অভিযোগগুলো বলবে না, তারা লিখবে না, সাংবাদিকরা যেন না লিখে তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ঠিক একইভাবে অন্যান্য আইনগুলো দিয়ে আজকে এই নির্বাচনে তারা প্রতিপক্ষকে সম্পূর্ণ দূরে রেখে নির্বাচন পার হয়ে যেতে চায়। মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, সকল কালাকানুন বাতিল করতে হবে। সবার আগে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিল করতে হবে।
এটা এখন দেশের দাবি, জনগণের দাবি।
তিনি বলেন, এই সরকারের সবচেয়ে বড় অপরাধ তারা রাষ্ট্রের যে আত্মা সেই আত্মার মূল যে চরিত্র তাকেই তারা ধ্বংস করে ফেলেছে, একটা গণতান্ত্রিক যে আত্মা সেটাকে তারা নষ্ট করে ফেলেছে। র্যাবের ঘটনা নিয়ে ডয়েচে ভেলের একটা ভিডিও গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে। সেই ভিডিওতে একজন সাক্ষ্য দিয়েছিল নাফিজ। তাকেও সোমবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের একটাই লক্ষ্য নাগরিকদের কথা বলতে দেয়া হবে না, নাগরিকদের তাদের অধিকার প্রয়োগ করতে দেয়া হবে না। তাদের মতো করে এখনো রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এটা থেকে পরিত্রাণের একমাত্র পথ এদেরকে সরাতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। ফখরুল বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অনেককে মামলা দিয়ে জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। অনেক সাংবাদিকের নামে এখনো মামলা আছে। সাংবাদিক কাজলকে গুম করে রাখা হলো, কীভাবে তার ওপর অত্যাচার করা হয়েছে তা তিনি নিজেই বর্ণনা করেছেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশের যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সেটাকে তারা ধ্বংস করে ফেলেছে। ইচ্ছাকৃতভাবে শুধু নিজেরা ক্ষমতায় থাকার জন্য একদলীয় শাসন ব্যবস্থা তৈরি করেছে, যেটা তাদের পুরনো চরিত্র। ’৭৫ সালে তারা বাকশাল গঠন করেছিল। তারা সেটায় ব্যর্থ হয়ে এখন পুরনো সেই শাসনকে নতুন বোতলে গণতন্ত্রের পোশাক পরিয়ে ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র কায়েম করেছে। হাতিরঝিল থানা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফ উদ্দিন চৌধুরী অপুকে গত রোববার সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নেয়ার পর থেকে নিখোঁজ রয়েছে জানিয়ে অবিলম্বে তার সন্ধান ও মুক্তি দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংবিধান পরিপন্থি, এই ডিজিটাল আইন গণতন্ত্রের পরিপন্থি, এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ইউনিভার্সেল ডিক্লারেশন অব হিউম্যান রাইটস-১৯৪৮ এর পরিপন্থি। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে রাষ্ট্রের মানুষের সমস্ত অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। এই আইনের সমস্ত ধারাই খারাপ, নির্মম, নির্দয়, মানবাধিকার পরিপন্থি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তিনি ১৭ মাস কারাবন্দি ছিলেন বলেও জানান। তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রেখে দেশে গণতন্ত্রের কথা চিন্তা করা যায় না। রাজবাড়ীর বিএনপি নেত্রী সোনিয়া আখতার স্মৃতি বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেছি বলে আইসিটি অ্যাক্টে মামলা করেছে। আমাকে রাতে রাজবাড়ী থেকে তুলে নিয়ে কয়েক ঘণ্টা কোথায় রেখেছে জানি না। ডিজিটাল আইনে গ্রেপ্তার হওয়া মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ বলেন, আমি শুধু সোশ্যাল মিডিয়ায় একটু বক্তব্য দিয়েছিলাম, আবেগ থেকে একটু কথা বলেছিলাম সেজন্য আমাকে তুলে নিয়ে গেল।
আমাকে র্যাব অফিসে নিয়ে একের পর এক ইন্টারোগেশন করেছে। তার বর্ণনা দিলে শিহরিত হয়ে উঠতে হয়। আমাদের রিমান্ডের পর জেলে পাঠানো হয় সেখানে আমাকে কম্বল-বালিশটা পর্যন্ত দেয়া হয়নি। এই হচ্ছে আমাদের স্বাধীন দেশ। আলোকচিত্রী শফিকুল ইসলাম কাজল বলেন, ‘বাংলাদেশের গণমাধ্যম কতোটা স্বাধীন? আমার মনে হয়, গণমাধ্যম এখন মৃতপ্রায়। ৫৩ দিন গুম হওয়াকালে আমি কিছুই বুঝতে পারিনি, কোথায় আছি, কেমন আছি। আমার চোখ বন্ধ ছিল। আমি ক্রসফায়ারের মুখোমুখি হয়েছি। অভিযোগ ছিল- আমি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে লিখেছি। হয়তো লিখেছি এটা আমার অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার।
তাই বলে গুম করে নেয়া হবে, ক্রসফায়ারে নেয়া হবে, জেল খাটতে হবে? সেমিনারে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, গণঅধিকার পরিষদের ড. রেজা কিবরিয়া, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, এনডিপি’র ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লুতফর রহমান বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার চৌধুরী বুলবুল, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, এনডিপি’র আবু তাহের, বিকল্পধারা বাংলাদেশের অধ্যাপক নুরুল আমিন ব্যাপারী, জাগপা’র খন্দকার লুতফর রহমান, গণদলের এটিএম গোলাম মাওলা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহিউদ্দিন ইকরাম, সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নুরুল ইসলাম, পিপলস লীগের সৈয়দ মাহবুব হোসেন, ন্যাপের সালেকিন, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের হারুন চৌধুরী, আবুল কালাম আজাদ, ন্যাপের এমএন শাওন সাদেকী প্রমুখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আরো পড়ুন : ডা.জাফরুল্লাহর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র নামকরণের ইতিহাস